

মানিকগঞ্জের ঘিওরে আবহমান গ্রাম বাংলার বিশেষ ঐতিহ্য সম্মিলিত মৎস্য শিকার উৎসব ‘পলো বাইচ’ উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে সম্পন্ন হয়েছে। মঙ্গলবার (৯ ডিসেম্বর) সকাল থেকে উপজেলার পয়লা ইউনিয়নের বাসুদেববাড়ী সংলগ্ন শ্যামপুর বিলে এ পলো বাইচের আয়োজন করে এলাকাবাসী।
বর্ষা ঋতুর অবসানে শীতের প্রাক্কালে শুষ্ক মৌসুমে বিলের জল শুকিয়ে আসার সন্ধিক্ষণে এ বার্ষিক আয়োজনটি গ্রামীণ জনপদে উৎসবের মেজাজ সৃষ্টি করে। জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা হাজার অধিক শৌখিন ও পেশাদার মৎস্য শিকারি তাদের হাতে পলো, ঝাঁকি জাল, টানা জাল এবং অন্যান্য দেশীয় উপকরণ নিয়ে দলবদ্ধভাবে বিলের জলরাশিতে ঝাঁপিয়ে পড়েন। তৈরি হয় এক উৎসবের আমেজ।
মৎস্য শিকারের এ বিরল দৃশ্য অবলোকন করার জন্য আশপাশের গ্রামগুলো থেকে বিপুলসংখ্যক সাধারণ মানুষের সমাগম ঘটে, যার ফলে পুরো অঞ্চলে একটি উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করে। বহু প্রতীক্ষিত এই উৎসবে শিকারিরা বোয়াল, গজার, শোল, পুঁটি, ট্যাংরাসহ বিভিন্ন প্রকারের দেশীয় প্রজাতির মাছ আহরণে সক্ষম হন।
জেলার শিবালয় থেকে আগত প্রবীণ মৎস্য শিকারি সুরেশ চন্দ্র রায় (৫৪) বলেন, পলো বাইচ আমাদের বাপ-দাদাদের আমলের ঐতিহ্য। এখন খাল-বিল কমে যাওয়ায় এমন আয়োজনও কমে যাচ্ছে। তবুও, বছরের এই একটি দিনে সবাই মিলেমিশে মাছ ধরার যে আনন্দ, সেটা পৃথিবীর অন্য কোনো কিছুর সঙ্গে তুলনীয় নয়। এটা নিছক মাছ ধরা নয়, এটা হলো সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও গ্রামীণ সংহতির এক অনন্য প্রতীক।
স্থানীয় তরুণ অংশগ্রহণকারী মিজান মিয়া (৩০) বলেন, বেশ কয়েকটি শোল মাছ ধরতে সক্ষম হয়েছি। সারা বছর এ দিনটির জন্য অপেক্ষায় থাকি। আমরা চাই, নতুন প্রজন্ম যেন এই উৎসবকে ভুলে না যায়। গ্রামীণ সংস্কৃতি রক্ষার জন্য এমন উদ্যোগ প্রশংসনীয়।
আয়োজন দেখতে আসা দর্শক শামিমা আক্তার (৩২) বলেন, বিলে একসঙ্গে অনেক মানুষ উৎসবের মধ্য দিয়ে মাছ ধরছে অনেক ভালো লাগতেছে দেখতে। মাছ ধরার উৎসবের খবর পেয়ে অনেকেই এসেছে তাই আমিও দেখতে এলাম।
মন্তব্য করুন