

শোগ্রেন সিনড্রোম একটি দীর্ঘমেয়াদি অটো-ইমিউন রোগ, যা অধিকাংশ সময়ই সুপ্ত অবস্থায় থাকে। এই রোগে শরীরের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা নিজেরই আর্দ্রতা উৎপাদনকারী গ্রন্থিগুলোকে আক্রমণ করে, ফলে চোখ-মুখে শুষ্কতা ও ক্লান্তি দেখা দেয়। তবে এর প্রভাব ফুসফুস, কিডনি, জয়েন্ট, এমনকি স্নায়ুতন্ত্রেও দেখা দিতে পারে।
শোগ্রেন সিনড্রোম: শরীরের ইমিউন সিস্টেম যখন ভুলবশত লালাগ্রন্থি ও অশ্রুগ্রন্থির মতো নিজস্ব টিস্যু আক্রমণ করে, সেই অবস্থাকে বোঝায়। এতে লালা ও অশ্রু নিঃসরণ কমে যায় এবং ক্রমাগত শুষ্কতার সমস্যা দেখা দেয়। এটি মধ্যবয়স্ক নারীদের মধ্যে বেশি দেখা গেলেও নারী-পুরুষ উভয়ই যে কোনো বয়সে এই রোগে আক্রান্ত হতে পারেন। কখনো এটি এককভাবে দেখা দেয়, যা প্রাইমারি শোগ্রেন সিনড্রোম, কখনো অন্য অটো-ইমিউন রোগ যেমন—রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস বা লুপাসের সঙ্গে যুক্ত থাকে, যাকে সেকেন্ডারি শোগ্রেন সিনড্রোম বলা হয়।
প্রধান লক্ষণ: চোখের শুষ্কতা, চোখে জ্বালাপোড়া, চুলকানি বা বালু ঢুকে থাকার মতো অনুভূতি হয় এবং মুখের শুষ্কতা, খাবার গিলতে বা কথা বলতে কষ্ট, মুখে লালা কমে যাওয়া, দাঁতের সমস্যা ইত্যাদি হয়। এ ছাড়া রক্তে বারবার পটাশিয়াম কমে যাওয়া, ফলে দুর্বলতা বা অস্থায়ী পক্ষাঘাত হয়। অস্টিওম্যালাসিয়া, যা পেশির দুর্বলতা, হাড় ও জয়েন্টে ব্যথা এবং হাঁটতে সমস্যা সৃষ্টি করে। জয়েন্ট ব্যথা ও ফোলাভাব, তীব্র ক্লান্তি, ত্বকে র্যাশ, লালাগ্রন্থির ফোলাভাব ইত্যাদি। এই লক্ষণগুলো অন্যান্য কিছু রোগের সঙ্গে মিল থাকায় শোগ্রেন সিনড্রোম শনাক্ত করতে প্রায়ই সময় লাগে।
শনাক্তকরণ: চিকিৎসকরা রোগের অবস্থা, রক্ত পরীক্ষায় নির্দিষ্ট অ্যান্টিবডি, চোখের পরীক্ষা, স্যালিভারি গ্লান্ডের আল্ট্রাসাউন্ড এবং প্রয়োজনে ক্ষুদ্র স্যালিভারি গ্লান্ড বায়োপসির মাধ্যমে শোগ্রেন সিনড্রোম শনাক্ত করেন। কিছু রোগীর ক্ষেত্রে ফুসফুস, কিডনি বা লিম্ফোমার (ক্যান্সার) মতো জটিলতা দেখা দিতে পারে, ফলে প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত করা গুরুত্বপূর্ণ।
চিকিৎসা: যদিও এই রোগের স্থায়ী চিকিৎসা নেই, তবে লক্ষণ নিয়ন্ত্রণ ও জটিলতা প্রতিরোধের মাধ্যমে স্বাভাবিক জীবনযাপন করা সম্ভব। চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয় কৃত্রিম অশ্রু ও লালা, গ্রন্থির কার্যকারিতা বৃদ্ধির ওষুধ এবং ইমিউন সিস্টেম নিয়ন্ত্রণকারী ওষুধ। পাশাপাশি লাইফস্টাইলে কিছু পরিবর্তন আনাও জরুরি যেমন—পর্যাপ্ত পানি পান, ঘরে হিউমিডিফায়ার ব্যবহার, নিয়মিত চোখ, দাঁতের পরীক্ষা ইত্যাদি।
বিশ্বের লাখো মানুষ শোগ্রেন সিনড্রোমে আক্রান্ত হলেও অধিকাংশ রোগীই রোগের অস্তিত্ব সম্পর্কে জানেন না। অজানা শুষ্কতা, ক্লান্তি বা জয়েন্ট ব্যথার মতো লক্ষণ অবহেলা না করে সময়মতো চিকিৎসকের পরামর্শ ও চিকিৎসা নেওয়া জরুরি।
ডা. ফারজানা সুমি
কনসালট্যান্ট, রিউমাটোলজি
এভারকেয়ার হাসপাতাল, ঢাকা
মন্তব্য করুন