মাহমুদুল হাসান
প্রকাশ : ১৫ আগস্ট ২০২৪, ০৩:১৬ এএম
আপডেট : ১৫ আগস্ট ২০২৪, ১১:২১ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

দাঁড়ানো নিয়ে শঙ্কায় নিশাত

দাঁড়ানো নিয়ে শঙ্কায় নিশাত

বরগুনা জেলা স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্র নিশাত হোসেন। বাবা মনির হোসেন রাজধানীর মধ্য বাড্ডার হাজীবাড়ি মোড় এলাকার একটি বাসায় কেয়ারটেকারের চাকরি করেন। মা সুখী বেগম ও ছোট ভাই সিফাত হাসানকে নিয়ে তারা ওই ভবনেই থাকে। নিশাত বরগুনায় দাদা-দাদির সঙ্গে থাকে। কোটা সংস্কার আন্দোলন উত্তাল জনস্রোতে পরিণত হলে ১৬ জুলাই নিশাতের স্কুল বন্ধ হয়ে যায়। সন্তানের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে ওইদিন নিশাতকে ঢাকায় আনা হয়। এরই মধ্যে রাজধানীর নতুন বাজার, বাড্ডা, আফতাবনগর ও রামপুরা অগ্নিগর্ভে পরিণত হয়। সুখী বেগম সন্তানকে সবসময় চোখে চোখে রাখার চেষ্টাও করেন। কিন্তু দুরন্ত নিশাত বাবা-মায়ের চোখ ফাঁকি দিয়ে লুকিয়ে আন্দোলনের কর্মসূচিতে অংশ নেয়। এক পর্যায়ে গুলিবিদ্ধ হয়। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন নিশাত বলে, অস্ত্রোপচারের পর নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারব কি না, জানি না। তবু কষ্ট নেই বেঁচে তো আছি, কত মানুষকে ওরা মেরেই ফেলেছে।

নিশাত জানান, ৫ আগস্ট সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছাড়লে ছাত্র-জনতা গণভবন অভিমুখে যাত্রা করে। তাদের সঙ্গে নিশাত ও তার বন্ধুরাও যোগ দেয়। এক পর্যায়ে বাড্ডা এলাকার সংক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা ভাটারা থানা ঘেরাও করেন। তখন পুলিশ বিক্ষুব্ধদের ওপর গুলি চালায়। নিশাতের হাঁটুতে গুলি লাগে। দুই বন্ধু নিশাতকে দ্রুত বাড্ডার বেসরকারি এএমজেড হাসপাতালে নিয়ে যায়। আশঙ্কাজনক অবস্থায় নিশাতকে ঢাকা মেডিকলে কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে দেন এএমজেড হাসপাতালের চিকিৎসকরা। ততক্ষণে এই খবর নিশাতের পরিবারের কাছেও পৌঁছে যায়। নিশাতের বাবা মনির হোসেন রিকশায় করে ছেলেকে নিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যাত্রা করে। তারপর থেকে নিশাতের ঠিকানা ঢামেক হাসপাতালের ১০১ নম্বর ওয়ার্ডে। গতকাল বুধবার সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, নিশাতের মতো ওই ওয়ার্ডের ২৯ শয্যা ও বারান্দায় থাকা অধিকাংশ আহতরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে গুলিবিদ্ধ হন। কেউ হাতে, কেউ পায়ে ক্ষত নিয়ে কাতরাচ্ছেন। হাসপাতালটিতে এখনো প্রায় ১৭৫ জন ভর্তি রয়েছেন।

নিশাতের বাবা মনির হোসেন বলেন, আন্দোলনকারীদের ওপর যারা গুলি চালিয়েছে, তারা বর্বর। ছোট ছোট বাচ্চাদের সাহস দেখে আমি মুগ্ধ। আমার সন্তানের রক্তের বিনিময়ে হলেও নতুন বাংলাদেশ পেয়েছি। অপরাধীদের বিচার চাই। দুর্নীতি, শোষণ আর বৈষম্যমুক্ত একটা দেশ চাই। নয়তো আমার সন্তানের এই রক্ত বৃথা যাবে। তিনি বলেন, নিশাতের হাঁটুর জোড়ায় গুলি লেগেছে। গুলি এখনো বের করা সম্ভব হয়নি। চিকিৎসকরা ঝুঁকিপূর্ণ মনে করছেন। অপারেশন হলে কোনোদিন এই পায়ে দাঁড়াতে পারবে কি না, তা-ও নিশ্চিত নয়। তবু আমরা গর্বিত। আমার সন্তানের রক্তের বিনিময় স্বৈরাচারমুক্ত দেশ পেয়েছি।

নিশাত বলেন, গুলিবিদ্ধ হয়ে আমি হাসপাতালে কাতরাচ্ছি। তবু আমার কষ্ট নেই, আমি তো বেঁচে আছি। আমাদের সঙ্গে আন্দোলন করা কত মানুষকে ওরা মেরে ফেলেছে। যখন বন্ধুরা পাশে বসে গল্প করে, অভয় দেয় তখন সব কষ্ট ভুলে যাই।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে আহত হয়ে যারা ঢামেক হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন, তাদের তথ্য দিতে অপারগতা প্রকাশ করছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। হাসপাতাল পরিচালক গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতেও অপারগতা প্রকাশ করেন। এক কর্মকর্তা কালবেলাকে বলেন, আন্দোলনের শুরু থেকে এ পর্যন্ত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ২ হাজার ১৬৮ জন আহত চিকিৎসা নিয়েছেন। তাদের মধ্যে অন্তত প্রায় ৯০০ জন ভর্তি ছিলেন। অধিকাংশকে ছুটি দেওয়া হলেও এখন পর্যন্ত ১৭৫ জন চিকিৎসাধীন আছেন।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ফের রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ভূমিকম্প

ডেঙ্গুতে ২৪ ঘণ্টায় আরও ৩ মৃত্যু

রেকর্ডে মোড়া দুই দিনের অ্যাশেজ নাটক

সেন্টমার্টিনে জেলের জালে ধরা পড়ল ৩২ কেজির পোপা মাছ

শিক্ষার মান উন্নয়নে তারেক রহমানের পরিকল্পনা রয়েছে : শ্রাবণ

মাহিকে রিজেক্ট করেছিলেন জায়েদ খান

ঢাকা-রাজশাহী রেললাইন অবরোধ

ফ্যাসিস্ট বিদায়ের পরও নতুন ষড়যন্ত্র চলছে : ফারুক

ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকে গাজা প্রসঙ্গ, কী জবাব দিলেন মামদানি

‘দেশের ৪০ শতাংশ মাছের চাহিদা পূরণ করছে রাজশাহী’

১০

অতিরিক্ত ঝাল খাবার খাওয়ার আছে লুকানো স্বাস্থ্যঝুঁকি

১১

সীমান্তে ভারতীয় নাগরিক আটক

১২

চট্টগ্রাম বন্দরের সব প্রবেশমুখে অবরোধের ডাক

১৩

মঞ্চ থেকে পড়ে আইসিইউতে ‘মিস জ্যামাইকা’

১৪

বাইপাইল নয়, আজকের ভূমিকম্পও নরসিংদীতে

১৫

প্রশাসনের অনেকে বিশেষ দলের পক্ষে কাজ করছে : এটিএম আজহার

১৬

জাতীয় নির্বাচন ও গণভোটের প্রস্তুতি নিতে ইসিকে সরকারের চিঠি

১৭

বিয়ে করলেন অভিনেত্রী মম

১৮

প্রথম রূপায়ণ আর্মড ফোর্সেস গলফ টুর্নামেন্টের উদ্বোধন

১৯

অসহায়দের জন্য বিনামূল্যে গাড়ি সেবা চালু করলেন সেই রায়হান

২০
X