হাসান আজাদ
প্রকাশ : ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:৩৮ এএম
আপডেট : ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:৫২ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
তেল-গ্যাস অনুসন্ধান

আবারও সময় বাড়ানোর দাবি ওএনজিসির

আবারও সময় বাড়ানোর দাবি ওএনজিসির

বঙ্গোপসাগরের অগভীর অংশে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে আরও দুই বছর সময় চেয়েছে ভারতীয় বহুজাতিক কোম্পানি ওএনজিসি ভিদেশ লিমিটেড। সময় বৃদ্ধির জন্য চিঠি পাঠানোর পর পেট্রোবাংলা কোম্পানটির সঙ্গে আলোচনা করছে। পরে সময় বৃদ্ধির বিষয়টি যৌক্তিক হলে এ-সংক্রান্ত প্রস্তাবনা জ্বালানি বিভাগে পাঠানো হবে। জ্বালানি বিভাগ থেকে অনুমোদন দেওয়া হলে ওএনজিসির আবেদন অনুযায়ী সময় বাড়ানো হবে। সাগরের অগভীর অংশের এসএস-৪ ও ৯ ব্লকে কাজ করছে কোম্পানটি। এর আগেও একবার সময় বাড়ানো হলেও মহামারি করোনার কারণে কাজ করতে পারেনি কোম্পানিটি। পেট্রোবাংলার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যানের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলতে চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি। পেট্রোবাংলার (প্রোডাক্টশন শেয়ারিং কন্ট্রাক্ট-পিএসসি) পরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) প্রকৌশলী মো. রফিকুল ইসলাম ওএনজিসির সময় বৃদ্ধির আবেদন করার বিষয়টি নিশ্চিত করে কালবেলাকে বলেন, আমরা বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করছি। আমরা বিষয়টি জ্বালানি বিভাগকে অবহিত করব। সেখান থেকে যে নির্দেশনা পাওয়া যাবে, সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

পেট্রোবাংলার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, অগভীর সমুদ্রের দুটি গ্যাস ব্লকে কাজ করছে ওএনসিজি। এরই মধ্যে দুটি ব্লকে দুটি কূপ খনন করলেও কোনো গ্যাস পায়নি কোম্পানিটি। দুটি কূপে গ্যাস না পাওয়ার কারণে আর্থিক সংকটে পড়ে তারা। কর্মকর্তারা জানান, বাংলাদেশ গভীর সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে দরপত্র আহ্বান করলে ওএনজিসি ভেবেছিল বিশ্বের বড় বড় কোম্পানি দরপত্রে অংশ নেবে। তখন অংশ নেওয়া কোম্পানিগুলোর সহযোগিতায় কম খরচে আরও দুটি কূপ খনন করবে। কিন্তু গভীর সমুদ্রের জন্য আহ্বান করা দরপত্রে কোনো কোম্পানি অংশ না নেওয়ার কারণে চলতি মাসের শুরুতে অনুসন্ধানের সময় বাড়ানোর আবেদন করে। জানা গেছে, দুটি কূপ খননে ব্যয় হবে ১৬০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।

২০১২ সালে মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্রসীমানা বিজয়ের পর বাংলাদেশ অফশোর বিডিং রাউন্ড (দরপত্র) ২০১২-এর আওতায় ওএনজিসি ভিডেস লিমিটেড, অয়েল ইন্ডিয়া লিমিটেডের সঙ্গে ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ব্লক এসএস ০৪ এবং ০৯-এর জন্য দুটি চুক্তি সই হয়। ব্লক দুটিতে ৫ হাজার লাইন কিলোমিটার দ্বিমাত্রিক জরিপ করে কোম্পানিটি। দ্বিমাত্রিক জরিপের পর কোম্পানিটি ২০২২ সালের মার্চ মাসে ব্লক এসএস ০৪-এ একটি কূপ খনন করে। কিন্তু কূপটিতে গ্যাস পাওয়া যায়নি। ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে ওএনজিসি ব্লক এসএস-০৪ এবং ০৯-এ আরও দুটি কূপ খনন করার কথা থাকলেও মহামানি করোনার কারণে কোনো কাজ করতে পারেনি। করোনা শেষেও কাজ করেনি। এখন ফের সময় বাড়ানোর আবেদন করেছে বাকি দুটো কূপ খনন করতে।

একই বিডিং রাউন্ডের আওতায় ২০১৪ সালের মার্চ মাসে অগভীর সমুদ্রের ব্লক এসএস-১১-এর জন্য সান্তোসের সঙ্গে একটি চুক্তি সই হয়। এ ব্লকে ৩ হাজার ১০০ লাইন কিলোমিটার দ্বিমাত্রিক জরিপ করা হয়। ব্লকটি সম্ভাবনাময় হওয়া সত্ত্বেও গ্যাসের দাম নিয়ে বনিবনা না হওয়ায় সান্তোস এশিয়া থেকে তাদের ব্যবসা গুটিয়ে নেওয়ায় ২০২০ সালে এ ব্লকটি ছেড়ে চলে যায়।

এর আগে মার্কিন তেল-গ্যাস কোম্পানি কনোকো ফিলিপস ২০০৮ সালের দরপত্র প্রক্রিয়ায় গভীর সমুদ্রের ডিএস-১০ ও ডিএস-১১ ব্লক ইজারা নিয়েছিল। ২০১১ সালের জুন মাসে গভীর সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য ব্লক ডিএস-১০ ও ১১-এর জন্য কনোকো ফিলিপসের সঙ্গে একটি চুক্তি সই হয়। চুক্তি অনুযায়ী ব্লক দুটিতে ৫ হাজার ৮শ লাইন কিলোমিটার দ্বিমাত্রিক জরিপ করা হয়। ওই সময় কনোকো ফিলিপস চুক্তিতে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাব করে। বিষয়টি সরকারের পক্ষ থেকে গ্রহণযোগ্য না হওয়ায় তারা ২০১৪ সালে ব্লক দুটি ছেড়ে চলে যায়। এ ছাড়া ২০১২ সালের ডিসেম্বরে ডাকা অন্য একটি আন্তর্জাতিক দরপত্রের মাধ্যমে গভীর সমুদ্রের ডিএস-১২, ডিএস-১৬ ও ডিএস-২১ এই তিন ব্লকের জন্য যৌথভাবে দরপ্রস্তাব জমা দিয়েছিল কনোকো ও স্টেট ওয়েল। পরে কনোকো নিজেকে সরিয়ে নেওয়ায় ব্লকগুলো ইজারা দেওয়া সম্ভব হয়নি।

২০১৬ সালে ভারতের সঙ্গে সমুদ্রসীমা জয়ের পর ২০১৭ সালের মার্চ মাসে ব্লক ডিএস-১২-এর জন্য পসকো দেউয়ুর (POSCO Daewoo) সঙ্গে আরেকটি চুক্তি সই হয়। এ ব্লকে ৩ হাজার ৫০০ লাইন কিলোমিটার দ্বিমাত্রিক জরিপ করা হয়। চুক্তির শর্তাবলি তাদের ব্যবসার জন্য অনুকূলে না হওয়ায় ২০২০ সালে তারাও ব্লকটি ছেড়ে চলে যায়। নতুন বিডিং রাউন্ডের মাধ্যমে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য অফশোর মডেল পিএসসি (প্রডাকশন শেয়ারিং কন্ট্রাক্ট)-২০১৯-এর আওতায় আন্তর্জাতিক বিড আহ্বানের কথা থাকলেও কোভিড-১৯ মহামারি পরিস্থিতির কারণে তা সম্ভব হয়নি।

গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য বঙ্গোপসাগরের অফশোর ও অনশোরে (গভীর ও অগভীর) মোট ২৬টি ব্লক রয়েছে। এর মধ্যে গভীর সমুদ্রে ১৫টি ও অগভীর সমুদ্রে ১১টি। ১৯৯৬ সালে সাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান শুরু হয়। অগভীর সমুদ্রের ৯ নম্বর ব্লকে সে সময় নতুন একটি গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কার করে কেয়ার্নস এনার্জি। ১৯৯৮ সালে সেখান থেকে গ্যাস উত্তোলন শুরু হলেও দ্রুত মজুত ফুরিয়ে যাওয়ায় ২০১৩ সালে গ্যাসক্ষেত্রটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়।

সর্বশেষ পিএসসি সংশোধন করে বঙ্গোপসাগরে ২৪টি ব্লকে দরপত্র ডাকা হয়েছে গত ১১ মার্চ। দরপত্র জমার জন্য ৬ মাস (৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত) সময় দেওয়া হয়। সময় শেষ হওয়ার আগেই কোম্পানিগুলোর অনুরোধে ফের ৩ মাস বাড়িয়ে ৯ ডিসেম্বর করা হয়। কিন্তু সময় বাড়ানো হলেও কোনো কোম্পানিই দরপত্রে অংশ নেয়নি। পরে কোম্পানিগুলো কেন দরপত্রে অংশ নেয়নি, তার কারণ জানতে গত সপ্তাহে কমিটি গঠন করে পেট্রোবাংলা। কমিটি আগামী এক মাসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেবে। তারপরই বঙ্গোপসাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

৪ দিনের সফরে ঢাকায় পাকিস্তানের বাণিজ্যমন্ত্রী

ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে বাড়ল বাস ভাড়া

পরিকল্পিত বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় গড়ে তোলা হবে ক্লিন সিটি : চসিক মেয়র

জুলাই সনদে মিত্রদের ‘কাছাকাছি মতামত’ দেওয়ার পরামর্শ বিএনপির

সন্তানকে বাঁচিয়ে প্রাণ দিলেন বাবা

সৈকতে ফের ভেসে এলো মৃত ইরাবতী ডলফিন

ইঞ্জিন সংকটে ‘নাজুক’ রেল অপারেশন

স্পেনে রিয়ালের আর্জেন্টাইন তারকাকে নিয়ে অদ্ভুত বিতর্ক

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব হলেন আবু তাহের

মানবিক ড্রাইভার গড়তে নারায়ণগঞ্জে ডিসির যুগান্তকারী উদ্যোগ

১০

গৃহকর্মীদের অধিকার সুরক্ষায় জাতীয় পরামর্শ সভা অনুষ্ঠিত

১১

পিএসসি সদস্য হলেন অধ্যাপক শাহীন চৌধুরী

১২

রিয়ালের হয়ে ইতিহাস গড়লেন আর্জেন্টিনার ‘মাস্তান’

১৩

দাম্পত্য কলহ এড়ানোর সহজ ৫ উপায়

১৪

‘গণতন্ত্রের জন্য আরও কঠিন পথ পাড়ি দিতে হতে পারে’

১৫

আর্থিক খাত নিয়ে খারাপ খবর দিলেন গভর্নর

১৬

পৌরসভার ফাইল নিয়ে দুই কর্মকর্তার হাতাহাতি

১৭

কর্মস্থলে ‘অনুপস্থিত’, এবার পুলিশের ২ এসপি বরখাস্ত

১৮

এশিয়া কাপ দল নিয়ে তোপের মুখে বিসিসিআই

১৯

নারী-শিশুসহ ছয় ভারতীয় নাগরিক আটক

২০
X