চার দিনের সরকারি সফরে যুক্তরাজ্যের লন্ডনে অবস্থান করছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। গতকাল মঙ্গলবার প্রধান উপদেষ্টা ও তার সফরসঙ্গীদের বহনকারী এমিরেটস এয়ারলাইন্সের ফ্লাইটটি স্থানীয় সময় সকাল ৭টা ৫ মিনিটে লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দরে অবতরণ করে। বিমানবন্দরে যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার আবিদা ইসলাম প্রধান উপদেষ্টাকে স্বাগত জানান। সফরে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে রয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর এবং দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান ড. আবদুল মোমেন।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব নেওয়ার পর এটিই অধ্যাপক ইউনূসের প্রথম ইউরোপ সফর। আজ বুধবার লন্ডনে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ের স্টারমারের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের কথা থাকলেও তিনি কানাডা সফরে থাকায় এখনো বৈঠকের সময় নির্ধারণ করা যায়নি। লন্ডন ও ঢাকার কূটনৈতিক সূত্র কালবেলাকে এসব নিশ্চিত করেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আজ লন্ডনের স্থায়ী সময় দুপুর ১২টার পর দ্বিপক্ষীয় বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা ছিল। তবে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী দেশে না থাকায় বৈঠকটির সময়সূচি তৈরি হয়নি। তবে সন্ধ্যায় রাজার আমন্ত্রণে নৈশভোজে অংশ নেবেন প্রধান উপদেষ্টা। আর সেখানে দুজনের মধ্যে আলাপ হবে। আগামীকাল বৃহস্পতিবার রাজা তৃতীয় চার্লসের সঙ্গে দেখা করবেন ড. ইউনূস এবং সেন্ট জেমস প্রাসাদে রাজার হাত থেকে কিং চার্লস হারমনি অ্যাওয়ার্ড গ্রহণ করবেন। মূলত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি সমর্থন আদায়, ব্রিটেনের রাজা চার্লসের কাছ থেকে অ্যাওয়ার্ড গ্রহণ এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে বৈঠককে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে এই সফরে।
এদিকে লন্ডন সফরের অংশ হিসেবে গতকাল বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে অংশ নেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তার কর্মসূচির মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল বিমান ও বিমানবন্দর সংক্রান্ত কার্যক্রম পরিচালনাকারী শীর্ষ প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে বৈঠক, ব্রিটিশ পার্লামেন্ট সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা এবং কমনওয়েলথের শীর্ষ কর্মকর্তার সঙ্গে সাক্ষাৎ।
গতকাল স্থানীয় সময় দুপুর ১২টায় প্রধান উপদেষ্টার অবস্থান নেওয়া লন্ডনের ডরচেস্টার হোটেলে এয়ারবাসের নির্বাহী সহসভাপতি ওউটার ভ্যান ওয়ের্শ সাক্ষাৎ করেন। বৈঠকে উভয়পক্ষ উড়োজাহাজ শিল্প, বিনিয়োগ এবং বাংলাদেশের সঙ্গে প্রযুক্তি সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা করেছেন বলে লন্ডন ও ঢাকার কূটনৈতিক সূত্রগুলো নিশ্চিত করেছে। পরে দুপুর সাড়ে ১২টায় মেনজিস এভিয়েশনের নির্বাহী সহসভাপতি চার্লস ওয়াইলেও প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। বৈঠকে বিমানবন্দর সেবার আধুনিকীকরণ, দক্ষ জনবল উন্নয়ন এবং সম্ভাব্য ভবিষ্যৎ সহযোগিতার বিষয়ে মতবিনিময় হয় বলে জানায় সংশ্লিষ্ট সূত্র। পরে অল পার্টি পার্লামেন্টারি গ্রুপের বৈঠকে অংশ নেন ড. ইউনূস। ব্রিটিশ পার্লামেন্ট সদস্যদের সঙ্গে বৈঠকে যুক্তরাজ্যে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনা প্রসংগসহ বাংলাদেশের সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন, ক্ষুদ্র ঋণ কার্যক্রম এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতা নিয়ে
বিস্তারিত আলোচনা হয়। এ ছাড়া গতকাল কমনওয়েলথের মহাসচিবের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার সৌজন্য সাক্ষাৎ হয়।
এদিকে প্রধান উপদেষ্টার লন্ডন সফর ঘিরে আওয়ামী লীগ সমর্থিতরা ড. ইউনূসের হোটেলের সামনে বিক্ষোভ করে এবং তার পদত্যাগের দাবি জানায়। এমন উত্তেজনা সৃষ্টির আশঙ্কা থেকেই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ব্রিটেন সফরে ‘প্রবাসীদের সঙ্গে মতবিনিময় ও নাগরিক সংবর্ধনা’ অনুষ্ঠানের কথা থাকলেও সেটি বাতিল করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
সরকারের এক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা কালবেলাকে বলেন, অ্যাওয়ার্ড নিতে প্রধান উপদেষ্টা লন্ডন সফরে যাবেন স্থির করলেও এ সফরটিকে সরকারি সফর হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে। তাই মুহাম্মদ ইউনূসের সফরটিকে গুরুত্বপূর্ণ করতে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের ইচ্ছা অনুযায়ী গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকগুলো নির্ধারিত হচ্ছে। আমরা দেশের সংস্কার নিয়ে আলোকপাত করছি সব পক্ষের সঙ্গেই।
সরকারের প্রতি সমর্থন বাড়াতে সংস্কার প্রক্রিয়ায় সমর্থন: অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই যুক্তরাজ্যের সমর্থন অব্যাহত রয়েছে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে নির্বাচন ইস্যুতে সরকারকে চাপ দিচ্ছে রাজনৈতিক দলগুলো। সরকারের পক্ষ থেকে যেহেতু সংস্কারকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে, ফলে বর্তমান প্রেক্ষাপটে সংস্কার গুরুত্বপূর্ণ, তা এই সফরে জানাবেন প্রধান উপদেষ্টা। যদিও প্রধান উপদেষ্টার এই সফরে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সাক্ষাৎ চেয়ে চিঠি পাঠানো হলে ইতিবাচক সাড়া পাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে আগামী ১৩ জুন লন্ডন সময় সকাল ১০টায় তাদের বৈঠকের সময় নির্ধারণ করা হয়।
এর মধ্যেই বিএনপির পক্ষ থেকে ডিসেম্বরে নির্বাচন দেওয়ার দাবি জানানো হচ্ছে। ফলে বৈঠকে কোনো বিশেষ এজেন্ডা আছে কি না, জানতে চাইলে ওই কর্মকর্তা জানান, বৈঠকে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন, রাজনীতির বর্তমান প্রেক্ষাপট এবং রাজনৈতিক দলগুলোর সম্ভাব্য সমঝোতা বা কৌশলগত অবস্থান নিয়ে আলোচনা হতে পারে।
মন্তব্য করুন