মিল্টন সমাদ্দার গ্রেপ্তার হওয়ার পর তার চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এজ কেয়ারের দায়িত্ব নেয় সামসুল হক ফাউন্ডেশন। দায়িত্ব নেওয়ার পর আশ্রমটিতে ব্যাপক পরিবর্তন এনেছে এই ফাউন্ডেশন। এক সময় সেখানে চিকিৎসার কোনো ব্যবস্থা ছিল না। বর্তমানে সেখানে একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। চোখের সমস্যায় ভোগা রোগীদের বিশেষ সেবাদানের জন্য নেওয়া হয়েছে নানা পদক্ষেপ। এ ছাড়া বাচ্চাদের জন্য গড়ে তোলা হয়েছে প্লে জোন।
মিল্টন গ্রেপ্তার হওয়ার পর গত ৫ মে আশ্রমটি পরিচালনার দায়িত্ব নেয় সামসুল হক ফাউন্ডেশন। কথা হয় ফাউন্ডেশনের সহকারী প্রকল্প পরিচালক মো. লোকমান হাকিমের সঙ্গে। তিনি জানান, আমাদের ফাউন্ডেশন দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত আশ্রমের পেছনে প্রায় সাড়ে ৪ লাখ টাকা ব্যয় করেছে। এখানে বেশকিছু অসংগতি ছিল। সেগুলো দূর করার চেষ্টা চলছে। এখানে কোনো চিকিৎসক ছিলেন না। আমরা একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নিয়োগ দিয়েছি। আগে এখানকার কোনো রোগীকে বাইরে নিয়ে চিকিৎসা করানো হতো না। আমরা বেশকিছু রোগীকে রাজধানীর বড় বড় হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছি।
আশ্রমের অনেকেই চোখের নানা সমস্যায় ভুগছিলেন। আমরা এখানে বিশেষজ্ঞ চক্ষু চিকিৎসক দ্বারা স্পেশাল আই কেয়ার ক্যাম্প পরিচালনা করে প্রায় ২৮ জন রোগীর চোখে লেন্স বসানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি। বাকিদের চোখের চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয়েছে। সবচেয়ে বড় যে অভিযোগের বিষয়টি ছিল, এখানে মারা যাওয়াদের কোনো মৃত্যুসনদ নেওয়া হতো না। আমরা দায়িত্ব নেওয়ার পর আশ্রমে এ পর্যন্ত ৫ জন মারা গেছেন। সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে তাদের মৃত্যুসনদ নিয়েছি। একজনের মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। বাকিদের এখানেই দাফন করা হয়েছে। পাশাপাশি এখানে থাকা শিশুদের খেলাধুলার জন্য প্লে জোন তৈরি করা হয়েছে। এটি শিশুদের মানসিক ও শারীরিক বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
সরেজমিন সাভারের কমলাপুর বাহেরটেক এলাকার এই আশ্রমটিতে গিয়ে দেখা যায়, বর্তমানে সেখানে ১২৮ জন রয়েছেন। এর মধ্যে ৫১ জন বৃদ্ধা, ৪৯ জন বৃদ্ধ ও ২৮ জন বিভিন্ন বয়সী রয়েছেন। তাদের কয়েকজনের সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তারা জানান, এখন আগের চেয়ে ভালো আছেন। প্রতি সপ্তাহে ডাক্তার দেখাতে পারছেন। খাবারের মানও আগের চেয়ে ভালো হয়েছে। খোদেজা বেগম নামে এক বৃদ্ধ বলেন, ‘অনেকদিন থেকেই আমার চোখে দেখতে সমস্যা হতো। আগে অনেকবার বলেও কোনো চিকিৎসা পাইনি। কয়েকদিন আগে ডাক্তার আইসা আমার চোখ পরীক্ষা করে ওষুধ দিছে। এতে আমার অনেক আরাম হইছে।’ ময়মনসিংহের হালুয়াঘাটের শিশু আশিক বলে, এখানে আগে খেলার কোনোকিছু ছিল না। এখন অনেক খেলনা আনছে। আমরা এগুলো দিয়ে খেলতে পারি।
এদিকে গত বুধবার সরকারের সমাজসেবা অধিদপ্তরের নিয়োগ করা একজন প্রশাসক এই আশ্রমটির দায়িত্ব নিয়েছেন। নবনিযুক্ত প্রশাসক ও সাভার উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. শিবলীজ্জামান বলেন, আমরা মাত্র দায়িত্ব নিয়েছি। সবকিছু তদারকি করে দেখা হচ্ছে কোথাও কোনো অসংগতি আছে কি না। আশ্রমটির কার্যক্রম সুনিপুণভাবে পরিচালনা করতে আমাদের সর্বাত্মক চেষ্টা থাকবে।
উল্লেখ্য, গত ২৫ এপ্রিল কালবেলায় ‘মানবিক মুখোশের আড়ালে ভয়ংকর মিল্টন সমাদ্দার’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন ছাপা হয়। সেখানে তার নানা অপকর্মের কথা বিস্তারিত তুলে ধরা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ১ মে মিল্টনকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল।