কোরবানির ঈদ ঘিরে প্রায় প্রতি বছরই দেশের মসলার বাজার ঘিরে সক্রিয় হয়ে ওঠে বিশেষ সিন্ডিকেট। এ সিন্ডিকেটের সদস্যরা নিজেদের মধ্যে যোগসাজশে বাড়িয়ে দেয় বিভিন্ন মসলাজাতীয় পণ্যের দাম। তবে গত ঈদুল ফিতরের আগে রমজান মাসে নিত্যপণ্যের বাজার ঘিরে যেমন সিন্ডিকেটের সক্রিয়তা দেখা যায়নি, তেমনি এবারের ঈদুল আজহার আগে মসলার বাজার ঘিরেও এ ধরনের কোনো সিন্ডিকেটের সক্রিয়তা দেখা যাচ্ছে না। আর সিন্ডিকেট না থাকায় দাম বাড়ার বিপরীতে উল্টো গত কোরবানির ঈদের তুলনায় এবার কমেছে বেশিরভাগ মসলার দাম। গতকাল বুধবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে এমন চিত্রই দেখা গেছে। এ ছাড়া রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্যেও দাম কমার চিত্র দেখা গেছে।
বিভিন্ন বাজার ঘুরে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত বছর ঈদুল আজহার সময় দেশি পেঁয়াজ মানভেদে বিক্রি হয়েছে ৭০ থেকে ৯০ টাকা প্রতি কেজি। এবার ঈদুল আজহার আগে সেই পেঁয়াজ মানভেদে বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজিতে। গত বছর দেশি রসুন বিক্রি হয়েছিল ২০০ টাকার কাছাকাছি। এবার দেশি রসুন বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১৫০ টাকার ভেতর। দেশির পাশাপাশি কমেছে আমদানি রসুনের দামও। গত বছর যেখানে ২৫০ টাকার কাছাকাছি বিক্রি হয়েছিল, সেখানে এ বছর আমদানি করা রসুন বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ২০০ টাকার ভেতরে।
পেঁয়াজ রসুনের পাশাপাশি কমেছে আদার দামও। গত বছর যেখানে আমদানি করা আদার দাম কেজি প্রতি ছিল ২০০ থেকে ২৫০ টাকার মধ্যে, সেখানে এ বছর আমদানি করা আদার দাম কমে বিক্রি হচ্ছে ১১০ থেকে ২০০ টাকার মধ্যে। দেশি শুকনা মরিচের কেজি গত বছর যেখানে ছিল ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা, সেখানে এ বছর দেশি শুকনা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ১৮০ থেকে ৩০০ টাকার মধ্যে।
দাম অপরিবর্তিত রয়েছে হলুদের। হলুদের কেজি গত বছর ছিল ২৫০ টাকার মধ্যে, এবারও সেই একই দামে বিক্রি হচ্ছে। জিরার কেজি গত বছর ছিল কেজিপ্রতি ৮০০ থেকে ৯০০ টাকার মধ্যে। এবার তা কমে বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৬০০ থেকে ৭৫০ টাকায়। গত বছর দারুচিনি বিক্রি হয় ৫৫০ থেকে ৬২০ টাকার মধ্যে, এ বছর মসলাটির দাম কমে বিক্রি হচ্ছে ৪৮০ থেকে ৫৫০ টাকার মধ্যে। গত বছর প্রতি কেজি তেজপাতা বিক্রি হয়েছিল ২০০ থেকে ৩০০ টাকায়, তা এবার বিক্রি হচ্ছে ১৪০ থেকে ২০০ টাকার মধ্যে।
দাম বেড়েছে যেসব মসলার: বেশিরভাগ মসলার দাম কমলেও কিছু মসলার দাম বেড়েছে। এর মধ্যে গত বছর একই সময়ে ধনিয়া বিক্রি হয়েছিল ১৫০ থেকে ১৮০ টাকার মধ্যে, তা এবার বেড়ে মানভেদে বিক্রি হচ্ছে ১৯০ থেকে ২৮০ টাকা কেজি।
দামি মসলার মধ্যে এলাচের কেজি গত বছর একই সময়ে মানভেদে ছিল ৩ হাজার ৬০০ থেকে ৪ হাজার ২০০ টাকার মধ্যে। এবার সেই দাম কিছুটা বেড়ে মানভেদে বিক্রি হচ্ছে ৪ হাজার ৪০০ থেকে ৫ হাজার ২০০ টাকার মধ্যে।
শ্যামপুরে বাজার করতে আসা রিফাত আলম কালবেলাকে বলেন, ‘গত বছর যেসব মসলা কিনেছিলাম, এবার এর অনেকগুলোর দামই কম পেয়েছি। তবে কিছু মসলার দাম বেড়েছে। তবে সব মিলিয়ে স্বস্তি কাজ করছে। এভাবে প্রতি ঈদ বা উৎসবগুলোর সময় দাম কম থাকলে আমরা খেয়েপরে বেঁচে থাকতে পারি।’
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহসভাপতি এস এম নাজের হোসাইন কালবেলাকে বলেন, ‘এখন রাজনৈতিকভাবে বিশৃঙ্খল অবস্থা বিরাজ করছে। তাই এখন কেউ কিছু করতে সাহস পাচ্ছে না। আগে সিন্ডিকেটরা অপেক্ষায় থাকত—কখন কী হয়ে যায়। এখন মাঠে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা আছে। একটা গ্রুপ প্রথম দিকে অনেক বিশৃঙ্খল ছিল, কিন্তু দিন দিন তা কমে আসছে। নতুন প্লেয়ার যারা আছে, তারা দ্বিধাদ্বন্দ্বে আছে। একটা অনিয়ম করতে গেলেও পেছনে একটা ব্যাকআপ সাপোর্ট লাগে। যেহেতু এখন এই সাপোর্ট পাচ্ছে না, তাই কারসাজিকারকরা সক্রিয় হতে পারছে না। ফলে অনেক মসলার দাম কমেছে। আবার এ সময়ে অনেক মসলার দামে বেড়েছেও।’
মন্তব্য করুন