হাসান মাহমুদ রিপন
প্রকাশ : ২২ জুন ২০২৫, ১২:০০ এএম
আপডেট : ২২ জুন ২০২৫, ১০:৫৬ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

নোটিশ দিলে টাকা মেলে

রেলের ভূসম্পত্তি
নোটিশ দিলে টাকা মেলে
ফাইল ছবি

বাংলাদেশ রেলওয়ের হাজার হাজার একর সম্পত্তি অবৈধ দখলদারদের হাতে রয়েছে। এসব সম্পত্তি উদ্ধার করতে মাঝেমধ্যে ঢাকঢোল পিটিয়ে অভিযানের প্রস্তুতি নেওয়া হলেও হঠাৎ করে তা থেমে যায়। কখনো কখনো মাঠে গিয়ে কিছুটা অভিযানের নাটক করে ফিরে আসেন রেল কর্মকর্তারা। আবার কোনো কোনো সময় দখলদারদের উচ্ছেদ নোটিশ দেওয়ার পর রেলের ভূসম্পত্তি কর্মকর্তার সঙ্গে অবৈধ লেনদেনের মাধ্যমে সমঝোতা হয়। ফলে জমি উদ্ধারের কার্যক্রম ঝুলে থাকে।

সূত্র জানাচ্ছে, গত ১৫ মে নেত্রকোনা এলাকায় অবৈধভাবে দখল হওয়া সম্পত্তি উদ্ধারে অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু কোনো অদৃশ্য কারণে রেলের ভূসম্পত্তি বিভাগ সেই অভিযান পরিচালনা করেনি। ১৪ মে ময়মনসিংহে একজন কর্মকর্তা অভিযানে গেলেও তিনি নামমাত্র অভিযান চালিয়ে ফিরে আসেন। ১৯ মে গেন্ডারিয়ায় উচ্ছেদ অভিযানের লক্ষ্যে নোটিশ দেওয়া হলে দখলদাররা রেল কর্মকর্তার সঙ্গে দেখা করেন। পরে আর অভিযান চালানো হয়নি। জানা যায়, মে মাসে শুধু নরসিংদী এলাকায় একটি উচ্ছেদ অভিযান পরিচালিত হয়েছে।

রেলের একজন কর্মকর্তা জানান, রেলের ভূসম্পত্তি কর্মকর্তাদের সঙ্গে অবৈধ দখলদারদের প্রায়ই অনৈতিক সমঝোতা হয়। একটি পক্ষ নোটিশ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই অবৈধ লেনদেনের মাধ্যমে বিষয়টি মীমাংসা করে ফেলে। অন্যপক্ষ ভূসম্পত্তি কর্মকর্তার সঙ্গে যোগসাজশ করে উচ্ছেদ নোটিশ হাতে পেয়েই উচ্চ আদালতে রিট করে বছরের পর বছর রেলের সম্পত্তি ভোগ করে আসছে। এমনকি কেউ কেউ দখলকৃত জমিতে মার্কেট, বহুতল ভবন ও স্থায়ী স্থাপনাও গড়ে তুলেছে।

এ বিষয়ে রেলওয়ের বিভাগীয় ভূসম্পত্তি কর্মকর্তা ও ডেপুটি কমিশনার (ল্যান্ডস অ্যান্ড বিল্ডিং) মো. নাসির উদ্দিন মাহমুদ বলেন, ‘আমি মনে করি, উচ্ছেদ অভিযানে যারা ক্ষতিগ্রস্ত বা স্বার্থহানির শিকার, তারাই আমার বিরুদ্ধে গুজব ছড়াচ্ছে। অবৈধ দখলদারদের সঙ্গে আঁতাত বা উচ্চ আদালতে রিট করার মতো কোনো সুযোগ নেই।’

রেলওয়ের অবকাঠামো দপ্তর সূত্রে জানা যায়, জনবল সংকটের কারণে প্রকৃত হিসাব রাখা সম্ভব না হওয়ায়, আগে মন্ত্রী বা সচিব রেলের বেদখল সম্পত্তির পরিমাণ জানতে চাইলে পূর্বপ্রস্তুত ছক অনুসারে ইচ্ছামতো জমির পরিমাণ উল্লেখ করা হতো। তবে বর্তমান সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর বেদখল জমি উদ্ধারে কঠোর নির্দেশনা জারি করেছে। এমনকি মন্ত্রণালয় থেকেও রেলের জমি ছেড়ে দেওয়ার নির্দেশ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।

রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. ফাহিমুল ইসলাম বলেন, ‘রেলের জমি দখল নিয়ে অনেক হয়েছে, আর নয়। যাত্রী পরিবহনের চেয়ে রেলের জমি ব্যবহার করে আয় দ্বিগুণ করা সম্ভব। তাই দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা হবে।’

রেল সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, অবৈধ দখলদারদের বড় একটি অংশ রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী। ফলে রাজনৈতিক সরকারগুলোর সময় এসব জমি উদ্ধারে নানা প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয়। এ ছাড়া বেদখল জমির প্রকৃত হিসাব না থাকায় উদ্ধার প্রক্রিয়া প্রায়ই ব্যাহত হয়।

নথিপত্র পর্যালোচনায় দেখা যায়, রেলের মোট জমির পরিমাণ ৬১ হাজার ৮২০.৯৭ একর। এর মধ্যে পশ্চিমাঞ্চলে ৩৭ হাজার ৪১৯.৩৫ একর এবং পূর্বাঞ্চলে ২৪ হাজার ৪০১.৬২ একর রয়েছে। রেলওয়ের নিজস্ব কাজে ব্যবহৃত হয় প্রায় ৫১ শতাংশ জমি। ইজারা দেওয়া হয়েছে ১৪ হাজার ৪৭৩ একর জমি। অবশিষ্ট জমির সুনির্দিষ্ট হিসাব রেলপথ মন্ত্রণালয় বা রেলওয়ে অধিদপ্তরের কারও কাছেই নেই। এ জমির একটি বড় অংশে গড়ে উঠেছে বহুতল ভবন, দোকান, বাড়ি, বাজার, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক, ক্রীড়া, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, গ্যারেজ ও গুদাম।

রেলওয়ের অবকাঠামো দপ্তরের সাবেক একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘রেলের প্রকৃত জমির পরিমাণ এবং বেদখল জমির সঠিক হিসাব নেই। প্রকৃত তথ্য তুলে আনতে হলে জনবল বাড়াতে হবে ‘ তিনি আরও বলেন, ‘বৈধ ও অবৈধ জমি ঘিরে রেলের ভেতরে ও বাইরে একটি শক্তিশালী চক্র গড়ে উঠেছে। এ চক্রের কারণেই রেলের বেদখল জমি উদ্ধারে ব্যর্থতা দেখা দিচ্ছে।’

রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অবকাঠামো) আল ফাত্তাহ মো. মাসউদুর রহমান বলেন, ‘রেলের বিপুল পরিমাণ বেদখল সম্পত্তি উদ্ধারে অভিযান পরিচালিত হলেও তা কার্যকর হয়নি। এ খাতে জনবল সংকট রয়েছে। তবে অন্তর্বর্তী সরকার এ বিষয়ে কঠোর নির্দেশনা দিয়েছে। সেই নির্দেশনার আলোকে আমরা এবার আশানুরূপ ফল আশা করছি।’

রেলওয়ের মহাপরিচালক মো. আফজাল হোসেন বলেন, ‘রেলের জমি থেকে অবৈধ দখলদার উচ্ছেদে নানা প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। তবু বিশাল এ বেদখল সম্পত্তি উদ্ধারের কোনো বিকল্প নেই। উদ্ধার করা জমি পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজে লাগিয়ে রেলের আয় বৃদ্ধির লক্ষ্যে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।’

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

বিএসআরএফ সভাপতি মাসউদুল, সাধারণ সম্পাদক বাদল

বাবার মোটরসাইকেলে বোরকা পেঁচিয়ে প্রাণ গেল কলেজছাত্রীর

চট্টগ্রামে পরীক্ষা পেছানোর দাবিতে বোর্ডের সামনে বিক্ষোভ

ভারতের কোচ নাকি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী? সৌরভ দিলেন স্পষ্ট সিগনাল

ডাকসুতে প্রতিবন্ধী ক্ষমতায়ন সম্পাদকের দাবিতে ছাত্রদল নেতার স্মারকলিপি প্রদান 

রাত ১টার মধ্যে যেসব জেলায় হতে পারে ঝড়

২০২৭ বিশ্বকাপে কোহলি-রোহিতের খেলা নিয়ে গাঙ্গুলীর বড় মন্তব্য

প্রতিবন্ধীদের পাশে না থাকলে উন্নয়ন অসম্পূর্ণ : চসিক মেয়র

এনসিপির কমিটিতে আ.লীগকে পুনর্বাসনের অভিযোগে বিক্ষোভ

১৭ বছরের আওয়ামী জুলুম ভুলে গেলে চলবে না : আমিনুল হক

১০

মার্কিন হামলার পর মোদির সঙ্গে ইরানের প্রেসিডেন্টের ফোনালাপ

১১

দক্ষিণ সিটিতে সব ধরনের নাগরিক সেবা প্রদানের আহ্বান

১২

আলোচিত সন্ত্রাসী ‘গরু চোরা সেলিম’ গ্রেপ্তার

১৩

ট্রাম্পকে রুশ নিরাপত্তা কর্মকর্তার ‘খোঁচা’

১৪

ইরানের পার্লামেন্টে হরমুজ প্রণালি বন্ধের অনুমোদন

১৫

ডায়রিয়ার সহজ সমাধান ব্রাট ডায়েট

১৬

সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন নিয়ে সুখবর

১৭

ইরানে মার্কিন সামরিক হামলা হুমকিস্বরূপ : জমিয়ত

১৮

আদালত চত্বরে শীর্ষ সন্ত্রাসী মতিন সরকারকে মারধর

১৯

এনসিপি কি শাপলা প্রতীক পাচ্ছে

২০
X