বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়ালেখা শেষে চাকরির পেছনে ছোটেননি রাজশাহীর পুঠিয়ার ফতেহপুর গ্রামের হানিফ। নিজ উদ্যোগে শুরু করেন মাল্টা ও কমলার চাষ। এখন এই থেকে প্রতি বছর অন্তত ৩০ লাখ টাকা আয় করছেন সফল এই কৃষি উদ্যোক্তা।
গতকাল শুক্রবার হানিফের সঙ্গে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। তিনি জানান, দেশের বিভিন্ন জায়গায় মাল্টা ও কমলার বাগান দেখে আগ্রহী হন এসব চাষে। শুরু ২০১৯ সালে। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে চারা সংগ্রহ করে পেয়ারা ও আম বাগানেই রোপণ করলেন মাল্টা ও কমলার চারা। বছর দুয়েক না যেতেই বাগানে দেখা দিতে থাকে হলুদ মাল্টা ও কমলা। শুরুর বছরে ফলন কম হয়েছিল। এখন বাগানের গাছে গাছে মাল্টা আর কমলা শোভা পাচ্ছে।
চারঘাটের শলুয়া ইউনিয়নে মোট ১৬ বিঘা জমি লিজ নিয়ে ৯ বিঘা জমিতে মাল্টার চাষ শুরু করেছিলেন হানিফ। প্রথমে দেড় ফুট উচ্চতার ২০০ মাল্টা এবং কমলার চারা লাগিয়ে বাগান তৈরি করেন। পরে সময়ের সঙ্গে বাড়িয়েছেন বাগানের পরিধি। এখন বাগানজুড়ে আছে প্রায় ৪০০ মাল্টা ও কমলা গাছ। ফল ধরেছে ২০০টির বেশি গাছে। বাগান থেকেই পাইকারি এবং খুচরায় ফল বিক্রি করছেন এই উদ্যোক্তা। প্রতি কেজি মাল্টা ২০০, আর এক মণ ৮ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
হানিফ জানান, রোপণের দুই বছর পর একটি গাছ থেকে কমপক্ষে ৭ থেকে ১০ কেজি মাল্টা পাওয়া যায়। ৪ বছরের মাথায় প্রতিটি গাছ থেকে মেলে ৩৫ থেকে ৫০ কেজি মাল্টা। এতে বছরে বিঘাপ্রতি প্রায় ৪ লাখ টাকা আয় হচ্ছে।
হানিফ বলেন, প্রথমে বাগানটিতে আম ও পেয়ারা ছিল। এর ফাঁকে ফাঁকে ৯ বিঘা জমিতে মাল্টা ও কমলার গাছ রয়েছে। এর মধ্যে ৩ বিঘায় মাল্টা ধরেছে। আপাতত শুধু মাল্টা থেকেই বছরে ১০ থেকে ১২ লাখ টাকা আয় হচ্ছে। আর সবমিলিয়ে বাগান থেকে সব খরচ বাদ দিয়ে আনুমানিক ৩০ লাখ টাকা আয় হয়।
হানিফ বলেন, বাগান কিংবা কৃষির প্রতিই ঝোঁক ছিল বেশি। তখন রাজশাহী কলেজের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। সেই সময়ে থেকেই গোদাগাড়ির একটি বাগানে যাতায়াত ছিল। তাই ক্লাস করতে না পেরে আর পরীক্ষায় বসতে পারিনি। শেষ পর্যন্ত একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজবিজ্ঞানে পড়াশোনা শেষ করে আরও মনোযোগী হয়েছি বাগানের প্রতি।
হানিফ বলেন, পড়ালেখা শেষে কোনো দিন চাকরির পরীক্ষা দেওয়ার কথা ভাবিনি। কারণ আমার মন-মগজে কৃষি বাগান ছাড়া আর কোনোকিছুই ছিল না। তাই সফল কৃষি উদ্যোক্তা হওয়ার চেষ্টা করছি।
চারঘাট উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আল মামুন হাসান বলেন, হানিফ উচ্চতর ডিগ্রি নিয়েও চাকরির পেছনে না ছুটে এমন কৃষি উদ্যোক্তা হয়েছেন। কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে আমরা নিয়মিত তাকে পরামর্শ দিচ্ছি। আমরা চাই, দেশে হানিফের মতো আরও সফল উদ্যোক্তা গড়ে উঠুক।