নদী কখনো কখনো মানুষের জীবন-যন্ত্রণার কারণও। ফটিকছড়ি উপজেলার সুন্দরপুর ইউনিয়ন আর নাজিরহাট পৌরসভাকে মাঝখান দিয়ে ভাগ করে রেখেছে এমনই এক নদী—হালদা। বছরের বেশিরভাগ সময় নদীর ওপর বাঁশের সাঁকোই ভরসা। বর্ষায় সাঁকো ভেসে যায়, সেই শূন্যতায় ভরসা হয় একমাত্র রশির টানা নৌকা। নদী পেরোতে গিয়ে দুর্ঘটনায় প্রাণ গেছে অনেকের। কেউবা হারিয়েছেন স্বজন, কেউবা কর্মক্ষমতা। স্বাধীনতার পর ৫৪ বছর পার হলেও এ দুই পাড়ের মানুষ বয়ে চলেছেন চরম দুর্ভোগ।
অবশেষে এ যন্ত্রণা থেকে মুক্তির আশার আলো দেখা যাচ্ছে। হালদা নদীর ওপর যে সেতুর স্বপ্ন দুই পাড়ের মানুষ বহু বছর ধরে দেখে এসেছে, সেই স্বপ্ন এখন বাস্তব রূপ নিচ্ছে। পাঁচপুকুরিয়া নামে এ সেতুর নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে পুরোদমে। বিগত সরকার এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিল, আর এখন চলছে কর্মযজ্ঞ।
সেতুটির দৈর্ঘ্য ১৫০ মিটার, প্রস্থ ৯.৮ মিটার। ৪৭ কোটি ৩৮ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিতব্য সেতুটির ছয়টি পিলারের তিনটির কাজ এরই মধ্যে শেষ হয়েছে। বৈরী আবহাওয়া আর পাহাড়ি ঢলের কারণে কাজ কিছুটা বিলম্বিত হলেও বর্তমানে বিরামহীনভাবে চলছে নির্মাণ।
সেতু নির্মাণের ফলে শুধু সুন্দরপুর আর নাজিরহাট নয়, নদীর দুই পাড়ের অন্যান্য এলাকার মানুষের জীবনেও আসবে সহজ যোগাযোগের সুবর্ণ সুযোগ। সুয়াবিল, হারুয়ালছড়ি ইউনিয়ন, ফটিকছড়ি পৌরসভা ও উপজেলা সদর সরাসরি যুক্ত হবে এ সেতুর মাধ্যমে। পূর্বে চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি মহাসড়ক এবং পশ্চিমে চট্টগ্রাম-কাজীরহাট-হেয়াকো সড়কের সঙ্গে সংযুক্ত হবে এ সেতু, যা অঞ্চলটির সার্বিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
ফটিকছড়ি প্রেস ক্লাবের সাংস্কৃতিক সম্পাদক সজল চক্রবর্তী বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই এ সেতু নির্মাণের জন্য সাংবাদিকরা বিভিন্ন মাধ্যমে এর প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেছেন। স্থানীয় জনগণও নানা সময় আবেদন জানিয়ে আসছিল।
পূর্ব সুয়াবিল গ্রামের শিবু চক্রবর্তী বলেন, ‘কিছুদিন আগেও এক যুবক সাঁকো থেকে মোটরসাইকেলসহ পড়ে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন। এমন ঘটনা এখানে নতুন নয়। সেতুটি আমাদের জন্য যেন এক পরম আশীর্বাদ।’
সুন্দরপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি সিরাজুদ্দৌলাহ চৌধুরী দুলাল জানান, এ সেতু শুধু যোগাযোগ নয়, মানুষের নিরাপত্তাও নিশ্চিত করবে।
নাজিরহাট পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর গাজী আমান উল্লাহ জানান, আমরা চাই সেতুর কাজ দ্রুত শেষ হোক। কাজ যেন টেকসই হয়, সেজন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মনোযোগ প্রয়োজন।
মন্তব্য করুন