

বারবার আশ্বাসের পরও ১০ম গ্রেড প্রদানের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন না হওয়ায় কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করেছে সরকারি টেকনোলজিস্ট ও ফার্মাসিস্টরা। আগামী চার দিনের মধ্যে দাবি পূরণ না হলে কর্মবিরতি ও পুরো সেবা কার্যক্রম শাটডাউনের ঘোষণা দিয়েছেন তারা।
মঙ্গলবার (২৫ নভেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবে আবদুস সালাম হলে মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ও ফার্মাসিস্ট ১০ম গ্রেড বাস্তবায়ন পরিষদ আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য তুলে ধরেন বৈষম্যবিরোধী মেডিকেল টেকনোলজিস্টের মহাসচিব ও দশম গ্রেড বাস্তবায়ন পরিষদের সমন্বয়কারী মো. রিপন শিকদার। কর্মসূচি ঘোষণা করেন বিএমটিএ ও এমট্যারের মহাসচিব মো. বিপ্লবুজ্জামান বিপ্লব। বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন বিএমটিএ সভাপতি খাজা মাঈন উদ্দি মঞ্জু এবং এমটিএফের সভাপতি মো. সোহেল রানা।
রিপন শিকদার বলেন, নানাবিধ বৈষম্য আর বঞ্চনায় জর্জরিত মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ও ফার্মাসিস্ট পেশার দুর্ভাগ্যজনক অধ্যায় তিন দশকেও ১০ম গ্রেডের পদমর্যাদা বাস্তবায়িত না হওয়া। স্বাধীনতা পূর্ববর্তী সময়েই এ পেশার পথচলা শুরু হলেও ১৯৮৯ সাল পরবর্তী মেডিকেল টেকনোলজিস্ট পেশাজীবীদের ১০ম গ্রেড পদমর্যাদার দাবিটি অব্যাহতভাবে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও মন্ত্রণালয়ে বারবার উপস্থাপিত হয়ে আসছে। কিন্তু নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে আন্দোলন, সংগ্রাম, সহায়ক কর্মসূচি পালন, দাপ্তরিক চিঠি চালাচালি, আবেদন, সর্বোপরি জনপ্রশাসন বিধি শাখার সমস্ত চাহিদা পূরণ করা সত্ত্বেও সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সদিচ্ছার অভাব, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ও নানাবিধ উদ্দেশে মন্ত্রণালয় অবিরতভাবে কোয়ারি দেওয়ার মাধ্যমে সময়ক্ষেপণ ও জটিলতাই তৈরি করেছে। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর দশম গ্রেডের পদমর্যাদার দাবি পুনরায় আলোচনায় এসেছে।
তিনি বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ২০১৫ সালে টেকনোলজিস্টদের ১০ম গ্রেড নির্ধারণ করলেও এখনো কার্যকর করছে না। একই সঙ্গে ২০১৮ সালে কৃষি ডিপ্লোমাধারীদের ১০ম গ্রেড প্রদান করা হলেও মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ও ফার্মাসিস্টরা তা থেকে বঞ্চিত যা ‘চরম বৈষম্য’। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, সরকার আমাদের যৌক্তিক দীর্ঘদিনের ন্যায্য অধিকার ১০ম গ্রেডের সরকারি আদেশ জারির মাধ্যমে মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ও ফার্মাসিস্টদের ৩১ বছরের বৈষম্যের অবসান করবে। কিন্তু সরকার আমাদের দাবির ব্যাপারে শুধু আশ্বাসই দিয়েছে। আমরা আর আশ্বাসের ওপর নির্ভর করে থাকছি না, দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। এমতাবস্থায় আগামী চার দিনের মধ্যে সরকার দাবি পূরণ না করলে কঠোর কর্মসূচিতে যেতে বাধ্য হচ্ছি।
পরে কর্মসূচি ঘোষণা করেন বিএমটিএ ও এমট্যাবের মহাসচিব মো. বিপ্লবুজ্জামান বিপ্লব।
তিনি বলেন, ঘোষিত কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে আগামী আগামী শনি ও রোববার সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত কর্মবিরতি। পাশাপাশি ৩ ডিসেম্বর সারাদেশের সব সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল, স্বায়ত্তশাসিত, আধা স্বায়ত্তশাসিত মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার, জাতীয় সংসদ সচিবালয় মেডিকেল সেন্টার, সচিবালয় ক্লিনিক, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় মেডিকেল সেন্টার, বঙ্গভবন মেডিকেল সেন্টার, স্বাস্থ্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও বিশেষায়িত ইনস্টিটিউটসমূহে আধাবেলা এবং ৪ ডিসেম্বর পূর্ণদিবস কমপ্লিট শাটডাউন পালন। এসবের পরও দাবি পূরণ না হলে দেশের সব স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে লাগাতার কমপ্লিট শাটডাউন কর্মবিরতি চলবে।
এমটিএফ সভাপতি মো. সোহেল রানা বলেন, সরকারকে সময় দিয়ে ধাপে ধাপে আমরা এই কর্মসূচি দিয়েছি। এখানে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কোনো দায় নেই। তারা যৌক্তিকতা উল্লেখ করে একাধিকবার সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগে চিঠি দিয়েছে। কিন্তু জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় গড়িমসি করছে। সরকারকে বিতর্কিত করার কোনো ইচ্ছে আমাদের নেই। একই আমরাও বিতর্কিত হতে চাই না।
বিএমটিল সভাপতি খাজা মাঈন উদ্দিন মঞ্জু বলেন, আমাদের দাবি যৌক্তিক, আন্দোলনও আমরা যৌক্তিকভাবে করে এসেছি। কিন্তু জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অদৃশ্য শক্তির বলে কেন জানি সেটি হচ্ছে না। আমরা আশা করব, সরকার দ্রুত টেকনোলজিস্ট ও ফার্মাসিস্টদের ১০ম গ্রেড দিয়ে অধ্যাদেশ জারি করবে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন, বৈষম্যবিরোধী মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ও ফার্মাসিস্ট পরিষদের সভাপতি মো. আব্দুস সামাদ, বিডিপিএ সভাপতি গাজী সাইফুল ইসলাম, এমট্যাবের সভাপতি এ কে এম মুসা লিটন, বিডিপিএ মহাসচিব মো. জহিরুল ইসলাম, ১০ম গ্রেড বাস্তবায়ন পরিষদের সমন্বয়কারী নাসির আহমেদ রতন, প্রধান সমন্বয়কারী মো. মুজিবুর রহমান, বিএমপিটিএ সভাপতি মো. হাফিজুর রহমান, এমটিএফের সিনিয়র সহসভাপতি মিঞা মো. গোলাম মাওলা প্রমুখ।
মন্তব্য করুন