শিল্পের কাঁচামাল আমদানিতে নজরদারি বাড়াচ্ছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। সংস্থাটির কাছে সুনির্দিষ্ট তথ্য রয়েছে, সম্প্রতি কিছু আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান সক্ষমতার তুলনায় অনেক বেশি পরিমাণে শিল্পের কাঁচামাল বা এক্সেসরিজ আমদানি করছে। এর বিপরীতে পণ্য রপ্তানি করেছে অনেক কম।
অর্থাৎ এনবিআরের ধারণা, এই প্রক্রিয়ায় আন্ডার ইনভয়েস এবং ওভার ইনভয়েস হয়ে থাকতে পারে। এ প্রক্রিয়ায় অর্থ পাচার হচ্ছে কি না এবং যদি হয়ে থাকে তার প্রকৃত পরিমাণ কেমন, সেটি খতিয়ে দেখতেই নজরদারি বাড়ানো হচ্ছে। এনবিআরের এ-সংক্রান্ত সাম্প্রতিক এক বৈঠকের কার্যপত্রে এসব তথ্য উল্লেখ রয়েছে। এনবিআর সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, কাস্টমসের কেন্দ্রীয় সফটওয়্যার সিস্টেম এসাইকুডা ওয়ার্ল্ড ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমে (এমআইএস) তথ্য নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, ছোট ছোট প্রতিষ্ঠানের এফসিএল কনটেইনারের মাধ্যমে রপ্তানি করছে। এফসিএল হচ্ছে একটি প্রতিষ্ঠানের রপ্তানিকৃত ফুল কনটেইনার। এসব প্রতিষ্ঠানের পণ্য খোলাবাজারে বিক্রির ধারণা করা হলেও কৌশলে প্রতিষ্ঠানগুলো বিদেশে অর্থ পাচার করছে কি না, তা খতিয়ে দেখতে হবে। অর্থাৎ রপ্তানি করা পণ্যের অর্থ বাংলাদেশে আসছে কি না, তা খতিয়ে দেখার উদ্যোগ নিচ্ছে এনবিআর। কিছু কিছু রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান ব্যাক টু ব্যাক এলসির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ শিল্পের কাঁচামাল বা এক্সেসরিজ আমদানি করছে। এর বিপরীতে মাত্র ৩শ থেকে ৪শ কেজি পণ্য এফসিএল কনটেইনারের মাধ্যমে রপ্তানি করছে, যা অস্বাভাবিক বলেও প্রতীয়মান হয়েছে। তাই এসব অসাধু রপ্তানিকারকের জন্য রিস্ক প্রোফাইল তৈরির বিষয়েও উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম বন্ড কমিশনারেটের কাজ শুরু করেছে বলে বৈঠকে উঠে এসেছে।
এ বিষয়ে এনবিআরের কাস্টম: রপ্তানি ও বন্ডের দায়িত্বপ্রাপ্ত সদস্য হোসেন আহমদ বলেন, ব্যাক টু ব্যাক এলসির মাধ্যমে কিছু প্রতিষ্ঠান অস্বাভাবিকহারে শিল্পের কাঁচামাল বা এক্সেসরিজ আমদানি করছে। এর বিপরীতে এফসিএল কনটেইনারে করে মাত্র ৩শ থেকে ৪শ কেজি পণ্য রপ্তানি হচ্ছে; যা অস্বাভাবিক। তাই প্রতিষ্ঠানগুলো খোলাবাজারে পণ্য বিক্রি করছে নাকি রপ্তানির অর্থ বিদেশ প্রত্যাবাসিত হচ্ছে, তা খতিয়ে দেখতে হবে।
সূত্র আরও জানায়, এখন থেকে একটি লিংকআপ পদ্ধতির মাধ্যমে সমজাতীয় তথ্য উদ্ঘাটন করা হবে। এক্ষেত্রে একই আমদানিকারক, একই রপ্তানিকারক, একই রপ্তানি পণ্য, একই শিপিং এজেন্টের অন্যান্য পণ্য চালান এবং ঝুঁকিপূর্ণ গার্মেন্ট ও এক্সেসরিজ প্রকৃত তথ্য উদ্ঘাটন করা যেতে পারে। আর তথ্য বিশ্লেষণের মাধ্যমে সিস্টেম বেজ রিস্ক নির্ধারণ করা যেতে পারে বলেও বৈঠকে উঠে আসে। এসব অনিয়ম বন্ধে ইতোমধ্যে বন্ড কমিশনারেটগুলো রিস্ক এনালাইসিস মডেল পদ্ধতি অনুসরণ করে ঝুঁকিপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের তালিকা তৈরি করেছে। এ ছাড়া রপ্তানির ক্ষেত্রে বেশকিছু বিষয় ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করার জন্য কাস্টমস কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, রপ্তানিকারকের সেলস কন্টাক্টের সঙ্গে মাস্টার এলসি করা হয়েছে কি না, তা যাচাই করে দেখতে হবে। শিপিং বিল এবং বিল অব এক্সপোর্টে দেশ এবং পণ্যের নামে ভিন্নতা রয়েছে কি না, সেলস কন্টাক্ট এবং ইউডিতে ভিন্নতা আছে কি না, আমদানিকৃত পণ্য এবং প্রস্তুতকৃত পণ্যের অসামঞ্জ্যতা রয়েছে কি না, জেনারেল বন্ড, অডিট, আমদানি কিছুই না থাকা সত্ত্বেও বিন লক করা হয়নি—এমন প্রতিষ্ঠানকে চিহ্নিত করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
কার্যপত্র পর্যালোচনা করে আরও জানা যায়, এনবিআরের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে দুটি কমিটি গঠন করা হবে। এ ছাড়া অডিটবিহীন ও আমদানি-রপ্তানিবিহীন কোনো প্রতিষ্ঠান থাকলে সংশ্লিষ্ট কমিশনারেট বিন লক করবে বলেও নির্দেশনা দেওয়া হয় বৈঠকে।
মন্তব্য করুন