যশোর প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ০৩:২৫ এএম
আপডেট : ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ১২:৪৩ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ

চার হাজার গাছ নিধন রোপণ হয়নি একটিও

যশোর জেলা পরিষদ
চার হাজার গাছ নিধন রোপণ হয়নি একটিও

যশোরে ছয় বছরে সড়ক, মহাসড়ক উন্নয়নের জন্য জেলা পরিষদের মালিকানাধীন ৪ হাজার ২০০টি গাছ কাটা হয়েছে। যার আর্থিক মূল্য প্রায় ১৪ কোটি টাকা। তবে বিপুল পরিমাণ গাছ নিধন করা হলেও এ সময় একটিও গাছ রোপণ করেনি জেলা পরিষদ।

পরিবেশবাদীদের দাবি, চার সহস্রাধিক গাছ নিধন করায় ৮০০ হেক্টর বনভূমির সমপরিমাণ বন ধ্বংস করা হয়েছে। যার নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে পরিবেশের ওপর। যশোরের প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা ও পরিবেশের জন্য এই বিশাল সংখ্যক গাছের ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ। তবে জেলা পরিষদের দাবি, সড়ক ও জনপথ বিভাগের সড়ক উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্যই গাছ কাটতে বাধ্য হয়েছে। এতে সরকারের বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আদায় হয়েছে।

জেলা পরিষদের তথ্যমতে, গত ছয় বছরে যশোর জিলা পরিষদের মালিকানাধীন চারটি সড়কের ৪ হাজার ২১০টি গাছ কাটা হয়েছে। যার মূল্য প্রায় ১৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে ২০১৮ সালে যশোর-খুলনা মহাসড়কে ১ হাজার ৮৯৫টি গাছ কাটা হয়েছে। যার মূল্য ছিল ৪ কোটি ২১ লাখ টাকা। ২০২১ সালে যশোর-ঝিনাইদহ সড়কের হৈবতপুর ব্রিজ এলাকা থেকে ১২টি গাছ কাটা হয়। যার মূল্য ৬ লাখ ৬২ হাজার টাকা। যশোর-ঝিনাইদহ মহাসড়কে ৮৩৫টি গাছ কাটা হয়। যার মূল্য ২ কোটি ১৫ লাখ টাকা। ২০২২ সালে যশোরের রাজারহাট থেকে চুকনগর মহাসড়কে ৫০৭টি গাছ কাটা হয়। যার মূল্য ছিল ১ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। বর্তমানে যশোর নড়াইল সড়কে ৯৬১টি গাছ কাটা চলমান রয়েছে। যার মূল্য ৪ কোটি ৪০ লাখ টাকা।

এ ছাড়া যশোর বেনাপোল সড়কে শতবর্ষী গাছ বিক্রির উদ্দেশ্য তালিকাভুক্ত করেছে ৬৯৭টি। ঐতিহাসিক যশোর রোডের এই শতবর্ষী গাছ না কাটার আন্দোলন ও হাইকোর্টে নিষেধাজ্ঞা থাকায় আপাতত গাছ কাটা থেকে বিরত রয়েছে জেলা পরিষদ।

গাছ শূন্য হয়েছে যশোর-ঝিনাইদহ, যশোর-খুলনা, যশোর-চুকনগর মহাসড়ক। যশোর রাজারহাট চুকনগর সড়কে তাকালে দুধারে গাছ আর গাছ দেখতেন রাজারহাট এলাকার প্রবীণ সুবীর ঘোষ। তিনি বলেন, আগে দুধারে অনেক গাছ ছিল। এখন এ সড়ক বিরানভূমি।

যশোর-ঝিনাইদহ সড়কের পুলতাডাঙ্গা গ্রামের কৃষক আমিন উদ্দিন বলেন, ‘সাত মাস আগেও এ সড়কে যশোর অংশে গাছ ছিল। বড় বড় গাছ থাকাতে সবুজ শ্যামল ছায়াতে ঘেরা ছিল। এখন সেই গাছ নেই। গাছ নিধনের পর আবার নতুন করে গাছ লাগালে পরিবেশের জন্য ভালো হতো।

বৃহত্তর যশোর অঞ্চলের পরিবেশ নিয়ে কাজ করেছেন চট্টগ্রাম সরকারি কলেজের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের অধ্যাপক মো. ছোলজার রহমান। তিনি বলেন, ‘এ অঞ্চলের উষ্ণায়নের জন্য দায়ী গাছ নিধন করা। প্রথম, গত এক দশকের মধ্যে এ অঞ্চলের অনেক সড়ক মহাসড়কের দুপাশের বৃক্ষ উজাড় করা হয়েছে।

এর মধ্যে যশোর-খুলনা, যশোর-ঝিনাইদহ, যশোর-বেনাপোল, যশোর-চৌগাছা-মহেশপুর, যশোর-চুকনগর সড়ক অন্যতম। জমির হিসেবে সড়কের পাশ থেকে প্রায় ৮শ হেক্টর গাছ উজাড় করা হয়েছে। অল্প সময়ে একযোগে এই পরিমাণ গাছ কেটে ফেলা বড় একটি কারণ। পরিবেশ রক্ষা করতে হলে এখন আমাদের গাছ রোপণ করতে হবে।

যশোর রোড উন্নয়ন ও শতবর্ষী গাছ রক্ষা কমিটির সদস্য সচিব জিল্লুর রহমান ভিটু বলেন, ‘সড়ক উন্নয়ন হবে সেটা তো ভালো কথা। গাছ রেখেও পার্শ্ববর্তী দেশে উন্নয়ন চলছে। কিন্তু গাছ কাটতে পারলে তো টাকা খাওয়া যাবে। জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সাইফুজ্জামান পিকুল দায়িত্ব নেওয়ার পর অপরিকল্পিতভাবে গাছ সাবাড় করেছেন। কখনো একটি গাছও লাগাননি। এর প্রভাবে কয়েক বছর ধরে এ অঞ্চলে আবহাওয়া বিরূপ আচরণ করছে।’

এ বিষয়ে যশোর জিলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আছাদুজ্জামান বলেন, সড়ক ও জনপথ বিভাগ মহাসড়ক সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য জিলা পরিষদকে গাছ অপসারণের চিঠি দেয়। সেই চিঠির আলোকে জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির অনুমোদন ও বিভাগীয় কমিশনারের অনুমোদন সাপেক্ষে গাছ কাটার টেন্ডার করা হয়। গাছ বিক্রির টাকা সরকারি কোষাগারে জমা হয়েছে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

গ্যাস লিকেজ থেকে বিস্ফোরণ, একই পরিবারে দগ্ধ ৪ 

স্বীকৃতি-আশ্রয় ও যৌথভাবে মুক্তিযুদ্ধ করে বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু হয়েছে ভারত : জামুকা

‘গন্তব্যহীন এই যাত্রায় নীরবতাই একমাত্র সঙ্গী’

বিপিএল: এবার আরও বড় চমক দেখাল নোয়াখালী এক্সপ্রেস

পৃথিবী কি এত গরম হয়ে যাচ্ছে যে মানুষ থাকতে পারবে না?

খালেদা জিয়াকে লন্ডন নেওয়া হবে কি না সিদ্ধান্ত রাতে

রফিককে গুলি করে হত্যার নেপথ্যে যা জানা গেল

বিশ্বকাপে ‘সহজ’ গ্রুপে আর্জেন্টিনা, কী বললেন কোচ

জলবায়ু পরিবর্তনে বিপজ্জনক হয়ে পড়ছে কর্মক্ষেত্র

খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি কামনায় ছাত্রদল নেতা মিথুনের সদকায়ে জারিয়া

১০

শীতের দাপটে জবুথবু জনজীবন 

১১

‘জিনের বাদশাহ’ সেজে মহিদুল হাতিয়ে নেন ১২ লাখ টাকা

১২

প্ল্যান ইন্টারন্যাশনালে চাকরির সুযোগ

১৩

স্বর্ণ কিনবেন, জেনে নিন আজকের বাজারদর

১৪

অলিখিত ‘ফাইনালে’ মাঠে নামছে ভারত-দক্ষিণ আফ্রিকা

১৫

শীতে গোসল করার উপযুক্ত সময় কোনটি?

১৬

বুড়ি তিস্তা খনন প্রকল্পে ক্ষুব্ধ কৃষকরা, প্রতিবাদে মশাল মিছিল

১৭

বিজয় দিবস প্রীতি ম্যাচের জন্য / সৌম্য সরকারকে নিয়ে শক্তিশালী দল ঘোষণা, নেই লিটন

১৮

যশোরেই প্রথম উড়েছিল বাংলাদেশের বিজয় নিশান

১৯

ভারতে ফেরত পাঠানো হলো সন্তানসহ অন্তঃসত্ত্বা সোনালি বিবিকে

২০
X