ডেঙ্গু আক্রান্ত প্রসূতি শান্তা সূত্রধর। সোমবার দুপুরে অস্ত্রোপচারে কন্যা সন্তানের মা হন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে। মেয়ের মুখ দেখে খুশিতে উচ্ছ্বসিতও হয়েছিলেন। দুপুরের উচ্ছ্বাস রাতেই রূপ নেয় বিষাদে। সন্তান জন্মের আট ঘণ্টার মধ্যে না ফেরার দেশে পারি জমান শান্তা।
চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয় জানায়, ডেঙ্গুতে মারা যাওয়া শান্তা নগরের লাভ লেন এলাকার বাসিন্দা। গত ৭ সেপ্টেম্বর শান্তাকে চমেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ডেঙ্গু আক্রান্ত হওয়ায় শান্তাকে নিয়ে চিকিৎসক এবং স্বজন সবাই দুশ্চিন্তায় ছিলেন। সোমবার দুপুরে সন্তান জন্মদানের পরপরই তাকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। সেখানেই রাতে তার মৃত্যু হয়।
এদিকে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে গতকাল মঙ্গলবার পাঁচজনের মৃত্যু হয়, যা এ বছর এক দিনে সর্বোচ্চ। এর আগে সোমবার চলতি মৌসুমে এক দিনে সবচেয়ে বেশি ৬১৫ জনের শরীরে রোগটি শনাক্ত হয়। চলতি মাসের গত দশ দিনে ডেঙ্গুতে ১৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময়ে মশাবাহিত রোগটিতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে অন্তত ৪ হাজার। গতকাল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমারজেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো ডেঙ্গুবিষয়ক নিয়মিত প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, গতকাল ডেঙ্গুতে মৃত্যু হওয়া পাঁচজনের মধ্যে চট্টগ্রাম বিভাগের দুজন, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটিতে দুজন এবং খুলনা বিভাগে একজন। এ নিয়ে চলতি বছরে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ১০২ জনের মৃত্যু হয়েছে। মাসের হিসাবে দেখা যায়, সেপ্টেম্বরের গত ১০ দিনে ডেঙ্গুতে ১৯ জনের মৃত্যু হয়। এর আগে আগস্টে ২৭ জন, জুলাইয়ে ১২, জুনে ৮, মে মাসে ১২, এপ্রিলে দুজন, মার্চে পাঁচজন, ফেব্রুয়ারিতে তিনজন এবং জানুয়ারিতে ১৪ জনের মৃত্যু হয়। বিভাগীয় হিসাবে দেখা যায়, চলতি বছরের শুরু থেকে এ পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মৃত্যু ১০২ জনের মধ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ৫৮ জন। চট্টগ্রাম বিভাগে ১৪, বরিশাল বিভাগে ১০, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে ৯, খুলনা বিভাগে পাঁচ, ঢাকা বিভাগে তিন, ময়মনসিংহ বিভাগে এক এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশেনে একজনের মৃত্যু হয়। মৃত ১০২ জনের মধ্যে ৫২ শতাংশ নারী এবং ৪৮ শতাংশ পুরুষ।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এ সময় হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন আরও ৫৩৪ জন। আক্রান্তদের মধ্যে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এলাকার ১৯৯ জন রয়েছেন। এ ছাড়া ঢাকা বিভাগে ৯০, চট্টগ্রাম বিভাগে ১১৩, খুলনায় ৫৯, ময়মনসিংহে ১৭ ও বরিশালে ৩৭ রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এতে চলতি বছরে শুরু থেকে গতকাল পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৬ হাজার ৮১৯ জনে। বিভাগীয় হিসাবে দেখা যায়, চলতি বছরের শুরু থেকে এ পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্তদের মধ্যে ৪ হাজার ৪১৩ জন চট্টগ্রামের, ৪ হাজার ৩২২ জন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ২ হাজার ৮৪৫ জন, বরিশাল বিভাগে ১ হাজার ৭৩১ জন, ঢাকা বিভাগে এক হাজার ৬৬৪ জন, খুলনা বিভাগের ১ হাজার ২১০ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ৩২৯, রাজশাহী বিভাগে ১৯৬, রংপুর বিভাগে ৬১, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে ৪৫ এবং গাজীপুর সিটি করপোরেশনে তিনজন। চলতি মৌসুমে আক্রান্তদের মধ্যে ৬১ দশমিক ৭ শতাংশ পুরুষ এবং ৩৮ দশমিক ৩ শতাংশ নারী।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, ডেঙ্গু থেকে সুস্থ হয়ে গতকাল ছাড়পত্র নিয়েছেন ৫০৭ জন। এ নিয়ে চলতি বছরের শুরু থেকে গতকাল পর্যন্ত হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র নিয়েছেন ১৫ হাজার ৫৩ জন। এ বছর ছাড়পত্র নেওয়া রোগীদের মধ্যে ৫২ শতাংশ নারী আর ৪৮ শতাংশ পুরুষ।