

বয়স্ক অনেকেরই হাত কাঁপে। সাধারণত হাতের কবজি, আঙুল, বুড়ো আঙুলের পেশিগুলো অনিচ্ছাকৃত নড়াচড়া করে। এটি একটি রোগ। তবে এটি প্রাণঘাতী রোগ নয়, মস্তিষ্কের কোষ নিষ্ক্রিয় হলে এ সমস্যা দেখা দেয়।
লক্ষণ: শুরুতে এক হাত কাঁপতে থাকে। পরে অন্য হাতে ছড়িয়ে পড়ে এবং একসঙ্গে দুই হাত কাঁপতে থাকে। হাত যত নড়ে, কাঁপন তত বাড়ে। মানসিক চাপ, ক্লান্তি, উত্তেজক পদার্থের ব্যবহার—এসব কাঁপুনি বাড়িয়ে তোলে। কাঁপুনির কারণে কাপড় পরা, গ্লাস বা কাপ ধরা, খাওয়া বা দাড়ি কামানো, এমনকি লিখতেও অসুবিধা হয়।
কারণ: হাত কাঁপা স্নায়ুতন্ত্র বা পারকিনসন রোগে হয়। জিনগত পরিবর্তনেও হয়। এ ছাড়া হাইপারথাইরয়েডিজম, মাল্টিপল স্কলেরোসিস, ডায়স্টেনিয়া, বেশি বয়স, পেরিফেরাল নিউরোপ্যাথি ও স্ট্রোকের কারণেও হয়। অনেক সময় ঘুম না হলে শরীরে কম্পন দেখা দেয়। অতিরিক্ত কফি পানে স্নায়ুর কার্যকারিতার ওপর প্রভাব পড়ে। এতেও শরীরে কম্পন সৃষ্টি হয়। অতিরিক্ত চা কিংবা অ্যালকোহল পানে একই সমস্যা হতে পারে। অনেক ধরনের ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াতেও হাত কাঁপতে পারে। সিগারেটে থাকা নিকোটিন হৃৎস্পন্দন বাড়িয়ে দেয়। ফলে উৎকণ্ঠা বাড়ে। একই সঙ্গে হাতও কাঁপে। শরীরের নার্ভ পদ্ধতি ঠিক রাখতে ভিটামিন-বি১২ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। শরীরে এ ভিটামিনের ঘাটতি হলে হাত কাঁপা সমস্যা হতে পারে।
চিকিৎসা: শরীর সুস্থ রাখতে দিনে ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা ঘুমানো একান্ত জরুরি। ঘুম ভালো না হলে মস্তিষ্কের কার্যকারিতা ধীরে ধীরে কমতে থাকে। তখন কাজ করতে চাপ অনুভব হয়। এতে শরীরও কার্যক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। পাশাপাশি হাত কাঁপা সমস্যা দেখা দেয়। হাত কাঁপা সমস্যা পুরোপুরি ঠিক হয় না। তবে চিকিৎসার মাধ্যমে এর উপসর্গ কমিয়ে রাখা যায়।
ওষুধ: ওষুধ হিসেবে বিটাব্লকারস, অ্যান্টি সিজার ওষুধ, বোটোক্স ও দুশ্চিন্তা কমানোর ওষুধ দেওয়া যেতে পারে, যা কাঁপুনির তীব্রতা কমাতে সাহায্য করে।
অস্ত্রোপচার: অস্ত্রোপচার মস্তিষ্কের গভীর উত্তেজনা ও থ্যালামোটমি কাঁপুনি কমাতে সাহায্য করে।
ফিজিওথেরাপি: ভর ব্যবহার, কবজিতে স্ট্র্যাপ পরা ও চাপমুক্ত বলের ব্যায়াম কাঁপুনি কমাতে সাহায্য করে।
প্রতিকার: অনেকাংশেই রোগটি বংশগত হওয়ায় প্রতিকার নেই। তবে লক্ষণ প্রকাশ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া যায়। রোগীকে মদ্যপান, ধূমপান, অতিরিক্ত চা বা কফি পান ত্যাগ করতে হবে। নিয়মিত খাওয়া-দাওয়া ও ঘুমের অভ্যাস করতে হবে। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুসারে ওষুধ সেবন করলে ভালো থাকা সম্ভব।
অধ্যাপক ডা. এম এস জহিরুল হক চৌধুরী
ক্লিনিক্যাল নিউরোলজি বিভাগ
ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতাল, ঢাকা
মন্তব্য করুন