আবারও বড় আকারে কর্মী ছাঁটাই করেছে ই-কমার্স মার্কেটপ্লেস দারাজ বাংলাদেশ। সূত্র বলছে, প্রায় ২৫০ কর্মীকে চাকরিচ্যুত করেছে চীনভিত্তিক আলীবাবা গ্রুপের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানটি। পাশাপাশি দারাজের বিরুদ্ধে এসেছে গ্রাহক হয়রানির অভিযোগ।
গ্রাহকরা বলছেন, অগ্রিম মূল্য পরিশোধ করেও অর্ডারকৃত পণ্যের ডেলিভারি পাচ্ছেন না তারা। প্রতিষ্ঠানটির সূত্রমতে, অন্তত ৪ লাখ অর্ডারের ডেলিভারি দারাজে থমকে আছে।
গত ফেব্রুয়ারিতে প্রায় ৭০ শতাংশ কর্মী ছাঁটাই করে দারাজ বাংলাদেশ। এক হাজার ৭০০ জনের কর্মীবাহিনী কমিয়ে ৫০০-এর নিচে নামিয়ে আনা হয়। পূর্ণকালীন প্রায় ৯০০ ও চুক্তিভিত্তিক কর্মী মিলিয়ে সেই ছাঁটাই করা হয়েছিল। এই ছাঁটাইয়ে ছিলেন বিভিন্ন বিভাগের প্রধানরাও। এমন ঘটনার পর কর্মীদের আবারও দুঃসংবাদ দিয়েছে দারাজ বাংলাদেশ। এবার পূর্ণকালীন এবং চুক্তিভিত্তিক প্রায় ২৫০ কর্মী চাকরি হারালেন। সূত্র বলছে, এর মধ্যে প্রায় ৫০ জন পূর্ণকালীন কর্মী ছিলেন। আর বাকিরা ছিলেন ডেলিভারি হাব সংশ্লিষ্ট চুক্তিভিত্তিক প্রতিনিধি।
পূর্ণকালীন কর্মীদের মধ্যে বেশিরভাগই ছিলেন আইটি, প্রশাসন এবং মানবসম্পদ বিভাগের কর্মকর্তা। প্রতিষ্ঠানটির আইটি অপারেশন্স লিড মোহাম্মদ আসিফ ক্যারিয়ার নেটওয়ার্কিং প্ল্যাটফর্ম লিঙ্কড ইনে এক পোস্টে এ তথ্য জানান। পোস্টে তিনি নিজেও চাকরিচ্যুত হয়েছেন বলে উল্লেখ করেন। প্রতিষ্ঠানটির একটি সূত্র বলছে, ৪০-এরও বেশি কর্মী ছিল মানবসম্পদ বিভাগে। এখন আছে তিনজন।
একদিকে প্রতিষ্ঠানটি থেকে কর্মী ছাঁটাই হচ্ছে, অন্যদিকে গ্রাহকরা পোহাচ্ছেন ভোগান্তি। অগ্রিম মূল্য পরিশোধ করেও অনেকে কাঙ্ক্ষিত পণ্য বুঝে পাচ্ছেন না। এমনকি পণ্যের জন্য পরিশোধিত অর্থও দারাজ ফেরত দিতে চাইছে না বলেও অভিযোগ রয়েছে।
ই-কমার্সে কেনাকাটা করা গ্রাহকরা ফেসবুকের বিভিন্ন কমিউনিটি গ্রুপে এমন হয়রানিমূলক অভিজ্ঞতা বর্ণনা করছেন। ‘ই-কমার্স রিভিউজ’ নামক একটি গ্রুপে গত ২২ এপ্রিল গ্রাহক তাহফিম সানি জানান, ১ মাসেও অর্ডারকৃত পণ্য পাচ্ছেন না তিনি। অর্ডার ক্যান্সেল করে টাকা ফেরত চাইলে দারাজ সে বিষয়েও সহযোগিতা করছে না বলেও অভিযোগ তার।
আরেক গ্রাহক সাগর সিকদার জানান, দারাজে সরাসরি অভিযোগ জানানোর পন্থাও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বন্ধ করা হয়েছে হটলাইন নম্বর। এখন শুধু অ্যাপে চ্যাটিংয়ের মাধ্যমে সেবা মিলছে। দারাজের বিরুদ্ধে গ্রাহকদের এমন অসংখ্য অভিযোগে এখন সয়লাব ফেসবুক।
গ্রাহকরা যেমন পণ্য পাচ্ছেন না, তেমনি বিপাকে রয়েছেন দারাজে পণ্য বিক্রেতারা। নির্ধারিত সময়ে গ্রাহকের কাছে সরবরাহে ব্যর্থ পণ্যগুলো বিক্রেতারা ফিরে পাচ্ছেন না। গ্রাহক হারিয়ে এবং পণ্য ফেরত না পেয়ে বেশ বিপাকে পড়েছেন সাধারণ ব্যবসায়ীরা। এ বিষয়ে সম্প্রতি দারাজের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকও করেন বিক্রেতাদের একটি অংশ। তবে এখন পর্যন্ত আশ্বাস ছাড়া কার্যকর কোনো সমাধান তারা পাননি। সূত্র বলছে, চাকরিচ্যুত ডেলিভারি কর্মীদের মধ্যে কেউ কেউ ক্ষুব্ধ হয়ে গ্রাহকের পার্সেল নিয়ে চলে গেছেন।
অনুসন্ধান বলছে, ফেব্রুয়ারিতে ছাঁটাইয়ের পর সীমিত লোকবল নিয়ে ঈদুল ফিতর এবং পহেলা বৈশাখের সময় গ্রাহকদের অর্ডার সামলাতে হিমশিম খেতে হয় দারাজকে। প্রচুর অর্ডার আসার ধকল এখনো কাটিয়ে উঠতে পারেনি প্রতিষ্ঠানটি। অগ্রিম মূল্য পরিশোধ করা এবং ক্যাশ অন ডেলিভারিসহ দারাজে অন্তত ৪ লাখ অর্ডার আটকে আছে গ্রাহকের।
এসব বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি দারাজ। তবে গ্রাহক ভোগান্তির অভিযোগ অনানুষ্ঠানিকভাবে স্বীকার করা হয়। এসব বিষয় দ্রুত সমাধান হবে বলেও জানানো হয়।