বিশেষ প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম
আপডেট : ১০ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮:০৬ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

প্রতিটি স্কুলের ১০০ মিটারের ভেতরে ৫টির বেশি তামাকের দোকান

পিপিআরসির গবেষণা
ছবি : সংগৃহীত
ছবি : সংগৃহীত

দেশের বিভাগীয় শহরগুলোতে পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, গড়ে প্রতিটি স্কুলের ১০০ মিটারের ভেতরে ৫ দশমিক ৫টি তামাকপণ্য বিক্রির দোকান রয়েছে। প্রায় সব দোকানেই সিঙ্গেল স্টিক সিগারেট বিক্রি হয়, যা শিশু-কিশোরদের জন্য ধূমপানকে অত্যন্ত সহজলভ্য করে তোলে। ৮৪ শতাংশ দোকানে ফ্লেভার্ড সিগারেট পাওয়া যায়, যা নতুন ও তরুণ ব্যবহারকারীদের আকৃষ্ট করে। গতকাল মঙ্গলবার পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টার (পিপিআরসি) আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে নতুন দুটি গবেষণার ফল প্রকাশ করা হয়। এ দুটি গবেষণায় তামাকপণ্য বিপণনের বিপজ্জনক চিত্র উঠে এসেছে।

নতুন গবেষণার একটি হলো স্কুলের আশপাশে তামাক বিক্রি ও বিপণন প্রক্রিয়া এবং অন্যটি হলো ২০২৪ সালে বাংলাদেশে তামাক ব্যবহারের কারণে সৃষ্ট জাতীয় আর্থিক ক্ষতির হালনাগাদ হিসাব।

প্রথম গবেষণাটি পিপিআরসি ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী ও খুলনার ১২১টি স্কুলের আশপাশে পরিচালনা করে। এতে দেখা গেছে, ৭১ শতাংশ দোকানে খোলা অবস্থায় সিগারেট প্রদর্শন করে এবং বেশিরভাগ প্রদর্শনীর কাঠামোই শিশুদের চোখের সমতলে স্থাপন করা। তামাকজাত পণ্য ৬৬ শতাংশ দোকানে চকলেট, মিষ্টি বা খেলনার পাশে সাজানো ছিল, যা শিশুদের কাছে তামাককে স্বাভাবিক ও আকর্ষণীয় হিসেবে উপস্থাপন করে। পাশাপাশি ৬৮ শতাংশ দোকানে দৃশ্যমান তামাক বিজ্ঞাপন ব্যবহার করে যেমন ডামি প্যাক, স্টিকার, মূল্যতালিকা, পোস্টার ও অন্যান্য ব্র্যান্ডেড প্রচার সামগ্রী।

দ্বিতীয় গবেষণাটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব হেলথ ইকোনমিকস উপস্থাপন করে, যেখানে ২০২৪ সালে তামাক ব্যবহারের কারণে দেশের মোট আর্থিক ক্ষতি ৮৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা হিসেবে নিরূপিত হয়েছে। এর মধ্যে স্বাস্থ্য ব্যয় বাবদ ৭৩ হাজার কোটিরও বেশি, উৎপাদনশীলতা হ্রাসে ৪২ হাজার কোটির বেশি এবং পরিবেশগত ক্ষতির জন্য ১৪ হাজার ৫২৫ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্রে তামাক বর্জ্যের প্রভাব পরিবেশগত ক্ষতির বড় অংশ।

অনুষ্ঠানে বিশেষজ্ঞরা জোর দিয়ে বলেন, নতুন এ প্রমাণ তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের দ্রত সংস্কার ও কার্যকর বাস্তবায়নের দাবিকে আরও জরুরি করে তুলেছে। বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের সাবেক চেয়ারম্যান মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, সরকার এরই মধ্যে আইন সংশোধনের প্রক্রিয়া শুরু করেছে এবং এ গবেষণা সেই উদ্যোগকে আরও শক্তিশালী ভিত্তি দিয়েছে।

বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজের অধ্যাপক ড. শারমিন ইয়াসমিন সতর্ক করেন যে, স্কুল শিক্ষার্থীদের যে পরিমাণে তামাকজাত পণ্যের মুখোমুখি হতে হচ্ছে, তা কিশোর-কিশোরীদের সুস্থতার জন্য সরাসরি হুমকি এবং আক্রমণাত্মক বিপণন বন্ধ না হলে কোনো প্রতিরোধমূলক উদ্যোগ কার্যকর হবে না।

অনুষ্ঠানের সভাপতি পিপিআরসির নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. হোসেন জিল্লুর রহমান গবেষণার ফলকে দেশের জন্য একটি স্পষ্ট সতর্কবার্তা হিসেবে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, তামাক সমস্যা দীর্ঘমেয়াদি এবং এটি মোকাবিলায় ধারাবাহিক, প্রমাণভিত্তিক ও কৌশলগত প্রচেষ্টা প্রয়োজন।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

নখ কাটার ছোট পিনের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ

এনসিপির প্রাথমিক প্রার্থী তালিকা ঘোষণা

আজ বাংলা একাডেমিতে শুরু হচ্ছে ‘বিজয় বইমেলা’

প্রতীক না ব্যক্তি, কী দেখে ভোট দেবেন মানুষ, জানা গেল জরিপে

নতুন ভোটার আইডি কার্ড ডাউনলোড করুন অনলাইনেই

আজ পদত্যাগ কর‍তে পারেন দুই ছাত্র উপদেষ্টাই

তৃতীয় অ্যাশেজের জন্য দল ঘোষণা ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার

শাকিব ছাড়া লগ্নি করতে চায় না কেউ, এটা সুসংবাদ নয়: অপু বিশ্বাস

কিস্তির টাকা না পেয়ে হাঁস নিয়ে গেল এনজিও কর্মী

কত শতাংশ মানুষ নির্বাচনে আ.লীগকে চান না, জানা গেল জরিপে

১০

প্রথমবারের মতো বিপিএল মাতাতে আসছেন স্মিথ

১১

দেশের বাজারে কত দামে স্বর্ণ বিক্রি হচ্ছে আজ

১২

কড়া নিরাপত্তায় আল-আকসা মসজিদে ইসরায়েলিদের অনুপ্রবেশ

১৩

দামেস্কের সামরিক বিমানবন্দরের কাছে বিস্ফোরণ

১৪

বিগ ব্যাশ: রিশাদের ম্যাচ কবে কখন, সতীর্থ কারা

১৫

মেয়ের ভুয়া ফেসবুক প্রোফাইল নিয়ে কড়া বার্তা ঐশ্বরিয়ার

১৬

বিলের জলে লোকসংস্কৃতির ঢেউ 

১৭

১৩৬ কোটি টাকার জমি দান করলেন ‘অর্জুন রেড্ডি’র দাদি

১৮

স্কুল ভর্তির লটারি বৃহস্পতিবার, ফল জানবেন যেভাবে

১৯

এআই কি সব পেশার জন্যই বড় হুমকি

২০
X