বীর সাহাবী
প্রকাশ : ১১ মে ২০২৫, ১২:০০ এএম
আপডেট : ১১ মে ২০২৫, ০২:৫১ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ

৯ মাসে সাড়ে ৯০০ কোটি টাকা লোকসান তিতাসের

আতঙ্কে শেয়ার বিক্রি করেন অনেকে
৯ মাসে সাড়ে ৯০০ কোটি টাকা লোকসান তিতাসের

পুঁজিবাজারে জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতে তালিকাভুক্ত রাষ্ট্রায়ত্ত গ্যাস বিতরণ ও পরিবহন কোম্পানি তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন পিএলসি বড় লোকসানের মুখে পড়েছে। গত বছরের জুলাই থেকে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত ৯ মাসে কোম্পানিটির নিট লোকসান দাঁড়িয়েছে ৯৪৭ কোটি ৫০ লাখ টাকার বেশি। বড় এ লোকসানের প্রভাব পড়েছে কোম্পানিটির শেয়ারদরেও। এতে আতঙ্কে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের অনেকে শেয়ার বিক্রি করে দিচ্ছেন।

প্রকাশিত কোম্পানির অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, চলতি হিসাব বছরের প্রথম ৯ মাসে (জুলাই-মার্চ) গ্যাস বিক্রি থেকে তিতাস আয় করেছে ২৬ হাজার ৪৯৫ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। এ সময়ে কোম্পানিটির ব্যয় হয়েছে ২৬ হাজার ৮৪৭ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। ফলে এ সময়ে কোম্পানিটির গ্রস লোকসান ৩৫২ কোটি ১০ লাখ টাকা। একই সময়ে পরিচালনসহ অন্যান্য খাতে সবমিলিয়ে ব্যয় হয়েছে আরও ৫৯৫ কোটি ৪০ লাখ টাকা। এতে ৯ মাসে কোম্পানিটির নিট লোকসান দাঁড়িয়েছে ৯৪৭ কোটি ৫০ লাখ টাকায়। আগের হিসাব বছরের একই সময়ে এই লোকসানের পরিমাণ ছিল ১৬৫ কোটি ২১ লাখ টাকা। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে কোম্পানিটির লোকসান বেড়েছে ৭৮২ কোটি ২৯ লাখ টাকা বা ৪৭৩ শতাংশ।

বছরের প্রথম প্রান্তিকে কত লোকসান: চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকেও (জানুয়ারি-মার্চ) লোকসান করেছে তিতাস গ্যাস। এ সময়ে কোম্পানিটির বিক্রি বাবদ আয় হয়েছে ৯ হাজার ২৩ কোটি ১ লাখ টাকা। অন্যদিকে ব্যয় হয়েছে ৯ হাজার ৪৫ কোটি ৭ লাখ টাকা। এতে দেখা যাচ্ছে, বছরের প্রথম প্রান্তিকেও কোম্পানিটির আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি হয়েছে ২২ কোটি ৬ লাখ টাকা। আলোচিত সময়ে কোম্পানিটির নিট লোকসান হয়েছে ২৩৬ কোটি ৬ লাখ টাকা। এই লোকসানের পরিমাণ আগের হিসাব বছরের একই সময়ে ছিল ২১২ কোটি ৩ লাখ টাকা। অর্থাৎ বছরের প্রথম প্রান্তিকে কোম্পানিটির নিট লোকসান বেড়েছে ২৪ কোটি ৩ লাখ টাকা বা সাড়ে ১১ শতাংশের বেশি।

চলতি বছরের ৩১ মার্চ পর্যন্ত তিতাস গ্যাসের শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদ মূল্য (এনএভিপিএস) কমে দাঁড়িয়েছে ৮৮ দশমিক ৭ টাকা, যা আগের বছরের ৩০ জুন শেষে ছিল ৯৮ দশমিক ১৫ টাকা।

ধারাবাহিক লোকসানে তিতাস: কোম্পানিটি গত দুই বছর ধরেই ধারাবাহিক লোকসান দিয়ে চলছে। গত ২০২৩-২৪ হিসাব বছরে তিতাস নিট লোকসান করেছিল ৭৪৪ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। শেয়ারপ্রতি লোকসান হয় ৭ টাকা ৫২ পয়সা। এর আগের হিসাব বছরে কোম্পানিটির নিট লোকসান ছিল ১৬৫ কোটি ১৩ লাখ টাকা, শেয়ারপ্রতি লোকসান ছিল ১ টাকা ৬৭ পয়সা।

কমছে লভ্যাংশের পরিমাণ: তিতাসের লোকসান যত পরিমাণ, বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ দেওয়ার পরিমাণও ততই কমছে। কোম্পানিটি ২০২০ সালে বিনিয়োগকারীদের ২৬ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছিল। এরপর ২০২১ সালে ২২ শতাংশ, ২০২২ সালে ১০ শতাংশ, ২০২৩ সালে ৫ শতাংশ এবং সবশেষ ২০২৪ সালে ৫ শতাংশ লভ্যাংশ দেয় কোম্পানিটি।

প্রভাব পড়ছে শেয়ার দর ও ধারণে: চলতি হিসাব বছরে তিতাস গ্যাসের তৃতীয় প্রান্তিকে বড় লোকসানের খবরে কোম্পানিটির শেয়ার দরেও এর প্রভাব পড়েছে। গত ২৯ এপ্রিল কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদের সভায় তৃতীয় প্রান্তিকের জন্য অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। এই খবর বাজারে ছড়ালে প্রভাব পড়ে শেয়ারদরে। সেদিন তিতাসের শেয়ারদর ছিল ১৯ টাকা ৮০ পয়সা। এরপর সেই দর কমে গত মঙ্গলবার দাঁড়ায় ১৯ টাকা ৩০ পয়সায়। এতে কোম্পানিটির সমন্বিত শেয়ার দর কমেছে ৪৯ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। অবশ্য কোম্পানিটির শেয়ারদর আরও আগে থেকেই নিম্নমুখী ছিল।

কার কত শতাংশ শেয়ার: তিতাস গ্যাসের বেশিরভাগ মালিকানা সরকারের হাতে। কোম্পানিটির মোট ৭৫ শতাংশ শেয়ার রয়েছে সরকারের হাতে। আর বাকি ২৫ শতাংশের মধ্যে ১৪ দশমিক ৮৭ শতাংশ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে, সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে রয়েছে ১০ দশমিক ৮ শতাংশ এবং বাকি দশমিক ৫ শতাংশ রয়েছে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের হাতে। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা ১০ দশমিক ১৫ শতাংশ শেয়ার ধারণ করলেও মার্চের মধ্যে তা কমে ১০ দশমিক ৮ শতাংশে নেমে আসে।

যা বলছে তিতাস কোম্পানি কর্তৃপক্ষ: তিতাসের কেন্দ্রীয় হিসাব বিভাগের করপোরেট শাখার ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল কালবেলাকে বলেন, ‘চলতি অর্থবছরে আমাদের প্রথম প্রান্তিকে লোকসান, দ্বিতীয় প্রান্তিকে লোকসান এবং তৃতীয় প্রান্তিকেও লোকসান হয়েছে। এই লোকসানের মূল কারণ হচ্ছে দুটি—প্রথমত, এনবিআরের একটা আইন আছে যে, গ্যাস বিলের বিপরীতে ট্যাক্স কর্তন করা। এনবিআর বলছে, ন্যূনতম কর হিসেবে এটা কর্তন করা হবে। যদি কোম্পানি ১ টাকা লাভও না করে এটাকেই ফাইনাল ট্যাক্স হিসেবে বিবেচনা করা হবে। আমাদের তৃতীয় প্রান্তিকে ৪৯০ কোটি টাকা কর পূর্ববতী লোকসান এসেছে সেটাও মোট লোকসানের সঙ্গে একত্রিত করা হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের পরিচালন ব্যয় বাড়েনি; কিন্তু সিস্টেম লসের কারণে ব্যয় বেড়ে গেছে। পেট্রোবাংলা থেকে নির্ধারণ করে দিয়েছে যদি সিস্টেম লস ২ শতাংশের বেশি হয়, তাহলে তা আমাদেরই বহন করতে হবে। আমাদের ২ শতাংশের একটু বেশি হয়েছে, তাই এটিও বিক্রয় ব্যয়ের মধ্যে চলে এসেছে। সিস্টেম লসের কারণে পরিচালন লোকসান হয়েছে ৪৫৭ কোটি টাকা। এগুলো মিলিয়ে আমাদের তিন প্রান্তিকে ৯৪৭ কোটি টাকা লোকসান হয়েছে।’

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

গোপালগঞ্জের সমাবেশ মঞ্চে এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতারা

বাংলাকে স্বৈরাচার মুক্ত করতে বুলেটে ঝরে ওয়াসিমের জীবন

জবি ছাত্রী হলের ফি প্রদানের নোটিশ, শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ

আবু সাঈদকে স্মরণ করে জামায়াত আমিরের স্ট্যাটাস

অভিজ্ঞতা না থাকলেও আবেদন করতে পারবেন সূর্যের হাসি নেটওয়ার্কে

লাশ পোড়ানো মামলা / পলাতক ৮ আসামিকে হাজির হতে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ

আন্তর্জাতিক ইকোনমিক্স অলিম্পিয়াডে অংশ নিচ্ছে বাংলাদেশ

ব্যালন ডি’অরের দৌড়ে কে এগিয়ে, কে পিছিয়ে!

কয়রায় ‘জুলাই শহীদ দিবস’ উপলক্ষে আলোচনা সভা

প্রকৌশলীকে লাথি মেরে বের করে দেওয়ার হুমকি জামায়াত নেতার

১০

গোপালগঞ্জকে সঙ্গে নিয়েই নতুন বাংলাদেশ গড়ব : তাসনিম জারা

১১

অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী সালমান শাহ গ্রেপ্তার

১২

জেসিআই ঢাকা প্রেস্টিজের ব্যতিক্রমধর্মী সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত ও নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন

১৩

ভারতীয় সিনেমায় জয়াকে নিয়ে আপত্তি কংগ্রেস নেত্রীর

১৪

রাজনৈতিক কারণে পাঠ্যবইয়ে জায়গা হয়নি শহীদ ওয়াসিমের : ছাত্রদল সেক্রেটারি

১৫

আপনার সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট পাসওয়ার্ড কতটা নিরাপদ

১৬

ইতিহাসে রেকর্ড দামের পর দরপতন বিটকয়েনের

১৭

এজাহার থেকে ৫ জনের নাম বাদ দেন সোহাগের বোন : ডিএমপি কমিশনার

১৮

এনবিআরের আন্দোলনে অর্থনৈতিক ক্ষতি নিরূপণে আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি গঠন

১৯

গোপালগঞ্জে এনসিপির সমাবেশস্থলে হামলা

২০
X