রাজকুমার নন্দী
প্রকাশ : ২৮ আগস্ট ২০২৪, ০২:২৯ এএম
আপডেট : ২৮ আগস্ট ২০২৪, ০৮:১৬ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

গণতন্ত্র-সুশাসনে বিএনপি পাশে চায় কূটনীতিকদের

পরিবর্তিত পরিস্থিতি
গণতন্ত্র-সুশাসনে বিএনপি পাশে চায় কূটনীতিকদের

পরিবর্তিত রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশে গণতন্ত্র ও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় কূটনীতিকদেরও পাশে চায় বিএনপি। দলটির অভিযোগ, জোরজবরদস্তি করে ক্ষমতায় থাকতে গিয়ে আওয়ামী লীগ সরকার দেশে বিচার বিভাগ, নির্বাহী বিভাগ, নির্বাচন কমিশনসহ (ইসি) বিভিন্ন গণতান্ত্রিক-সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে গেছে। বিএনপি মনে করে, এসব প্রতিষ্ঠানে প্রয়োজনীয় সংস্কারের মধ্য দিয়ে সুশাসন প্রতিষ্ঠার যাত্রা শুরু হতে হবে। একটি অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে অন্তর্বর্তী সরকার এই কাজ আরম্ভ করতে যাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে কূটনীতিকদেরও সহায়তা চায় বিএনপি। কারণ বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বাংলাদেশে গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ আন্তর্জাতিক বিশ্ব সোচ্চার ছিল। সম্প্রতি বিএনপির সঙ্গে বৈঠকে ইউরোপের কয়েকটি দেশ পাচারকৃত অর্থ ফেরাতে সহযোগিতার আশ্বাসও দিয়েছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অনেকে মনে করেন, এটি দেশের ভঙ্গুর অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে সহায়ক হবে, যা সুশাসন প্রতিষ্ঠা করবে।

বিএনপির অভিযোগ, দেশে দীর্ঘমেয়াদে গণতন্ত্র ছিল না, সুশাসন ছিল না। এমন প্রেক্ষাপটে জনআকাঙ্ক্ষা ছিল, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে একটি অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচনের মধ্য দিয়ে দেশে একটি নির্বাচিত সরকার গঠিত হবে, যারা সুশাসন প্রতিষ্ঠায় কাজ করবে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অনেকের অভিমত, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানেরও এটি ছিল মূল আকাঙ্ক্ষা।

বিএনপির চাওয়া, অন্তর্বর্তী সরকার রাষ্ট্র কাঠামোর প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে দ্রুততম সময়ে একটি অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচনের মধ্য দিয়ে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করবে। নির্বাচিত পরবর্তী সরকার সেই সংস্কার কাজকে এগিয়ে নেবে। কারণ, রাষ্ট্র কাঠামোর সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া। আর নির্বাচিত পার্লামেন্টের মাধ্যমে রাষ্ট্র সংস্কারের বিকল্প নেই। বিএনপি আগেই রাষ্ট্র সংস্কারের কথা জানিয়েছিল। গণতান্ত্রিক রূপান্তরের লক্ষ্যে গত বছরের জুলাইয়ে রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের ৩১ দফা রূপরেখাও ঘোষণা করেছিল। দলটি তখন জানিয়েছিল, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনে জয়লাভের পর ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকার হটানোর আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী রাজনৈতিক দলগুলোর সমন্বয়ে একটি ‘জনকল্যাণমূলক জাতীয় ঐকমত্যের সরকার’ প্রতিষ্ঠা করা হবে। ওই সরকারই রাষ্ট্র রূপান্তরমূলক সংস্কার কার্যক্রম গ্রহণ করবে।

বিএনপি জানিয়েছে, তারা অন্তর্বর্তী সরকারের পাশে থাকবে। এ জন্য নির্বাচন অনুষ্ঠানে কোনো সময়সীমা বেঁধে দেয়নি। তবে দলটি এও বলেছে, একটি যৌক্তিক সময়ের মধ্যে নির্বাচন করতে হবে। তাই প্রধান উপদেষ্টাকে নির্বাচনের পরিবেশ তৈরিতে রাষ্ট্র কাঠামোর প্রয়োজনীয় সংস্কার সাধনে অতি দ্রুত একটি রোডম্যাপ প্রকাশের দাবি জানিয়েছে দলটি।

নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের দাবিতে কয়েক বছর ধরে আন্দোলন-সংগ্রাম করে বিএনপি। রাজপথে আন্দোলনের পাশাপাশি তখন কূটনৈতিক তৎপরতাও জোরদার করেছিল দলটি। বিএনপির অভিযোগ ছিল, আওয়ামী লীগ সরকার জোরজবরদস্তি করে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকতে গিয়ে বিএনপির নেতাকর্মীদের ওপর হামলা-মামলা, গুম-খুন, নির্যাতন-নিপীড়নের পথ বেছে নেয়। বিএনপিকে নিশ্চিহ্ন করাই ছিল তাদের লক্ষ্য। এসব বিষয় তারা নানা সময় বিদেশি কূটনীতিকদেরও অবহিত করেন। জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ গণতান্ত্রিক বিশ্বও তখন বাংলাদেশে রাজনৈতিক সংকট, বিরোধী দলের ওপর নির্যাতন-নিপীড়ন, গুম-খুনের প্রতিবাদ এবং গণতন্ত্র ও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় সোচ্চার ছিল।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সম্প্রতি জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ), যুক্তরাজ্য, চীনসহ কয়েকটি দেশের কূটনীতিকের সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক করে বিএনপি। গত ১৩ আগস্ট জাতিসংঘের ঢাকা কার্যালয়ে সংস্থার আবাসিক সমন্বয়ক গোয়েন লুইসের সঙ্গে বৈঠক করে দলটি। এরপর ১৯ আগস্ট ঢাকায় নিযুক্ত ইইউর ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত বার্নড স্পেনিয়ের, ২১ আগস্ট চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন, ২২ আগস্ট সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত রেটো রেঙ্গলি, ২৩ আগস্ট পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত সৈয়দ আহমদ মারুফ এবং গত সোমবার ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারাহ কুকের সঙ্গে বৈঠক করেন বিএনপি নেতারা। গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এসব বৈঠক হয়।

জানা গেছে, পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে এসব বৈঠকে দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠা, অর্থনীতি পুনরুদ্ধারসহ পারস্পরিক স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। দেশের ভঙ্গুর অর্থনীতি কীভাবে আবার ভালো অবস্থায় ফিরিয়ে আনা যায়, পাচারকৃত অর্থ কীভাবে দেশে ফেরত আনা যায়, সে বিষয়েও ফলপ্রসূ আলোচনা হয়। পাচারকৃত অর্থ বাংলাদেশে ফেরত আনতে সার্বিক সহযোগিতার কথা জানান ইউরোপীয় ইউনিয়ন, সুইজারল্যান্ড ও যুক্তরাজ্যের রাষ্ট্রদূতরা। জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কের সঙ্গে বৈঠকে আগামী নির্বাচনসহ সার্বিক বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। বৈঠকে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা সরকারের আমলে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের আন্তর্জাতিক তদন্তে সহযোগিতা চেয়ে জাতিসংঘকে চিঠি দেয় বিএনপি। দলটি মনে করে, দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হতে হলে এসব হত্যাকাণ্ডের একটি নিরপেক্ষ আন্তর্জাতিক মানের স্বচ্ছ তদন্ত হওয়া দরকার, যেটা সুশাসন প্রতিষ্ঠায় সহায়ক হবে।

জানতে চাইলে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও চেয়ারপারসনস ফরেন অ্যাফেয়ার্স অ্যাডভাইজরি কমিটির সদস্য নিতাই রায় চৌধুরী কালবেলাকে বলেন, ‘আন্তর্জাতিক কূটনীতির ক্ষেত্রে বিএনপির পলিসি হচ্ছে, আমরা সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব চাই। বিদেশি কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠকগুলোতে দেশে যে প্রেক্ষাপটে সম্প্রতি ছাত্র-জনতার বিপ্লবী গণঅভ্যুত্থান ঘটল, সেই প্রেক্ষাপট আমরা তুলে ধরি। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের দুর্নীতি ও দলীয়করণের কারণে নির্বাচন কমিশন, দুদকসহ দেশের গণতান্ত্রিক-সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংস হয়ে গেছে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বাংলাদেশকে নতুন করে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে আমরা সবারই সহযোগিতা চাই।’

বিএনপির সঙ্গে অনুষ্ঠিত কূটনীতিকদের এসব বৈঠকের অনেকগুলোতে উপস্থিত ছিলেন দলের নেত্রী শামা ওবায়েদ। বৈঠক প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি কালবেলাকে বলেন, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বাংলাদেশকে ‘নতুন বাংলাদেশ’ বলা হচ্ছে। পরিবর্তিত বাংলাদেশে একটি অন্তর্বর্তী সরকার এসেছে। নতুন বাংলাদেশে নতুন নতুন চ্যালেঞ্জও আছে। এমন প্রেক্ষাপটে কূটনীতিকরা একাধিকবার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকা বৃহৎ রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপির সঙ্গে আলোচনা করতে আসেন। তারা জানতে চান, আমরা কীভাবে সামনের দিকে এগোতে চাই। সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সঙ্গে আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য, অর্থনীতিসহ পারস্পরিক সম্পর্ক আরও কীভাবে উন্নত করা যায়, সেটা নিয়েও তাদের সঙ্গে আলোচনা হয়।

শামা ওবায়েদ বলেন, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের দুর্নীতি ও দলীয়করণের কারণে ইসি, বিচার বিভাগ, দুদকসহ গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংস হয়ে গেছে। সেগুলো (সংস্কার) রিফর্ম করতে হবে। এসব প্রতিষ্ঠান স্বচ্ছভাবে না চললে কূটনীতিকদের সঙ্গে আমাদের যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক, ব্যবসা-বাণিজ্য, সেটাও তো ব্যাহত হয়। সে জন্য নিজেদের স্বার্থে কূটনীতিকরাও এসব প্রতিষ্ঠানে সংস্কার চান। বন্ধুরাষ্ট্র হিসেবে তারা বরাবরই বাংলাদেশে মানবাধিকার, গণতন্ত্র ও সুশাসন চেয়েছেন।

তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনসহ সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় আমরাও মনে করি, একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ তৈরিতে গণতান্ত্রিক-সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রয়োজনীয় রি-ফর্ম লাগবে, যেগুলো আমরা বিভিন্ন সময় তুলে ধরেছি। আমরা চাই, অন্তর্বর্তী সরকার এসব প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে দ্রুততম সময়ে একটি অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচনের মধ্য দিয়ে নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করবে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

বিচারককে ঘুষ দেওয়ার অভিযোগ জামায়াত নেতার বিরুদ্ধে

২২ আগস্ট : আজকের নামাজের সময়সূচি

স্বাস্থ্য পরামর্শ / রান্নায় সরিষার তেলে ঝুঁকি ও অসংক্রামক রোগ

ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে আবারও দুর্ঘটনা, নিহত আরও ৩

ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের পক্ষে ৫৮ শতাংশ মার্কিনি : রয়টার্স

স্পেনের বাইরে লা লিগার ম্যাচ খেলার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত জানালেন ফুটবলাররা

দুবাইয়ে যাওয়ার ৪ মাস পরই ৩ কোটির লটারি জিতলেন প্রবাসী

এনজো ফার্নান্দেজের মুখে রিয়াল মাদ্রিদের নাম, বাড়ছে গুঞ্জন

কেশবপুরে নারী সমাবেশ/ / ধানের শীষের পক্ষে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার প্রতিশ্রুতি

সাভারে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের দাওয়াতি মাসের শুভ উদ্বোধন

১০

তারেক রহমান শিগগির দেশে ফিরবেন, নির্বাচনের পর প্রধানমন্ত্রীও হবেন : এ্যানি

১১

দলবদলের বাজারে প্রিমিয়ার লিগের ক্লাবগুলোর রেকর্ড ভাঙা খরচ

১২

ধর্মগড় সীমান্তে বিজিবির হাতে আটক চার বাংলাদেশি

১৩

হাসিনাকে ফেরত পাঠানো নিয়ে মোদিকে ওয়েইসির প্রশ্ন

১৪

জাকসুতে প্যানেল দ্বন্দ্ব, পদত্যাগ করে বাগছাস নেতার মিষ্টি বিতরণ

১৫

সৈয়দপুর বিমানবন্দরে যাত্রীসেবা আন্তর্জাতিক মানের করতে চাই : বেবিচক চেয়ারম্যান

১৬

‘আ. লীগ বিদ্যুৎ খাতে চুরির লাইসেন্স দিয়েছিল’

১৭

আ.লীগ নেত্রী রুনু গ্রেপ্তার

১৮

ইসির ইউটিউব চ্যানেল চালু, মিলবে যেসব তথ্য

১৯

শিশু ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগ, গ্রেপ্তারের দাবি শিক্ষার্থী

২০
X