সরকারি চাকরিতে কোটাপদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে চলমান আন্দোলনে স্থবির হয়ে পড়েছে রাজধানী ঢাকার জনজীবন। গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও মোড়গুলো অবরুদ্ধ থাকায় দিনভর ব্যাপক দুর্ভোগ পোহাতে হয় রাজধানীবাসীর। বিশেষ করে জীবিকার তাগিদে ঘর থেকে বের হওয়া মানুষদের জন্য সড়কই যেন হয়ে ওঠে অফিস। জরুরি প্রয়োজনে ঘর থেকে বের হওয়া লোকজনকে প্রচণ্ড গরমে রোদ মাথায় নিয়েই হাঁটতে হয়। শুধু ঢাকাই নয়, বিভিন্ন বিভাগীয় এবং জেলা শহরেও আন্দোলনে নেমেছেন চাকরিপ্রত্যাশীরা। আন্দোলনকারীরা রাজপথের পাশাপাশি রেললাইন অবরোধ করায় দেশের বিভিন্ন জেলার সঙ্গে ঢাকার রেল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। ফলে দেশের অন্যান্য জেলা থেকে রাজধানী কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।
গতকাল বুধবার সকাল সাড়ে ৯টা থেকেই ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচির আওতায় রাজধানীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে সমবেত হতে থাকেন আন্দোলনকারীরা। পৌনে ১০টার দিকে মহাখালীর আমতলী মোড় অবরুদ্ধ করেন আন্দোলনকারীরা। কিছু সময় পর সড়ক ভবনের সামনে ফ্লাইওভার প্রান্ত অবরোধ করেন।
এ ছাড়া সকাল থেকেই রামপুরা ব্রিজ, আগারগাঁও মোড়, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনের সড়ক, ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার, শাহবাগ, হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল মোড়, সায়েন্স ল্যাব, নীলক্ষেত মোড়, টিএসসি মোড়, মৎস্য ভবন এলাকা, ঢাকা মেডিকেল কলেজ এলাকায় মেয়র হানিফ ফ্লাইওভার প্রান্তসহ বিভিন্ন সড়ক ও মোড়ে অবস্থান নিয়ে অবরোধ গড়ে তোলেন আন্দোলনকারীরা। পাশাপাশি মহাখালীর আমতলীতে এবং কারওয়ান বাজার রেলগেটে অবস্থান নেন তারা। এতে দিনভর ঢাকার সঙ্গে সারা দেশের রেল যোগাযোগ বন্ধ ছিল। অন্যদিকে, ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, মহাখালী ফ্লাইওভার, মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারের ওঠানামার র্যাম্পে অবরোধ দেওয়ায় উড়াল সড়কেই আটকা পড়ে যানবাহন ও সেগুলোর ভেতরে থাকা যাত্রীরা।
সড়কের এমন বেহাল দশায় দিনভর ভোগান্তি পোহাতে হয় রাজধানীবাসীর। এ সময় সাধারণ মানুষকে দেখা যায় সরকার এবং আন্দোলনকারীÑউভয়ের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করতে। মহাখালীতে আটকা পড়েন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের বিপণন বিভাগের কর্মকর্তা তৌহিদুল ইসলাম পাভেল। তিনি বলেন, বাইক নিয়ে মার্কেট ভিজিটে বের হয়েছি। আমি বাইক রেখে হেঁটেও যেতে পারছি না। এদিকে অফিস থেকে ফোন দিচ্ছে, ক্লায়েন্টের সঙ্গে মিটিং করতেই হবে। কী করব বুঝতেছি না।
বনানী থেকে অফিস শেষে মোহাম্মদপুরে বাসায় ফেরার পথে রাস্তায় আটকা পড়েন আরেকটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ফাতেমাতুজ্জোহরা হিরা। কোনো গণপরিবহন না পেয়ে হতাশ হয়ে হাঁটা শুরু করেন। তিনি বলেন, সারাদিন অফিস করে শান্তিতে বাসায়ও যেতে পারছি না। সড়ক অবরুদ্ধ, তাই কোনো পরিবহন নেই। দেখি কোথাও গিয়ে রিকশায় বাকি পথ যাওয়া যায় কি না।
কারওয়ান বাজার মোড়ে অটোরিকশা ছাড়তে বাধ্য হন ব্যবসায়ী আমিন উদ্দিন; উদ্দেশ্য ছিল সচিবালয় যাওয়া।
এদিকে অবরোধের কারণে চরম বিপাকে পড়েন উড়াল সড়কগুলোতে ব্যক্তিগত গাড়িতে আটকে পড়া যাত্রীরা। মাহবুবুর রহমান নামের এক গাড়িচালক বলেন, গাড়ি রেখে কোথাও যেতে পারছি না। সাধারণ সড়ক হলে আশপাশের কোনো চায়ের দোকানে বিশ্রাম নিতে পারতাম। তিন ঘণ্টা হয়ে গেছে গরমের মধ্যে গাড়িতে বসে আছি।
দুর্ভোগে অতিষ্ঠ সাধারণ জনগণ এই সমস্যার দ্রুত সমাধান চান। ধানমন্ডির বাসিন্দা কাওসার হোসেন বলেন, তারা সর্বোচ্চ কোটা ৫ শতাংশ চাচ্ছে। সরকার তো এটা মেনে নিতে পারে। কয়েক বছর পরপরই এটা নিয়ে সমস্যা হচ্ছে। এর স্থায়ী সমাধান হোক। অন্যদিকে মিরপুরের বাসিন্দা ও গৃহিণী হালিমা ইয়াসমিন বলেন, আমরা সাধারণ মানুষ যে কত বিপদে পড়ছি, সেটা কেউ দেখল না। ছেলেমেয়েদের স্কুলে নিয়ে যেতে পারছি না। নিয়ে গেলে আনতে পারছি না। এই গরমে হাঁটতে হচ্ছে। আমরা না হয় কষ্ট করলাম, বাচ্চারা তো বোঝে না। যারা আন্দোলন করছেন, তাদের বিষয়টা দেখা উচিত।
এদিকে সড়ক অবরুদ্ধ থাকায় গতকাল বেশ চাপ পড়ে মেট্রোরেলে। এদিন মেট্রোরেল স্টেশনগুলোতে বিপুলসংখ্যক মানুষ ভিড় করেন। যাদের র্যাপিড পাস বা মেট্রো কার্ড নেই, তাদের দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট কাটতে দেখা যায়। আগারগাঁও, কারওয়ান বাজার এবং শাহবাগের মতো ব্যস্ত স্টেশনগুলোতে মানুষের লাইন স্টেশন পেরিয়ে সড়কে চলে যায়। বাড়তি মানুষের চাপ সামাল দিতে কয়েকটি স্টেশনের গেট বন্ধ করে দেওয়া হয়।