ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের জন্য ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা এই দুই উৎসবে সামর্থ্য অনুযায়ী জাকাত দেওয়া ফরজ। ইসলামের মৌলিক পাঁচটি ভিত্তির অন্যতম হলো জাকাত। এটি একটি ফরজ ইবাদত। সাধারণত স্বর্ণ, রুপা, নগদ টাকা, অন্যান্য পণ্য, গবাদি পশু ও ফসলের ওপর জাকাত দিতে হয়। তবে ঢাকা শহরে অনেকে নগদ টাকার পাশাপাশি কাপড়ও দিয়ে থাকেন জাকাত হিসেবে। ঢাকা শহরে নির্দিষ্ট বেশকিছু স্থানে জাকাতের কাপড় বিক্রি হয়। এর মধ্যে সদরঘাটের শরীফ মার্কেট, ইসলামপুর-নবাবপুর শাড়িপট্টি, গুলিস্তানের খদ্দর মার্কেট ও পীর ইয়ামেনী মার্কেটসহ অনেক মার্কেটে জাকাতের কাপড় পাইকারি বিক্রি হয়। প্রতি বছর রোজা শুরু হওয়ার পর জাকাতের কাপড় কিনতে ক্রেতাদের আনাগোনা শুরু হয়। কিন্তু এবার এখনো তেমন ক্রেতার দেখা পাওয়া যায়নি। বিক্রেতাদের আশা, ১৫ রোজার পর বাড়তে পারে ক্রেতা।
গুলিস্তানের পীর ইয়ামেনী মার্কেটের আন্ডার গ্রাউন্ডে ৫০টিরও বেশি শাড়ি-লুঙ্গির দোকান রয়েছে। এখানে জাকাতের কাপড় পাওয়া যাচ্ছে। শাড়ির দাম ৩৬০ থেকে ৪৫০ টাকা পর্যন্ত। সুগন্ধা লুঙ্গি বিতানের তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ঈদ এলে জাকাতের কাপড়ের চাহিদা বাড়ে। চাহিদা অনুপাতে আমরা চেষ্টা করি ক্রেতাদের যতটুকু সম্ভব কম দামে সরবরাহ করার। লুঙ্গির দামও সহনীয়। এবার বেচা-বিক্রি একেবারেই কম। প্রতি বছর এ সময় প্রায় প্রতিদিন অন্তত ৫শ থেকে ১ হাজার পিস শাড়ি-লুঙ্গি বিক্রি হতো। এবার খুচরা ব্যবসায়ীরা আসছেন না। তাই বিক্রিও ভালো হচ্ছে না।
ইসলামপুর কাপড়পট্টিতে দীর্ঘদিন ধরে সোনারগাঁও বস্ত্রবিতান জাকাতের কাপড় বিক্রি করছে। মো. নূরল হুদা জানান, তাদের দোকানে শাড়ির দাম ৩৫০ থেকে ৪৬০ টাকা পর্যন্ত। লুঙ্গির দাম সর্বনিম্ন ২৫০ থেকে ২৭০ টাকা। তবে ৩০০ টাকার মধ্যেও বেশ বাহারি লুঙ্গি পাওয়া যাচ্ছে। প্রতি বছর এ সময় জাকাতের শাড়ি ও লুঙ্গি কেনার হিড়িক পড়ে। তবে এ বছর এখনো ক্রেতাসমাগম হয়নি। সময় যেহেতু আছে; তাই আমরা আশাবাদী।
জাকাতের কাপড়ের মধ্যে লুঙ্গি আর শাড়ি কেন বিখ্যাত হলো—এমন প্রশ্নে গুলিস্তানের কামাল শাড়ি বিতানের স্বত্বাধিকারী ব্যবসায়ী মো. শাহজাহান জানান, আসলে দরিদ্র মহিলারা একটা নতুন শাড়ি পেলে খুব খুশি হন। আর লুঙ্গি পুরুষের অতি দরকারি বস্ত্র। ঈদে নতুন একটি লুঙ্গি পেলে তারা বেশ খুশি হন। অনেকের ঈদের সময় নতুন কাপড় কেনার সামর্থ্য থাকে না। আমার মতে, জাকাতের কাপড় তাদেরই পাওয়া উচিত, যাদের নতুন কাপড় কেনার সামর্থ্য নেই।
গুলিস্তানের আরেক পাইকারি মার্কেট খদ্দর মার্কেটের ব্যবসায়ীরা বলছেন, মূল যে বিক্রি, তা শুরু এখনো হয়নি। আশা করছি, ১৫ রোজার পর বাড়বে ক্রেতা। ধনী-গরিব একসঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগি করাই জাকাতের শিক্ষা। ঢাকার বাইরের খুচরা ক্রেতারা এখনো জাকাতের কাপড় কেনা শুরু করেনি।
জাকাতের কাপড় কিনতে আসা টঙ্গী থেকে খুচরা ব্যবসায়ী জাকের মিয়া জানান, আগে জাকাত হিসেবে কাপড়-লুঙ্গি দিত মানুষ। এখন অধিকাংশ মানুষ নগদ টাকা দেয়। যাদের দেয়, তারা পছন্দমতো কিনে নেয়। ২৫ রমজানের মধ্যে প্রতি বছর জাকাতের শাড়ি-লুঙ্গি দেওয়া হয়ে যায়। ১০ রমজান থেকে জাকাতের শাড়ি-লুঙ্গি খুচরা বিক্রি শুরু হয় বাজারে। তাই এখান থেকে পাইকারি দামে জাকাতের কাপড় কিনতে এসেছি।