বগুড়া শহরে করতোয়া নদীর ওপর নির্মাণাধীন শাহ ফতেহ আলী সেতুর নির্মাণকাজ চলছে ধীরগতিতে। আগামী জুন মাসের মধ্যে সেতুর নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও গত ১০ মাসে নির্মাণকাজ মাত্র ২০ শতাংশ এগিয়েছে। এখনো বাকি আছে ৮০ শতাংশ কাজ। তবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি বলছে, আগামী জুনে নয়, হয়তো ডিসেম্বরে সেতুর নির্মাণকাজ শেষ হতে পারে।
৫৩ বছর আগে ১৯৭০ সালে এই ব্রিজ নির্মাণের ফলে পূর্ব বগুড়া ও পশ্চিম বগুড়ার মধ্যে একটি বন্ধন সৃষ্টি হয়। ব্রিজ নির্মাণের প্রায় ৪৮ বছর পর ২০১৮ সালে এই ব্রিজ ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়। এরপর ওই ব্রিজের ওপর দিয়ে ভারী যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর গত বছরের ২২ মে বগুড়া-৬ আসনের জাতীয় সংসদ সদস্য রাগেবুল আহসান রিপু আনুষ্ঠানিকভাবে সেতুর নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনের পর প্রায় ১০ মাস পেরিয়ে গেলেও কাজের কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি হয়নি।
বগুড়া সড়ক বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণার পর বরাদ্দ না পাওয়ায় সে সময় নতুন করে সেতু নির্মাণের কোনো পরিকল্পনা ছিল না। ২০২১ সালে সেতু নির্মাণের জন্য একটি প্রস্তাবনা পাঠানো হয়। পরবর্তী সময়ে ২০২২ সালের ৩১ জুলাই সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয় সেতুটির নকশা ও অর্থ বরাদ্দ অনুমোদন করে। সেতুটি নির্মাণের জন্য ১৯ কোটি ৮৩ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ৬৯ মিটার দৈর্ঘ্য আর ১২ দশমিক ৩ মিটার চওড়া এই ব্রিজের দুপাশে আড়াই মিটার (প্রায় ৮ ফুট) করে ফুটপাত থাকবে। দৃষ্টিনন্দন এবং আধুনিক স্থাপত্যের ছোঁয়া রয়েছে এই ব্রিজের নকশায়। এ সেতু নির্মাণ হলে বগুড়া শহরের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পাবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১০ মাস আগে সেতুর নির্মাণকাজ শুরু হলেও কাজে গতি নেই। দৃশ্যমান অগ্রগতি না থাকায় সাধারণ মানুষ হতাশ। এদিকে সেতু নির্মাণে বিলম্ব হওয়ায় দুর্ভোগে পড়েছে পূর্ব বগুড়ার কয়েক লাখ মানুষ। বর্তমানে মানুষ পারাপারের জন্য পাশাপাশি দুটি বাঁশের সাকো নির্মাণ করে দেওয়া হলেও গত ১০ মাসে তা নড়বড়ে হয়ে গেছে। ভাসমান সাঁকো দিয়ে মানুষ চলাচল করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ না করায় পুরো চাপ পড়েছে মূল সাঁকোর ওপর। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জামিল ইকবাল লিমিটেডের প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী রবিউল আলম জানান, নকশা অনুযায়ী ব্রিজের জন্য পাইলিং ২৭ থেকে ৩০ মিটার করার কথা। কিন্তু ১৯ থেকে ২৪ মিটার পর্যন্ত ওই এলাকায় পাথরের মোটা পুরু স্তর রয়েছে, যে কারণে পাইলিং করা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে। বিষয়টি সড়ক বিভাগকে জানানো হলে তারা যথাসময়ে সিদ্ধান্ত জানাননি। পাইলিং করা হবে নাকি নকশা পরিবর্তন করা হবে এ নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ৬ মাস পেরিয়ে যায়। পরে সিদ্ধান্ত হয় ডায়মন্ড কাটিং দিয়ে পাইলিং করে কাজ করতে হবে। সে অনুযায়ী কাজ হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, আগামী মার্চ মাসের মধ্যে বেইজ ঢালাই এবং এপ্রিলে গার্ডারের কাজ সম্পন্ন হবে। তবে জুন মাসের মধ্যে কাজ শেষ করা সম্ভব নয়।
প্রকৌশলী রবিউল আলম আরও জানান, সেতুর পশ্চিম অংশে তারা এখনো জায়গা বুঝে পায়নি। জায়গা বুঝে পেলে পশ্চিম পাশের কাজ এতদিন শুরু করা সম্ভব হতো। বিভিন্ন কারণে ৬ মাস পিছিয়ে পড়েছে তারা। তবে ২০২৪ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে কাজ শেষ হবে তিনি আশা করেন। বগুড়া পৌরসভার প্যানেল মেয়র পরিমল চন্দ্র দাস জানান, শাহ ফতেহ আলী সেতু হচ্ছে পূর্ব বগুড়ার মানুষের হার্ডপয়েন্ট, এই ব্রিজের ওপর দিয়ে প্রতিদিন লাখো মানুষ চলাচল করে। জামালপুরসহ পূর্ব বগুড়ার চার উপজেলার সাধারণ মানুষ এই সেতু ব্যবহার করে বগুড়া শহরে যাতায়াত করে। সেতু নির্মাণে ধীরগতি হওয়ায় এই এলাকার ব্যবসা-বাণিজ্য ঝিমিয়ে পড়েছে। স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের বেশি ভাড়া দিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে।