পেকুয়া (কক্সবাজার) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১৬ জুলাই ২০২৫, ০৩:০৪ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

বাংলাকে স্বৈরাচার মুক্ত করতে বুলেটে জীবন যায় ওয়াসিমের

নিহত ওয়াসিম আকরাম। ছবি : সংগৃহীত
নিহত ওয়াসিম আকরাম। ছবি : সংগৃহীত

আকাশ ছোঁয়া স্বপ্ন, তারুণ্যের উদ্দাম গতিতে ছুটে চলা স্বপ্নবাজ এক তরুণ ছুটছিল স্বপ্ন বাস্তবায়নে, সে স্বপ্ন বুননের কথা মাকে শুনাতে কিনে দিয়েছিল স্মার্ট ফোন, মা ইয়ারফোন কানে লাগিয়ে সন্তানের ভবিষ্যৎ গড়ার স্বপ্নের কথা শুনতেন মন ভরে দীর্ঘক্ষণ। স্বপ্নের দোরগোড়ায় পৌঁছাতে অনার্স ফাইনাল পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছিলো। মাস্টার্স শেষ করে সরকারি চাকরিতে যোগ দিতে এগিয়ে যাচ্ছিল। বিসিএস পরীক্ষায় এডমিন ক্যাডার হবে এমন দৃঢ় আত্মবিশ্বাস ছিল নিজের ওপর। তার আগেই কোটা নাকি মেধা স্লোগানে রাজপথে নামতে হয়েছিল মেধার অস্তিত্বের লড়াইয়ে। হাজার হাজার মেধাবীর অধিকারের এই লড়াই আর কারো সঙ্গে নয় স্বয়ং দেশের হাজারো মেধাবী তরুণের স্বপ্ন গিলে খেতে চাওয়া শাসক দলের বিরুদ্ধে।

‎অধিকার আদায়ে লাখো লাখো ছাত্র-জনতার বিপরীতে দুঃশাসক গোষ্ঠীর বুলেটে রাজপথে ঝরে গেল শতাব্দীর এই বিপ্লবী। নিভে গেল টগবগে তরুণের মাকে শুনানো হাজারো স্বপ্ন। বলছিলাম কোটা সংস্কারের দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শুরুর প্রথম যে সাতজন শহীদের অন্যতম কক্সবাজারের পেকুয়ার সন্তান শহীদ ওয়াসিম আকরামের কথা।

‎কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার সদর ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের বাঘগুজারা বাজারপাড়া এলাকার প্রবাসী শফিউল আলম মা জোসনা বেগমের পাঁচ সন্তানের মধ্যে তৃতীয় ওয়াসিম আকরাম। মেধাবী স্বপ্নবাজ এ তরুণ নিজ গ্রাম মেহেরনামা উচ্চবিদ্যালয় থেকে ২০১৭ সালে এসএসসি, ২০১৯ সালে বাকলিয়া সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি এবং ২০১৯-২০ সেশনে চট্টগ্রাম কলেজ থেকে স্নাতক সমাজ বিজ্ঞান বিষয়ে ভর্তি হয়ে চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন।

‎শহীদ জিয়াউর রহমানের আদর্শে গড়া বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন ওয়াসিম আকরাম। ছিলেন পেকুয়া উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক।

‎গত বছরের ১৬ জুলাই বেলা ৩টার দিকে চট্টগ্রাম শহরের মুরাদপুর এলাকায় কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশ-ছাত্রলীগ-যুবলীগের সংঘর্ষে নিহত হন ওয়াসিম আকরামসহ আরও তিনজন। ‘কোটা নাকি মেধা’র লড়াইয়ে জীবনের সমাপ্তি ঘটে এক স্বপ্নবাজ তরুণের। স্বৈরশাসকের ক্ষমতার মসনদ আঁকড়ে ধরা শেখ হাসিনার পতন ঘটে এক রক্তস্নাত বিপ্লবের মাধ্যমে। লাল-সবুজের পতাকার এই বাংলাকে স্বৈরাচার মুক্ত করতে ফ্যাসিস্ট হাসিনার লেলিয়ে দেওয়া বাহিনীর বুলেটে রাজপথ রাঙ্গাতে হলো ওয়াসিমদের।

‎ছেলে হারানোর শোকে শোকাহত মা শয্যাশায়ী হয়ে সন্তান হারানোর ব্যথা নিয়ে শুয়ে বসে দিন পার করছেন। সন্তানের কিনে দেওয়া স্মার্ট ফোনটি হাতে নিয়ে বিলাপ করে কাঁদেন আর বলেন, ‘মোবাইলে আর সন্তানের ফোন আসে না, সেই ইয়ারফোনে দিয়ে সন্তানের স্বপ্নের কথাও শোনা যায় না এসব এখন শুধুই স্মৃতি’।

‎শেষ কবে কথা হয়েছিল জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমার ছেলে বিএনপি করত বলে সাবেক মন্ত্রী সালাহউদ্দিন আহমদকে দেখতে ইন্ডিয়ায় গিয়েছিল, সেখান থেকে চট্টগ্রাম ফিরে আসে ঘটনা কয়েক দিন আগে। ঘটনার আগের রাতেও ফোন করে বলে মা শিগগিরই বাড়ি ফিরব। মাকে বাড়ি ফেরার কথা ঠিকই রাখলেন, ফিরলেন তবে জীবিত নয় নিথর দেহে।’ এমন বাড়ি ফেরা চায়নি মা জোসনা আক্তার। ছেলে হারানো শোকের মাতন এখনও চলছে ওয়াসিমের বাড়িতে।

‎ওয়াসিম আকরামদের মতো হাজারো শহীদের রক্তস্নাত বিপ্লবের মাধ্যমে ফ্যাসিবাদের পতন ঘটিয়ে বাংলার আকাশে উদিত লাল সূর্য, ছাত্র-জনতার বিজয় হয়, শহীদ ওয়াসিম আকরামের রক্তের দাগ শুকিয়ে গেলেও মায়ের মনে ছেলে হারানোর ক্ষত কবে শুকাবে এই প্রশ্ন এখন সবার, কবে হবে খুনিদের বিচার?

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

জামায়াতের কৃতজ্ঞতাবোধ থাকা উচিত : টুকু

গোপালগঞ্জে এনসিপি নেতাদের ওপর হামলায় ১২ দলীয় জোটের নিন্দা

মেহেদীর জাদুকরী স্পেলে চাপে লঙ্কানরা

রাতেই খুলনায় এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতাদের সংবাদ সম্মেলন

মাদারীপুরে এনসিপির প্রোগ্রাম বাতিল 

রাষ্ট্রের গোপন দলিল প্রকাশ, এনবিআর কর্মকর্তা বরখাস্ত 

মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশিসহ ৪৯৬ অভিবাসী আটক

কক্সবাজারে জামায়াত নেতার হামলায় আহত ছাত্রদল নেতা অভির পাশে বিএনপি 

কত টাকার সম্পদ আছে, আদালতকে জানালেন দীপু মনি

গোপালগঞ্জের ঘটনায় জড়িতদের বিচারের আওতায় আনা হবে : রিজওয়ানা

১০

চলচ্চিত্র পরিচালনা করবেন অরিজিৎ সিং 

১১

নির্বাচনের বাইরে অন্য কোনো পথ গ্রহণযোগ্য নয় : মঈন খান

১২

সারা দেশে আ.লীগ নিশ্চিহ্নের অভিযান চালাতে হবে : আবু হানিফ

১৩

গোপালগঞ্জে গণমাধ্যমের ওপর হামলায় অনলাইন এডিটরস অ্যালায়েন্সের নিন্দা

১৪

‘কেউ ঘর থেকে বের হবেন না’, গোপালগঞ্জবাসীকে আসিফ মাহমুদ

১৫

ভারতীয় নার্সকে ক্ষমা করবে না ইয়েমেনের ভুক্তভোগী পরিবার

১৬

২৪ ঘণ্টার মধ্যে হামলাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে লংমার্চ টু গোপালগঞ্জ : ইনকিলাব মঞ্চ

১৭

জমি নিয়ে বিরোধে প্রতিপক্ষের হামলায় প্রাণ গেল বাবা-ছেলের

১৮

সিরিয়ার সেনা সদর দপ্তরে ইসরায়েলের হামলা, বড় যুদ্ধের শঙ্কা

১৯

সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচে বোলিংয়ে বাংলাদেশ

২০
X