কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৫ জুন ২০২৪, ০২:০৩ এএম
আপডেট : ১৫ জুন ২০২৪, ১০:৫৭ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
চড়া দাম

মসলাসহ নিত্যপণ্যের বাজারে ‘কোরবানি’ হচ্ছেন ক্রেতা

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

কোরবানির ঈদের বাকি মাত্র এক দিন। এরই মধ্যে নাড়ির টানে প্রিয় মানুষদের সঙ্গে ঈদ করতে রাজধানী ছাড়তে শুরু করেছেন মানুষ। তবে রাজধানীর বাজারগুলোতে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম আকাশছোঁয়া। বাজারে গিয়ে কোরবানি ঈদের আগেই যেন কোরবানি হতে হচ্ছে ক্রেতাদের। চড়া দরে বিক্রি হচ্ছে মসলা থেকে শুরু করে শাকসবজি, ডিম, মাছ-মাংসসহ প্রায় সব পণ্য। গতকাল শুক্রবার রাজধানীর মৌলভীবাজার, রায়সাহেব বাজার, নয়াবাজার, শ্যামবাজার, কারওয়ান বাজার ও নিউমার্কেট কাঁচাবাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।

কোরবানির ঈদ যত এগিয়ে আসছে, পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মসলা কেনার ধুম। প্রতিটি দোকানেই বাড়ছে ভিড়। তবে মসলার দাম অতিরিক্ত বলে অভিযোগ ক্রেতাদের। তারা বলেন, ঈদের আগে ইচ্ছা করে মসলার দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন দোকানিরা। ক্রেতা আলাউদ্দিন বলেন, বাজারে মসলার দাম অনেক চড়া। শেষ সময়ে সেটি আরও বেড়ে গেছে। এলাচ কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ৪ হাজার টাকার কাছাকাছি। অন্যান্য মসলার দামও বাড়তি।

রাজধানীর মৌলভীবাজারের মসলা ব্যবসায়ী কাশেম জানান, বাজারে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে এলাচের দাম। মানভেদে প্রতি কেজি এলাচ বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার ২০০ থেকে ৪ হাজার টাকায়। গত কোরবানির ঈদেও যা বিক্রি হয়েছে ২ হাজার ৪০০ থেকে ২ হাজার ৬০০ টাকায়। ঈদের আগে অন্যান্য মসলার দামও বাড়তি বলে জানান কাশেম। তিনি বলেন, মূলত ডলার সংকট ও দাম বেড়ে যাওয়ায় মসলার বাজার ঊর্ধমুখী।

কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ী জামাল বলেন, এক দিন বাদে ঈদ। এতে বাজারে ক্রেতার চাপ ও চাহিদা বেড়েছে। তাই মসলার দাম বেড়েছে। বাজারে দারচিনি ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকা, জিরা ৮০০ থেকে ৯০০, এলাচ প্রকারভেদে ৩ হাজার ২০০ থেকে ৪ হাজার, সাদা গোলমরিচ ১ হাজার ৪০০, কালো গোলমরিচ ৯০০ থেকে ১ হাজার, লবঙ্গ ১ হাজার ৬০০ টাকার ওপরে, তেজপাতা ১৩০ থেকে ১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর দেশি শুকনা মরিচ মানভেদে ২৮০ থেকে ৩০০, ভারতের শুকনা মরিচ ৩৮০ থেকে ৪২০, আলুবোখারা ৯৫০, কাজুবাদাম ১ হাজার ২৫০ থেকে ১ হাজার ৩০০, কাঠবাদাম ১ হাজার ১০০ থেকে ১ হাজার ২০০, হলুদ ২৮০ থেকে ৩৫০, পাঁচফোড়ন ১৮০ থেকে ২০০ ও ধনিয়া ২২০ থেকে ২৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।

এদিকে বাজারে বাড়তি আদা, রসুন ও পেঁয়াজের দাম। কেজিতে ১০-২০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে প্রতি কেজি পেঁয়াজ খুচরায় বিক্রি হচ্ছে ৯০ টাকা। আর পাইকারিতে বিক্রি হচ্ছে ৭৫-৮০ টাকায়। এ ছাড়া কেজিতে ২০-৩০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে প্রতি কেজি দেশি রসুন ২৩০-২৪০, আমদানি করা রসুন বিক্রি হচ্ছে ২৬০ টাকায়। কেজিতে ২০-৪০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে আদা বিক্রি হচ্ছে ২৬০-২৮০ টাকায়।

রায়সাহেব বাজারে বাজার করতে আসা নাহিদ জানান, ঈদ, কোরবানি, পহেলা বৈশাখের মতো জাতীয় বা ধর্মীয় উৎসবে সব সময় চড়া থাকে নিত্যপণ্যের বাজার। ঝড়-বৃষ্টি, শীত-গরম সব কিছুতেই যেন নিত্যপণ্যের দাম বাড়ে। ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে সুযোগ খোঁজেন কীভাবে জিনিসপত্রের দাম বাড়ানো যায়। বাজার নিয়ন্ত্রণে সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তারা বড় বড় কথা বলেই দায় সারেন।

কারওয়ান বাজারে বাজার করতে আসা আরেক ক্রেতা মো. নাজিম বলেন, নিত্যপণ্যের বাজার আমাদের মতো মধ্যবিত্ত মানুষের নাগালের বাইরে চলে গেছে। কোনো পণ্যই ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে নেই। বাজারে ভোক্তাদের স্বস্তি দিতে সরকারকে কাজ করতে হবে।

এদিকে, বাজারের অধিকাংশ সবজিই এখন নাগালের বাইরে। সপ্তাহের ব্যবধানে বেড়েছে ১০-২০ টাকা পর্যন্ত। প্রতি কেজি বেগুন ৭০-৮০, শসা ৬০, করলা ৮০, পেঁপে ৪০-৫০, টমেটো ৫০-৬০, পটোল ৬০, গাজর ৬০, ঢ্যাঁড়স ৪০-৫০, ধুন্দল ৫০, বরবটি ৬০, চিচিঙ্গা ৪০, লতি ৬০-৮০, আলু ৬০, ঝিঙা ৬০ ও কাঁকরোল ৬০-৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতি পিস লাউ ৫০ ও চালকুমড়া ৪০-৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতি আঁটি লালশাক ১৫, পাটশাক ১০, পুঁইশাক ৩০, কলমিশাক ১৫ ও পালংশাক বিক্রি হচ্ছে ১৫ টাকায়। তবে সবচেয়ে বেশি দাম বেড়েছে কাঁচামরিচের। খুচরায় বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকা। আর পাইকারি পর্যায়ে প্রতি কেজি কাঁচামরিচ বিক্রি হচ্ছে ১৬০-১৮০ টাকা।

শ্যামবাজারের সবজি বিক্রেতা আমির হোসেন জানান, কোরবানির ঈদ উপলক্ষে পরিবহন সংকটের ফলে মরিচসহ অন্যান্য সবজি কম আসছে। পাশাপাশি বেড়েছে পরিবহন ভাড়াও। এতে সরবরাহ কমায় দাম চড়েছে।

দাম চড়েছে ডিম ও মাংসের বাজারেও। কেজিতে ১০-৩০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ১৯০-২০০ টাকা, দেশি মুরগি ৭০০-৭৫০, সাদা লেয়ার ২৯০ ও লাল লেয়ার বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ টাকায়। তবে ২০-৩০ টাকা পর্যন্ত কমেছে সোনালি মুরগির দাম। কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকায়। এ ছাড়া জাতভেদে প্রতি পিস হাঁস বিক্রি হচ্ছে ৬০০-৭০০ টাকায়। বাজারে প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৮০-৮০০ টাকায়। এ ছাড়া প্রতি কেজি খাসির মাংস ১ হাজার ৫০ টাকা থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা ও ছাগলের মাংস বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার টাকায়। দাম বেড়েছে ডিমেরও। মুরগির প্রতি ডজন লাল ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৬০, আর সাদা ডিম ১৫০ টাকায়। প্রতি ডজন হাঁসের ডিম ২০০ ও দেশি মুরগির ডিম বিক্রি হচ্ছে ২৪০ টাকায়।

স্বস্তির খবর নেই মাছের বাজারেও। প্রায় সব ধরনের মাছে কেজিতে দাম বেড়েছে ২০-৫০ টাকার মতো। প্রতি কেজি তেলাপিয়া ২০০-২৩০, চাষের পাঙাশ ২০০-২৪০ টাকা, চাষের শিং ৫৫০, চাষের মাগুর ৬৫০ ও চাষের কই বিক্রি হচ্ছে ৩০০-৩২০ টাকায়। আকারভেদে প্রতি কেজি রুই ৩৮০ থেকে ৪৫০ টাকা, কাতলা ৪০০ থেকে ৪৫০, কোরাল ৭০০, টেংরা ৬০০ থেকে ৭০০, বোয়াল ৭০০ থেকে ৮০০ ও আইড় মাছ ৮৫০ থেকে ৯০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

সৌদিগামী যাত্রীদের জন্য সুখবর

এমবাপ্পের একমাত্র গোলে রিয়ালের কষ্টার্জিত জয়

ম্যানসিটি ছাড়ছেন আর্জেন্টিনার ‘নতুন মেসি’

‘৫১ লাখ টাকার স্টেডিয়াম ১৪ কোটিতে করার অনুমোদন’, কী ব্যাখ্যা দিলেন সচিব

জনপ্রিয় ব্রিটিশ পত্রিকায় বাংলাদেশ নারী দলের প্রশংসা

ইউআরপি ও ডিএলআর মডিউল প্রস্তুত / মালয়েশিয়ায় শ্রমিক যাবে শূন্য অভিবাসন ব্যয়ে

রাশিয়া শক্তিশালী, এটা মেনে নিতেই হবে : ট্রাম্প

ময়মনসিংহ থেকে বাস চলাচল শুরু, ভাঙচুরের ঘটনায় কমিটি

আইপিএলে ভালো করলেও ভারত দলে জায়গা নিশ্চিত নয়

ফেব্রুয়ারির কত তারিখে রোজা শুরু হতে পারে 

১০

দুই শিক্ষককে প্রাণনাশের হুমকি প্রদানের ঘটনায় আহমাদুল্লাহর উদ্বেগ

১১

সরকারি কর্মচারীরা দাফনের জন্য পাবেন টাকা

১২

দেড় যুগেও নির্মাণ হয়নি জহির রায়হান মিলনায়তন

১৩

দুই সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা, দুই উপদেষ্টাকে স্মারকলিপি

১৪

৫ অভ্যাসে বার্ধক্যেও ভালো থাকবে হৎপিণ্ড

১৫

অনশন প্রত্যাহার করল বেরোবি শিক্ষার্থীরা

১৬

‘ভুল চিকিৎসায়’ একদিনে দুই শিশুর মৃত্যু

১৭

সরকারি কর্মচারীদের জন্য সুখবর

১৮

কাভার্ডভ্যানের চাপায় মা-মেয়ের মৃত্যু

১৯

মাস্ক পরে হাসপাতালে দীপু মনি

২০
X