চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের বেডে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন মা, আর কারাগারের চার দেয়ালে বন্দি বাবা। একমাত্র ছেলে ১০ বছরের শিশু দেবরাজের চোখের সামনে যেন ঘোর অন্ধকার। ক্যান্সারের সঙ্গে যুদ্ধ করা মাকে বাঁচাতে সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম দিনমজুর বাবা প্রেসক্রিপশন নিয়ে গিয়েছিলেন চট্টগ্রাম নগরীর ফার্মেসি পাড়া হিসেবে খ্যাত হাজারী লেনে ওষুধ কিনতে। এটাই যেন বাবার অপরাধ হয়ে দাঁড়ায়। সম্প্রতি সেখানে ঘটে যাওয়া অপ্রীতিকর ঘটনার জেরে দেবরাজের বাবা মনা সরকারকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে রাখা হয়েছে। অন্যদিকে হাসপাতালে মা। এ অবস্থায় দেবরাজকে দুদিন অনাহারেও থাকতে হয়েছে।
বুধবার দুপুরে সরেজমিন চমেক হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের শয্যায় শুয়ে আছেন ক্যান্সার আক্রান্ত দেবরাজের মা পূর্ণিমা সরকার। কেমোর প্রভাবে ঝরে গেছে মাথার চুল। প্রচণ্ড অসুস্থতায় কথা বলতেই পূর্ণিমার শরীর কাঁপছে। কথা বলতে বলতে একপ্রকার ঢলে পড়েন শয্যায়। মায়ের এমন করুণ দশায় দেবরাজের শিশুজীবনও এখন বিষণ্ন। অসহায় দেবরাজ বলে, ‘আমার বাবা নির্দোষ। আমার মায়ের ওষুধ কিনতে গিয়েছিল বাবা।’
গত ৫ নভেম্বর হাজারী গলিতে সহিংসতার ঘটনা ঘটে। ওই দিন ক্যান্সারে আক্রান্ত স্ত্রীর জন্য হাজারী গলিতে ওষুধ কিনতে গিয়ে আটক হন মনা সরকার। পরে এ ঘটনায় হওয়া মামলার আসামির তালিকায় ৪৭ নম্বরে নাম ওঠে তার। এ মামলায় অন্য আসামিদের সঙ্গে মনার ঠাঁই হয়েছে চট্টগ্রাম কারাগারে। জামিন চেয়েও মেলেনি।
বইয়ের ব্যাগ নিয়ে স্কুলে যাওয়ার বয়সে দেবরাজের সময় কাটছে হাসপাতাল, আদালত ও কারাগারের ফটকে। শেষমেষ মাকে হাসপাতালে রেখে, বাবার কারামুক্তির প্রার্থনায় মন্দিরে যায় শিশু দেবরাজ।
দেবরাজের এ অবস্থার কথা জেনে এগিয়ে আসে সামাজিক সংগঠন মহামৃত্যুঞ্জয় ফাউন্ডেশন। ফাউন্ডেশনের সদস্য শ্রুতি কালবেলাকে বলেন, আমরা যখন খবরটি শুনি, তখন দুদিন পার হয়ে যায়। এ দুদিন মা-ছেলে অনাহারে ছিল। এরপর আমরা আসি। আমাদের একটি টিম রেডি করি। হাসপাতালে নিয়ে যাই পূর্ণিমাকে।
চমেক হাসপাতালের চিকিৎসকরা বলছেন, পূর্ণিমার অবস্থা আশঙ্কাজনক। তার হাতের যেসব স্থানে ক্ষত তৈরি হয়েছে, সেসব স্থানে জরুরি সার্জারি প্রয়োজন।