বঙ্গোপসাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে আহ্বান করা আন্তর্জাতিক দরপত্রের মেয়াদ বাড়ছে। মূলত আগ্রহী বহুজাতিক তেল-গ্যাস কোম্পানির আগ্রহ ও অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে মেয়াদ বাড়ানো হচ্ছে। এরই মধ্যে পেট্রোবাংলা সময় বাড়ানোর একটি প্রস্তাব জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগে জমা দিয়েছে। প্রস্তাব অনুযায়ী বর্তমানে থাকা দরপত্রের জমা দেওয়ার সময় ৯ সেপ্টেম্বরের পরিবর্তে ডিসেম্বর পর্যন্ত করার সম্ভাবনা বেশি বলে জ্বালানি বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানিয়েছেন। এ ছাড়া চলতি মাসের যে কোনো সময় মার্কিন কোম্পানি শেভরনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হবে বলেও জানা গেছে।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ এ প্রসঙ্গে কালবেলাকে বলেন, বঙ্গোপসাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে ঠিকাদারদের অনুরোধে দরপত্রের সময় বাড়ানো হচ্ছে। কত দিন বাড়ানো হবে—এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, আমাদের হাতে সময় আছে। আমরা আলোচনা করে ঠিক করে নেব। তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত ছয়টি কোম্পানি আমাদের ডাটা কিনেছে। আর ১৭টি কোম্পানি আগ্রহ দেখিয়েছে।
পেট্রোবাংলার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আগ্রহী কোম্পানিগুলোর অনুরোধে আন্তর্জাতিক দরপত্রের সময় বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এজন্য ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় বাড়ানোর একটি প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবে মন্ত্রণালয়।
জ্বালানি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, চলতি মাসেই সময় বাড়ানোর ঘোষণা আসতে পারে। এ ছাড়া সাগরের ডাটা কেনা কোম্পানিগুলোর মধ্যে শেভরনের সঙ্গে চলতি মাসের যে কোনো সময় দ্বিপক্ষীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।
বাংলাদেশের গভীর সমুদ্রে ১৫টি এবং অগভীর সমুদ্রে ১১টি ব্লক আছে। অগভীর সমুদ্রের দুটি ব্লকে অনুসন্ধান চালাচ্ছে ভারতের কোম্পানি ওএনজিসি। আর ২৪টি ব্লকে দরপত্র ডাকা হয়েছে গত ১১ মার্চ। দরপত্র জমার জন্য ৬ মাস (৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত) সময় দেওয়া হয়েছে। এর আগে ২০১৬ সালে দরপত্র আহ্বান করা হয়েছিল। এরপর ২০১৯ সালে নতুন পিএসসি আপডেট করা হলেও দরপত্র ডাকা হয়নি।
এবার বিশ্বের শীর্ষ পর্যায়ের ৫৫টি কোম্পানিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। সাগর সীমানা বিরোধ নিষ্পত্তির পর ১ লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গকিলোমিটার সমুদ্র অঞ্চলের ওপর মালিকানা প্রতিষ্ঠিত হয় বাংলাদেশের। ২০১০ সালে গভীর সমুদ্রে ডিএস-১০ ও ডিএস-১১ ব্লকে কাজ নেয় কনোকো ফিলিপস। তারা ২ডি জরিপ শেষে গ্যাসের দাম বাড়ানোর দাবি করে। সেই দাবি পূরণ না হওয়ায় কাজ ছেড়ে চলে যায়। এ ছাড়া চুক্তির পর কাজ ছেড়ে চলে যায় অস্ট্রেলিয়ার স্যান্তোস ও দক্ষিণ কোরিয়ার পস্কো দাইয়ু।
পেট্রোবাংলা সূত্র জানিয়েছে, বহুজাতিক কোম্পানিগুলোকে আগ্রহী করে তোলার জন্যই আকর্ষণীয় করা হয়েছে পিএসসি। আগের পিএসসিগুলোতে গ্যাসের দর স্থির করে দেওয়া হলেও এবার গ্যাসের দর নির্ধারিত করা হয়নি। ব্রেন্ট ক্রুডের আন্তর্জাতিক বাজার দরের সঙ্গে ওঠানামা করবে গ্যাসের দর। প্রতি হাজার ঘনফুট গ্যাসের দাম ধরা হয়েছে ব্রেন্ট ক্রডের ১০ শতাংশ দরের সমান। অর্থাৎ ব্রেন্ট ক্রুডের দাম ৮০ ডলার হলে গ্যাসের দাম হবে ৮ ডলার, যা বিদ্যমান পিএসসিতে যথাক্রমে অগভীর ও গভীর সমুদ্রে ৫.৬ ডলার ও ৭.২৫ ডলার স্থির দর ছিল। ব্রেন্ট ক্রুডের দামের ক্ষেত্রে সারা মাসের দর গড় হিসাব ধরা হবে।
দামের পাশাপাশি সরকারের শেয়ারের অনুপাতও নামিয়ে দেওয়া হয়েছে। মডেল পিএসসি-২০১৯ অনুযায়ী গ্যাসের উৎপাদন বৃদ্ধির সঙ্গে বাংলাদেশের অনুপাত বাড়তে থাকবে। আর কমতে থাকে বহুজাতিক কোম্পানির শেয়ার। গভীর সমুদ্রে ৩৫ থেকে ৬০ শতাংশ এবং অগভীর সমুদ্রে বাংলাদেশের হিস্যা ৪০ থেকে ৬৫ শতাংশ পর্যন্ত ওঠানামা করবে।