ইউরোপীয় ইউনিয়ন, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা-ডব্লিউটিও, যুক্তরাজ্যসহ সব দেশে ২০৩২ সাল পর্যন্ত শুল্কমুক্ত সুবিধার মেয়াদ বাড়ানোর অনুরোধ জানিয়েছেন বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাত। ২০২৬ সালে এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের পর এ খাতে নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি হবে। এ কারণে এসব দেশে শুল্কমুক্ত সুবিধার মেয়াদ বাড়ানোর অনুরোধ জানিয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে বলে কালবেলাকে জানান তিনি।
ফারুক হাসান বলেন, যুক্তরাজ্য বলেছে আমরা ২০২৬ সালে এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের উত্তরণ-পরবর্তী তিন বছর সময় পাব। তারপর উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য তাদের প্রণীত নতুন রপ্তানি পরিকল্পনা অনুযায়ী রপ্তানি সুবিধা দেবে। এর মধ্যে অনেক শর্ত রয়েছে। আমরা বলেছি, তিন বছরের পরিবর্তে ছয় বছর শুল্কমুক্ত সুবিধা দেওয়ার পর যেন তাদের নতুন পরিকল্পনা চালু করে। যখন শর্ত তৈরি হবে, তখন এক ধরনের চাপ তৈরি হবে। এটা যাতে না হয়, সেজন্য ছয় বছরের সুবিধা চেয়েছি। সম্প্রতি বাংলাদেশে নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারাহ কুকের কাছে লিখিত চিঠিতে এই অনুরোধ জানান তিনি। শুধু বাংলাদেশের জন্য নয়, যারাই এলডিসি উত্তরণ করবে, তাদের সবাইকে যেন এ সুবিধা দেওয়া হয়—চিঠিতে সে বিষয়টিও বলা হয়েছে।
বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নও তিন বছর পর জিএসপি প্লাসে যাবে। তখন তাদের সেফটি ক্লজের আওতায় আমরা আরও তিন বছর শুল্কমুক্ত সুবিধা পাব। সেখানে হয়তো মানবাধিকারসহ বেশকিছু শর্ত থাকবে। তখন হয়তো কিছু কিছু ক্ষেত্রে সুবিধা পাব না। সে কারণে আমরা ইইউকেও অনুরোধ করেছি যেন ২০৩২ সাল পর্যন্ত শুল্কমুক্ত সুবিধা দেয়। ডব্লিটিএকেও একই অনুরোধ জানিয়েছি। আর অস্ট্রেলিয়া নিজেই সিদ্ধান্ত নিয়েছে এলডিসি উত্তরণের পর ছয় বছর শুল্কমুক্ত সুবিধা দেবে।
সম্প্রতি উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য নতুন বাণিজ্য পরিকল্প বা ডেভেলপিং কান্ট্রিজ ট্রেডিং স্কিম (ডিসিটিএস) তৈরি করেছে যুক্তরাজ্য। এর সঙ্গে আগের ব্যবস্থার পার্থক্য নেই। এখন উন্নয়নশীল দেশগুলো যে শুল্ককাঠামোর মধ্য দিয়ে যুক্তরাজ্যে পণ্য রপ্তানি করছে, ২০২৯ সাল পর্যন্ত সেই কাঠামো বজায় থাকবে। অর্থাৎ সে সময় পর্যন্ত বিদ্যমান শুল্ক কাঠামোর অধীন বা বিনা শুল্কে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারবে বাংলাদেশ।
চিঠিতে ফারুক হাসান বলেছেন, আগের অনুরোধের পুনরাবৃত্তি ঘটিয়ে বলতে চাই, এ উত্তরণকালের মেয়াদ ২০৩২ সাল পর্যন্ত বাড়ানো হোক। এর কারণ হিসেবে মহামারির কারণে তৈরি পোশাকশিল্প ও বৈশ্বিক ফ্যাশনশিল্প ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। চিঠিতে আরও বলা হয়, জ্বালানির দাম বাড়ার কারণে যে অস্বাভাবিক মূল্যস্ফীতি হয়েছে, তার লাগাম টানতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যেসব ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তাতে মানুষের ব্যয়যোগ্য আয় কমেছে। বাজারে তার প্রভাব পড়ছে। এ ছাড়া সঠিক বিনিয়োগ ও সুযোগ-সুবিধা পুনর্বিন্যাস করে নিজেদের প্রস্তুত করতে কিছু সময়ের প্রয়োজন হবে। এ ছাড়া জিএসপির সঙ্গে নতুন পরিকল্পের কী পার্থক্য, বিশেষ করে সীমান্ত ব্যবস্থাপনা ও সুরক্ষাব্যবস্থা ইত্যাদির বিষয়ে নতুন এই পরিকল্প কীভাবে কাজ করবে, তা নিয়ে বিশদভাবে জানতে চেয়েছে বিজিএমইএ।
যুক্তরাজ্যের বাজার বাংলাদেশের তৃতীয় বৃহত্তম পোশাক রপ্তানির গন্তব্য। ২০২২-২৩ অর্থবছরে যুক্তরাজ্যে ৫ দশমিক শূন্য ২ বিলিয়ন বা ৫০২ কোটি ডলার মূল্যের পোশাক রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ, আগের অর্থবছরের তুলনায় যা ১১ দশমিক ৭৮ শতাংশ বেশি।
চিঠিতে আরও বলা হয়, তৈরি পোশাকশিল্পের কর্মীদের নিরাপত্তা ও ক্ষমতায়ন নিশ্চিতের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে বাংলাদেশ। শ্রমিকদের কল্যাণ ও পরিবেশের সুরক্ষা নিশ্চিতে বিজিএমইএর উদ্যোগ অব্যাহত রয়েছে। পাশাপাশি বাংলাদেশ সরকার শ্রমিকদের জন্য ন্যূনতম মজুরি বোর্ড গঠন করেছে। আশা করা হচ্ছে, এবার শ্রমিকদের মজুরি উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ানো হবে।
স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা (এলডিসি) থেকে বেরিয়ে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে যুক্ত হওয়ার অপেক্ষায় আছে বাংলাদেশ। এরপর পণ্য রপ্তানিতে বিভিন্ন বাজারে শুল্কমুক্ত সুবিধাগুলো অব্যাহত থাকবে কি না, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন এ খাতের রপ্তানিকারকরা।
মন্তব্য করুন