মাহমুদুল হাসান রিমন, সখীপুর (টাঙ্গাইল)
প্রকাশ : ০৩ মে ২০২৪, ০৩:০৭ এএম
আপডেট : ০৩ মে ২০২৪, ০৮:০৩ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

দুর্বৃত্তের আগুনে উজাড় হচ্ছে শাল-গজারি বন

নীরব বন বিভাগ
দুর্বৃত্তের আগুনে উজাড় হচ্ছে শাল-গজারি বন

শাল-গজারি বনে ঘেরা এক অপার সৌন্দর্যের লীলাভূমি টাঙ্গাইলের সখীপুর। যেদিকে চোখ যায় মনে হয় সবুজের সমারোহ। কিন্তু চৈত্র-বৈশাখ মাস এলেই দুর্বৃত্তের আগুনে পুড়ে সখীপুরের শাল-গজারি বন। বন বিভাগের অনুমতি ছাড়া যেখানে প্রবেশ নিষেধ সেখানে ঘটছে আগুন দেওয়ার মতো ঘটনা। প্রতি বছর এ মৌসুমে বনে আগুন দেওয়ার কারণে পুড়ে যায় ছোট গজারি, ঝোপঝাড়, পোকামাকড়, কেঁচো ও কীটপতঙ্গ। বিনষ্ট হয় বন্য প্রাণীর আবাসস্থল। বন পোড়ানোর কারণে নষ্ট হচ্ছে পরিবেশ। বিলুপ্ত হচ্ছে বন্য প্রাণী, কীটপতঙ্গ ও পাখি। ফলে প্রকৃতি ও পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে।

গত এক মাসে সখীপুরের বনাঞ্চলে অন্তত ১৫ জায়গায় আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। সর্বশেষ গত বুধবার বিকেলে উপজেলার বহেড়াতৈল বিটের আওতায় ছাতিয়াচালা সাইনবোর্ড এলাকায় একটি গজারি বনে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। এতে প্রায় পাঁচ একর গজারি বন আগুনে পুড়ে যায়।

গজারিয়া বিট কার্যালয়ের আওতাধীন অন্তত চারটি স্থানে শাল-গজারি বনে আগুনের ঘটনা ঘটেছে। কালিয়ানপাড়া, গজারিয়া, কীর্ত্তনখোলা বংকী এলাকায় শাল-গজারি এসব বনে আগুন দেওয়া হয়। এতে ৮ থেকে ১০ একর বন পুড়ে যায়। নলুয়া বিটের আওতাধীন দেওদীঘি বাজারের পশ্চিম পাশে দুটি গজারি বন, নলুয়া বিট কার্যালয়ের দক্ষিণ দিকে ৩০০ গজ দূরে একটি, ঘেচুয়া এলাকায় দুটি ও আমের চারা এলাকায় একটি বনে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা।

গজারিয়া বিটে সখীপুর-সিডস্টোর সড়কের কীর্ত্তনখোলা এলাকায় সরেজমিন দেখা যায়, সেখানে একটি বনে কে বা কারা আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। স্থানীয়দের ভাষ্য অনুযায়ী, গত এক সপ্তাহে অন্তত চারটি শাল-গজারি বন আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা।

স্থানীয় বন বিভাগ সূত্রে জানা যায়, সখীপুরে চারটি রেঞ্জের আওতায় ১৩টি বিট কার্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ১৫ হাজার একর জমিতে শাল-গজারি বন রয়েছে। বসন্তে, তথা ফাল্গুন-চৈত্র ও বৈশাখ মাসে প্রকৃতির নিয়মে শাল-গজারি পাতা ঝরে পড়ে। বনাঞ্চলের আশপাশের বাসিন্দারা জমি দখল ও লাকড়ি সংগ্রহের উদ্দেশ্যে রাতে আবার কখনো দিনেও বনে আগুন দেন। ঝরাপাতাগুলো শুকনো থাকার কারণে মুহূর্তেই বনে আগুন ছড়িয়ে পড়ে।

এ প্রসঙ্গে নলুয়া বিট কর্মকর্তা সাফেরুজ্জামানের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা হয়। তিনি বলেন, ‘দুই সপ্তাহের মধ্যে কয়েকটি গজারি বনে আগুন লাগার ঘটনা ঘটে। আমরা খুবই সতর্ক অবস্থায় আছি। এতে গতবারের চেয়ে বনে আগুন লাগার ঘটনা কম ঘটেছে। আমার কার্যালয়ে তিনজন স্টাফ রয়েছেন। চার-পাঁচ হাজার একর জমির বন দেখভাল করতে গিয়ে আমাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে।’

বনাঞ্চলের মানুষদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বনের কাছাকাছি নিম্ন আয়ের মানুষের বসবাস বেশি। তারা লাকড়ি সংগ্রহের উদ্দেশ্যে অনেক সময় গজারি বনে আগুন দিয়ে থাকে। কেউ বনের জমি দখলের উদ্দেশ্যে বন পোড়ানোর সঙ্গে জড়িত থাকে। বনের ভেতরের সড়ক দিয়ে চলাচলকারীরাও অনেক সময় বনে আগুন দেয়। মূলত জমি দখল আর লাকড়ি সংগ্রহ করতেই আগুন দিয়ে থাকে দুর্বৃত্তরা।

হতেয়া রেঞ্জের গজারিয়া বিটের আওতাধীন কীর্ত্তনখোলা গ্রামের বাসিন্দা শরিফুল ইসলাম রিপন বলেন, এভাবে বনে আগুন দিয়ে বন ধ্বংস করলে সেটি আমাদের জন্য অশনি সংকেত। বন বিভাগের কর্মকর্তাদের অসতর্কতার কারণেই বনে আগুন দিচ্ছে।

সরকারি মুজিব কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সুনির্মল চন্দ্র বসু বলেন, বনে আগুন দেওয়ার ফলে যেভাবে বন্য পশুপাখি ও কীটপতঙ্গ ধ্বংস হচ্ছে তাতে পরিবেশগত বিপর্যয় অনিবার্য।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আশাশুনি-কালীগঞ্জে সন্ত্রাস ও দখলবাজির স্থান হবে না : কাজী আলাউদ্দিন

৩০ বছরের বিরোধ মিটিয়ে প্রশংসায় ভাসছেন নুরুদ্দিন আহাম্মেদ অপু

দেখে নিন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশের ম্যাচের সূচি

তনির বিরুদ্ধে সাবেক স্বামীর এজাহার, জবাবে যা বললেন

৫ ধরনের ব্যক্তির জন্য পেঁপে খাওয়া বিপজ্জনক

জামায়াত আমিরের সঙ্গে কসোভোর সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সাক্ষাৎ

একটানা লম্বা ছুটিতে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান

টেকনোলজিস্ট ও ফার্মাসিস্ট / চার দিনের মধ্যে দাবি না মানলে শাটডাউন

প্রকাশিত হলো টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সূচি, প্রথম দিনই মাঠে নামছে বাংলাদেশ

হাঁস নাকি মুরগির ডিম বেশি উপকারী? যা বলছেন পুষ্টিবিদ 

১০

ধানের শীষের পক্ষে জনমত গড়তে হবে : মফিকুল হাসান

১১

‘বাউলিয়ানার নামে ভণ্ডামি ছাড়ুন’

১২

পুরুষ বাউলদের নিয়ে বিস্ফোরক মন্তব্য হাসিনা সরকারের

১৩

আবুল সরকারের বিষয়ে অবস্থান পরিষ্কার করল এনসিপি

১৪

মেট্রোর অনলাইন রিচার্জে ধস, ৪ ঘণ্টায় ৭ লাখ হিট 

১৫

নির্বাচন আয়োজনে সরকার ও কমিশন প্রস্তুত : উপদেষ্টা শারমীন

১৬

শহুরে ব্যস্ততায় স্বস্তি দিতে আমিন মোহাম্মদ এগ্রোর প্রাকৃতিক পিকনিক স্পট

১৭

জীবাশ্ম জ্বালানি ছাড়াই কপ-৩০ চুক্তি, শক্তি রূপান্তর কি তাহলে থমকে গেল?

১৮

এমআইইউর ফার্মেসি বিভাগের ৪০তম ব্যাচের বিদায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠিত

১৯

কৃষকরাই বাংলাদেশের প্রাণ : নুরুদ্দিন আহাম্মেদ অপু

২০
X