বৃহস্পতিবার, ২১ আগস্ট ২০২৫, ৬ ভাদ্র ১৪৩২
রাজকুমার নন্দী
প্রকাশ : ০১ জানুয়ারি ২০২৪, ০৩:৩৬ এএম
আপডেট : ০১ জানুয়ারি ২০২৪, ০১:৩৭ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ

কূটনৈতিক তৎপরতা বাড়াচ্ছে বিএনপি

নাশকতায় সরকারকে দায়ী করে দূতাবাসে চিঠি
কূটনৈতিক তৎপরতা বাড়াচ্ছে বিএনপি

ভোটারদের কেন্দ্রবিমুখ করতে গণসংযোগ ও লিফলেট বিতরণের পর এবার টানা কর্মসূচিতে ফিরছে বিএনপি। ৭ জানুয়ারির ভোট ঠেকানোই এখন দলটির মূল লক্ষ্য। আন্দোলনের ‘চূড়ান্ত পর্যায়’ সামনে রেখে কূটনৈতিক তৎপরতাও বাড়িয়েছে বিএনপি। এর অংশ হিসেবে গতকাল রোববার ঢাকায় অবস্থিত বিভিন্ন দূতাবাসে চিঠি পাঠিয়েছে দলটি। ইমেইলে পাঠানো সাত পৃষ্ঠার এই চিঠিতে সম্প্রতি সংঘটিত অগ্নিসন্ত্রাস ও নাশকতার জন্য সরকারকে দায়ী করা হয়েছে। সেইসঙ্গে দেওয়া হয়েছে গত কয়েক মাসে কারাগারে মৃত্যুবরণকারী দলীয় নেতাদের তালিকাও। বিএনপির দাবি, পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অমানুষিক অত্যাচার-নির্যাতনে মারা গেছেন এই নেতারা।

বিএনপি নেতারা বলছেন, ৭ জানুয়ারির ভোট সামনে রেখে সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তরফ থেকে আগামী ৪ তারিখ ঢাকায় কূটনীতিকদের ব্রিফ করা হতে পারে। সেখানে সাম্প্রতিক অগ্নিসন্ত্রাস ও নাশকতার ঘটনায় বিএনপিকে দায়ী করে বক্তব্য তুলে ধরতে পারে সরকার। এর মধ্য দিয়ে বিএনপি সম্পর্কে বিদেশিদের কাছে ভুল বার্তা দেওয়া হবে। সে কারণে আগেই সার্বিক পরিস্থিতি বিদেশিদের অবহিত করল বিএনপি।

দলটির দাবি, জনসম্পৃক্ত চলমান আন্দোলন নস্যাৎ করতে সরকারি মদদে বিভিন্ন ঘটনা ঘটিয়ে বিএনপির ওপর তার দায় চাপানো হচ্ছে। তবে এসব অগ্নিসন্ত্রাস ও নাশকতার ঘটনা প্রকৃতপক্ষে কারা ঘটিয়েছে, তা দেশবাসী এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ওয়াকিবহাল বলে দাবি বিএনপির।

বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান জানান, ‘৩১ ডিসেম্বর ঢাকাস্থ বিভিন্ন দূতাবাসে বিএনপির পক্ষ থেকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। বিএনপির আন্তর্জাতিক সম্পর্কবিষয়ক কমিটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, জাতিসংঘের মহাসচিবের দপ্তর চিঠি গ্রহণ করেছে।’

ভোটের আগে বিদেশিদের চিঠি দেওয়ার কারণ প্রসঙ্গে বিএনপি নেতারা বলছেন, আওয়ামী লীগ সরকার জনবিচ্ছিন্ন হয়ে রাষ্ট্রযন্ত্রকে কাজে লাগিয়ে ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য মরিয়া চেষ্টা করছে। এর অংশ হিসেবে রাজনৈতিক দমন-পীড়নের মধ্য দিয়ে ফের একটি একতরফা, পাতানো নির্বাচন করছে। কিন্তু জনগণ এই নির্বাচনী প্রহসন এরই মধ্যে প্রত্যাখ্যান করেছে। সে কারণে ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে আনতে নানাভাবে ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। চিঠির মধ্য দিয়ে বিদেশিদের কাছে এসব বিষয় তুলে ধরা হয়েছে।

বিএনপির সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা কালবেলাকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকার ফের ক্ষমতায় থাকার জন্য তার লোকজনকে দিয়ে বিভিন্ন নাশকতার ঘটনা ঘটাচ্ছে। এরপর এর দায় বিএনপির ওপর চাপিয়ে দিচ্ছে। বিএনপির চলমান জনসম্পৃক্ত শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকে নস্যাৎ করতে পরিকল্পিতভাবে এটা করা হচ্ছে। তবে দেশের মানুষ রাজনীতি সচেতন। প্রকৃত পক্ষে কারা এসব নাশকতার ঘটনা ঘটাচ্ছে, সে সম্পর্কে তারা ওয়াকিবহাল। আন্তর্জাতিক বিশ্বও বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলো সম্পর্কে অবগত। সুতরাং এভাবে ক্ষমতায় থাকা যাবে না।’

বিদেশি দূতাবাস, জাতিসংঘসহ বিভিন্ন সংস্থার ঢাকা কার্যালয়ে পাঠানো বিএনপির চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘শেখ হাসিনা সরকারের অধীনে আন্তর্জাতিকভাবে ধীকৃত ২০১৪ ও ২০১৮ সালের দুটি নির্বাচনের পটভূমিতে আবারও আগামী ৭ জানুয়ারি নির্বাচনের নামে একটি প্রহসনমূলক ও সহিংস কারচুপির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। তথাকথিত এই ‘ডামি নির্বাচন’ সামনে রেখে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় যে নাশকতা চলছে, তাতে শুধু গণতন্ত্রকামী রাজনৈতিক নেতাকর্মীরাই নন, নিপীড়ন-নিষ্পেষণের শিকার হচ্ছেন খেটে খাওয়া, প্রান্তিক মানুষ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ক্ষমতাসীন শীর্ষ নেতৃত্ব ও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা কোনো তদন্ত, তথ্য বা সূত্র ছাড়াই প্রতিটি ঘটনার পর অবলীলায় ও একই সুরে অগ্নিসন্ত্রাসের দায় বিএনপির ওপর চাপিয়ে দিচ্ছেন।’ চিঠিতে গত ১৯ ডিসেম্বর ঢাকায় চলন্ত ট্রেনের তিনটি বগিতে অগ্নিসংযোগ এবং চার যাত্রী মারা যাওয়ার বিষয়টি তুলে ধরে বলা হয়েছে, ‘ঘটনার বিশ্লেষণে প্রতীয়মান—রাষ্ট্রযন্ত্রের একটি চিহ্নিত অংশের যোগসাজশে এই নাশকতা সংঘটিত হয়েছে। অগ্নিকাণ্ডের দুদিন আগেই ১৯ ডিসেম্বরের জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে বিশেষভাবে সরকারি হাসপাতালগুলোতে পর্যাপ্ত শয্যা, জরুরি পরিষেবা, ডাক্তার এবং অ্যাম্বুলেন্স প্রস্তুত রাখার জন্য ডিএমপির নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। আমাদের বিশ্বাস করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে যে, এই নির্দেশনাটি কোনো কাকতালীয় বিষয় নয়।’

চিঠিতে গত ২৮ অক্টোবর ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশে পুলিশি হামলার ঘটনা তুলে ধরে বলা হয়েছে, মুখোশধারী আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা পুলিশের সহায়তায় প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলা চালায় এবং পুলিশ হাসপাতালের সামনে বাস ও গাড়িতে আগুন দেয়। তারা প্রকাশ্য দিবালোকে এক পুলিশ সদস্যকে হত্যাও করে; কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে পুলিশের কেউ তাকে উদ্ধার করতে এগিয়ে আসেনি, যা ভিডিওতে স্পষ্ট দেখা যায়। এরপর এর দায়ে বিএনপির লাখ লাখ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা এবং প্রায় ২৫ হাজার নেতাকর্মীকে গণগ্রেপ্তার করা হয়। পরে পুলিশি হেফাজতে অবর্ণনীয় নির্যাতন ও ব্ল্যাকমেইলের মাধ্যমে বিএনপির সদস্যদের কাছ থেকে জবরদস্তিমূলক মিথ্যা স্বীকারোক্তি আদায়ের চেষ্টা করা হচ্ছে।

এদিকে নির্বাচন বয়কট করে আন্দোলনে থাকা বিএনপির সঙ্গে গতকাল বিকেলে বৈঠক করেছে যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনী পর্যবেক্ষক দল। গুলশানে ড. আব্দুল মঈন খানের বাসায় ওই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে বিএনপির পক্ষে স্থায়ী কমিটির সদস্য মঈন খানসহ তিনজন ছিলেন। বাংলাদেশে প্রাক-নির্বাচনী অবস্থা মূল্যায়ন করতে কয়েক মাস ধরে ঢাকায় অবস্থান করছেন ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ইনস্টিটিউট ও ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউটের (আইআরআই) সদস্যরা।

জানা গেছে, বৈঠকে নির্বাচন বয়কটের কারণ, নির্বাচনী পরিবেশ এবং চলমান আন্দোলন প্রসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনী পর্যবেক্ষক দলকে অবহিত করে বিএনপি।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

মানবিক ড্রাইভার গড়তে নারায়ণগঞ্জে ডিসির যুগান্তকারী উদ্যোগ

গৃহকর্মীদের অধিকার সুরক্ষায় জাতীয় পরামর্শ সভা অনুষ্ঠিত

পিএসসি সদস্য হলেন অধ্যাপক শাহীন চৌধুরী

রিয়ালের হয়ে ইতিহাস গড়লেন আর্জেন্টিনার ‘মাস্তান’

দাম্পত্য কলহ এড়ানোর সহজ ৫ উপায়

‘গণতন্ত্রের জন্য আরও কঠিন পথ পাড়ি দিতে হতে পারে’

আর্থিক খাত নিয়ে খারাপ খবর দিলেন গভর্নর

পৌরসভার ফাইল নিয়ে দুই কর্মকর্তার হাতাহাতি

কর্মস্থলে ‘অনুপস্থিত’, এবার পুলিশের ২ এসপি বরখাস্ত

এশিয়া কাপ দল নিয়ে তোপের মুখে বিসিসিআই

১০

নারী-শিশুসহ ছয় ভারতীয় নাগরিক আটক

১১

ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের জন্য সব প্রস্তুতি নিয়েছে সরকার : উপদেষ্টা আসিফ

১২

পিয়াইন নদীতে অবাধে বালু লুট, হুমকিতে বসতবাড়ি 

১৩

সোনালী ও জনতা ব্যাংকের অফিসার পদের ফল প্রকাশ

১৪

নরসিংদীতে একজনকে কুপিয়ে হত্যা

১৫

হোয়াটসঅ্যাপে নতুন কৌশলে অর্থ চুরি, যেভাবে নিরাপদ থাকবেন

১৬

টিটিইসহ ৫ জন আসামি / তিন মাসেও শেষ হয়নি ট্রেন থেকে ফেলে হত্যার তদন্ত

১৭

স্বামীর মোটরসাইকেল থেকে পড়ে স্ত্রীর মৃত্যু

১৮

রওনা দিয়েছে মার্কিন যুদ্ধজাহাজ, পাল্টা প্রস্তুতি ভেনেজুয়েলার

১৯

দেশে হবে আরও ৫১৬ কমিউনিটি ক্লিনিক

২০
X