বন্ধ থাকা ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম ‘সিরাজগঞ্জ শপে’ এখনো আড়াই হাজারের বেশি গ্রাহকের টাকা আটকে আছে। তিন বছর পেরিয়ে গেলেও টাকা ফিরে পেতে দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন ভুক্তভোগী গ্রাহকরা। তাদের পাওনা টাকার পরিমাণ আট কোটিরও বেশি। ‘সিরাজগঞ্জ শপের’ প্রতিষ্ঠাতা জুয়েল রানার দাবি, পেমেন্ট গেটওয়েতে আটকে থাকা অর্থ ছাড় হলেই গ্রাহকদের পাওনা পরিশোধ সম্ভব।
২০১৮ সালের ১৪ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে সিরাজগঞ্জ শপ। ২০২১ সালের ৩১ আগস্ট বন্ধের আগ পর্যন্ত প্রায় ৬ লাখ নিবন্ধিত গ্রাহক ছিল প্ল্যাটফর্মটির। সেসময় ই-কমার্স খাতের টালমাটাল অবস্থায় পড়ে বন্ধ হয়ে যায় সিরাজগঞ্জ শপও। বিভিন্ন সময় পণ্যের জন্য টাকা দিয়েও যারা পাননি, তাদের অর্থ তখন আটকে যায়। এমন গ্রাহকের সংখ্যা ২ হাজার ৬২২ জন। গ্রাহক এবং মার্চেন্ট মিলে প্ল্যাটফর্মটির কাছে তাদের পাওনা প্রায় ১১ কোটি ৭৩ লাখ ৬২৩ টাকা। এর মধ্যে শুধু গ্রাহকের পাওনা ৮ কোটিরও বেশি।
সাগর আহমেদ নামে সিরাজগঞ্জ শপের এক গ্রাহক বলেন, ‘২০২১ সালের ৩০ আগস্ট প্রায় ৫৩ হাজার টাকার পণ্য অর্ডার করি। এখন পর্যন্ত এই টাকা ফিরে পাইনি।’ মল্লিক সাইয়াম নামে আরেক গ্রাহক বলেন, ‘সিরাজগঞ্জ শপে দুটি মোটরসাইকেল অর্ডার করে এখনো বাইক বা টাকা কিছুই ফেরত পাইনি।’
এ বিষয়ে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে অভিযোগ দিয়েও সমাধান পাচ্ছেন না গ্রাহকরা। অধিদপ্তরে দায়েরকৃত এসব অভিযোগ সমাধানের প্রক্রিয়ায় রয়েছে বলে কালবেলাকে জানিয়েছেন এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। অবশ্য এসব অর্থ পেমেন্ট গেটওয়েতে আটকে থাকায় গ্রাহকদের দিতে পারছেন না বলে দাবি করেন জুয়েল রানা। আত্মগোপনে থাকা জুয়েল রানা গতকাল শনিবার হোয়াটসঅ্যাপে কালবেলাকে বলেন, “প্রায় ১১ কোটি টাকা নগদেই আটকে আছে, যার প্রায় ৮ কোটি টাকা গ্রাহকদের। বারবার তাদের জানানোর পরও এই অর্থ ছাড় করা হচ্ছে না। দেশের বাইরে থেকেও অনেক গ্রাহককে কিছু টাকা করে ফেরত দিয়েছি। কেউ ২ লাখ টাকা পেত, তাকে ১ লাখ দিয়েছি। এভাবে দিয়ে দিয়ে তাদের সঙ্গে মধ্যস্থতা করে ‘এনওসি’ নিয়েছি। কিন্তু পেমেন্ট গেটওয়েতে আটকে থাকায় সবার টাকা দিতে পারছি না।”
সম্প্রতি নগদের দায়িত্বে আসা নতুন প্রশাসক ও তার সহায়ক দলের কাছে বিষয়টি জানিয়েছেন উল্লেখ করে জুয়েল রানা বলেন, ‘গত বৃহস্পতিবার তাদের সঙ্গে এ বিষয়ে যোগাযোগ হয়েছে। তারা এর সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন।’
তদন্তের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে উল্লেখ করে নগদের প্রশাসক বদিউজ্জামান দিদার কালবেলাকে বলেন, ‘সিরাজগঞ্জ শপের বিষয়টি জেনেছি। তারা তাদের বক্তব্যও দিয়েছে। সংশ্লিষ্ট তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে সঠিক চিত্র তুলে ধরব এবং সেভাবে সিদ্ধান্ত নেব।’