রাজকুমার নন্দী
প্রকাশ : ১৭ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০০ এএম
আপডেট : ১৭ এপ্রিল ২০২৫, ১২:২২ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ

নির্বাচন নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েই গেল

বিভিন্ন দলের অভিমত
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ছবি : সংগৃহীত
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ছবি : সংগৃহীত

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকে সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ না আসায় আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে ধোঁয়াশা ও অস্পষ্টতা রয়েই গেল বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির যুগপৎ আন্দোলনের শরিক রাজনৈতিক দলের নেতারা।

তাদের মতে, এমন অস্পষ্টতা চললে সরকারের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর দূরত্বটা অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে বাড়বে এবং চক্রান্তকারীরা এর সুযোগ নিতে পারে। তা ছাড়া অনির্বাচিত সরকারের মেয়াদও দীর্ঘায়িত হওয়া উচিত নয়। কারণ জনগণ এখন ভোট দিতে উন্মুখ। অধিকাংশ রাজনৈতিক দলও দ্রুততম সময়ে নির্বাচন চায়। বিদেশি অনেক বন্ধু রাষ্ট্রও নির্বাচনের কথা বলেছে। এমন প্রেক্ষাপটে প্রধান উপদেষ্টা ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন আয়োজনের ব্যাপারে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নেবেন বলে আশাবাদী বিএনপির মিত্ররা।

এ প্রসঙ্গে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক কালবেলাকে বলেন, প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বিএনপির বৈঠকের ফল নিয়ে কিছুটা উদ্বিগ্ন। কারণ, নির্বাচন নিয়ে ধোঁয়াশা ও অস্পষ্টতা রয়েই গেল।

চক্রান্তকারীরা এ পরিস্থিতির সুযোগ নিতে চায় বলে সতর্ক করে গণতন্ত্র মঞ্চের শীর্ষস্থানীয় এই নেতা আরও বলেন, সরকারের তো নির্দিষ্ট কোনো রাজনৈতিক এজেন্ডা থাকার কথা না। চরিত্রের দিক থেকে তারা রাজনৈতিক দলগুলোর সমর্থনে একটা অদলীয়, নিরপেক্ষ সরকার। ভোট, নির্বাচন, গণতন্ত্র—এগুলো তো রাজনৈতিক দলের এজেন্ডা। অধিকাংশ রাজনৈতিক দল যখন দেশে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন দাবি করছে, তখন সেটাকে বিবেচনায় না নিয়ে নির্বাচনের অস্পষ্টতা রেখে দেওয়াটা উদ্বেগ, আতঙ্ক ও অজানা শঙ্কার সৃষ্টি করতে পারে।

গতকালের বৈঠকে সুরাহা না হলেও শেষপর্যন্ত আশা ছাড়তে চান না সাইফুল হক। তিনি বলেন, মনে করি, প্রধান উপদেষ্টার আজকের (বুধবার) কথাই শেষ কথা নয়। সরকার নিশ্চয় শুধু বিএনপি নয়, অধিকাংশ রাজনৈতিক দলের মনোভাব বিবেচনায় নেবেন। রাজনৈতিক দলগুলোকে প্রতিপক্ষ না বানিয়ে আরও আলাপ-আলোচনার মধ্য দিয়ে নির্বাচনটা আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে করা যায় কি না, সেটা পুনর্বিবেচনা করবেন।

১২ দলীয় জোটের প্রধান ও জাতীয় পার্টির (জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার বলেন, মনে রাখতে হবে, দীর্ঘদিন ভোটাধিকারবঞ্চিত জনগণ পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এখন ভোট দিতে উন্মুখ হয়ে রয়েছে। অধিকাংশ রাজনৈতিক দলগুলোও দ্রুততম সময়ে নির্বাচন চাচ্ছে। বিদেশি অনেক বন্ধু রাষ্ট্রও নির্বাচনের কথা বলেছে। তা ছাড়া অনির্বাচিত সরকারের মেয়াদ দীর্ঘায়িত হওয়াটাও উচিত নয়। সবকিছু বিবেচনায় নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা দ্রুততম সময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নেবেন বলে প্রত্যাশা করি।

আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু কালবেলাকে বলেন, বিএনপি আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের দাবিতে অনড়। সরকারের কথায় বোঝা যাচ্ছে, তারা ডিসেম্বরে নির্বাচন করতে পারবে না। সরকার আগামী বছরের জুন নাগাদ নির্বাচন করতে চায়। অর্থাৎ এখানে ছয় মাসের সময়সীমা নিয়ে বিরোধ। এটা এখন আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করতে হবে, অন্যথায় জটিলতা সৃষ্টি হবে।

তিনি আরও বলেন, বিএনপির বাইরে অন্য রাজনৈতিক দল এবং অংশীজনদের মতামতও এখানে গুরুত্বপূর্ণ। জামায়াত দেখলাম রমজানের আগে নির্বাচন চায়। এর আগে তারা নির্বাচন নিয়ে সুনির্দিষ্ট সময়ের কথা বলেনি, তারা যৌক্তিক সময়ের কথা বলেছে। তবে এখন হঠাৎ করে রমজানের আগে নির্বাচনের কথা বলায় বিষয়টা অন্যরকম ইঙ্গিত দিচ্ছে। অন্যদিকে এনসিপি ডিসেম্বরে নির্বাচনের বিরুদ্ধে। এ রকম পরিস্থিতিতে যদি রাজনৈতিক দল ও অংশীজনদের মধ্যে ঐকমত্য না হয়, তাহলে গণভোট ছাড়া গত্যন্তর থাকবে না।

জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের সমন্বয়ক ও এনপিপির চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ বলেন, আমরা আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন চাই। অন্তর্বর্তী সরকার ডিসেম্বর থেকে আগামী জুনের কথা বলছেন। জুন পর্যন্ত অপেক্ষা করলে বর্ষা, বিভিন্ন ধরনের ঝড়ঝাপটা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের আশঙ্কা তৈরি হতে পারে। ফলে তখন আবার নির্বাচন অনিশ্চিত হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দেবে।

লেবার পার্টি বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ও ১২ দলীয় জোটের অন্যতম নেতা লায়ন মো. ফারুক রহমান বলেন, অনির্বাচিত সরকার দীর্ঘায়িত হলে দেশে অস্থিরতা-অরাজকতা সৃষ্টি হতে পারে, বিদেশি বিনিয়োগে সমস্যা হতে পারে। সে জন্য আমরা দ্রুততম সময়ে নির্বাচিত সরকার চাই। তবে একটি অবাধ-গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য যে সব সংস্কার দরকার, সে সব সংস্কারগুলোও চাই। তাই আমরা নির্বাচনের জন্য সুনির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দিতে চাই না।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

এইচএসসির তৃতীয় দিনে অনুপস্থিত ২৪৮৯১ জন 

ক্ষমতাকেন্দ্রিক নয়, সংস্কারের পক্ষে জোট চায় এবি পার্টি

ব্রিটিশদের নাকানিচুবানি দিতে ১০ বছর ধরে যে রণকৌশলে এগোচ্ছে ইরান

বাসযাত্রীর ব্যাগে মিলল বিপুল ইয়াবা, অতঃপর...

কুয়েট ও বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির জন্য ৬৮ অধ্যাপকের আবেদন

ইতিহাস গড়ল চট্টগ্রাম বন্দর, কনটেইনার পরিবহনে রেকর্ড

৭০০ টাকার ব্রডব্যান্ড ৫০০ টাকায় দেওয়ার নির্দেশনা আইএসপিএবির

কেএমপি কমিশনারের পদত্যাগ দাবিতে রূপসা সেতুর টোল প্লাজা অবরোধ 

অসচ্ছল নারী শিক্ষার্থীদের আর্থিক সহায়তা দিচ্ছে ঢাবি

ক্ষোভের মুখে সরানো হলো বিএনপির অনুষ্ঠানের উপস্থাপক এহসানকে

১০

নগর স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম সরাসরি পরিচালনা করবে ডিএনসিসি

১১

সাতক্ষীরায় সাংবাদিকদের ওপর নারকীয় হামলার প্রতিবাদ, থানায় মামলা

১২

কুষ্টিয়ায় কাফনের কাপড় জড়িয়ে বিএনপির কার্যালয় ঘেরাও

১৩

সজীব ওয়াজেদ জয়ের বক্তব্যে জুলকারনাইনের প্রতিক্রিয়া

১৪

দুই দশক পর কারামুক্তি, সঙ্গে লাখ টাকা সঞ্চয় দুই নারীর

১৫

এবার ইরাকের বিমানবন্দরে রকেট হামলা

১৬

মায়ের কোল ফিরে পেল ৬০ হাজারে বিক্রি হওয়া শিশুটি

১৭

গুম কমিশনের প্রতিবেদনে নির্যাতনের ভয়াবহ চিত্র

১৮

ট্রাম্পকে বিদায় করতে আয়োজন করে নামছেন মাস্ক!

১৯

এডাস্ট এসডিআই ও সোল গেটওয়ে করপোরেশনের মধ্যে সমঝোতা স্মারক সই

২০
X