কানপুর নগর পুলিশ স্টেশন ধরে গ্রিন পার্ক স্টেডিয়ামে আসতে গেলে ভিআইপি রোডের পাশে তাকালেই চোখে পড়বে বিশাল এক ঐতিহাসিক সমাধি। কয়েকশ বছরের পুরোনো সব স্থাপনা দ্বারা নির্মিত। প্রথম দেখাতেই মনে হবে এটি পূর্ব কোনো ইতিহাসকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে। ভেতরে প্রবেশের পর আরও স্পষ্ট হওয়া যায়। হ্যাঁ, ভারত উপমহাদেশে পর্তুগিজদের আগমনের ইতিহাস এখানেই সমাধিত আছে। এখানে পর্তুগিজ ও ইউরোপিয়ান সেনা অফিসার, ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সিভিল সার্জন, মার্চেন্ট, সাধারণ কর্মচারীসহ মোট ১ হাজার ২০০টির মতো সমাধি আছে। যার বেশিরভাগই শিশু-কিশোর ও বৃদ্ধ নারীদের জীবনের বর্ণনা দেয়।
সমাধিতে প্রবেশের মুখেই দেখা গেল বেশ কয়েকজন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তাকে। অনুমতি নিয়ে ভেতরে প্রবেশ করে একের পর এক ইতিহাসে চোখ বুলানো গেল। ভারত উপমহাদেশে পর্তুগিজদের আগমন থেকে শুরু করে তাদের মৃত্যুরও বেশ নিদর্শন এখানে সংরক্ষিত আছে। সমাধিস্থলটিতে ঘুরে বেশকিছু ইতিহাস জানা গেছে। বিশেষ করে এই সমাধিস্থলের উৎপত্তি হয়েছিল লেফটেন্যান্ট কর্নেল জন স্টেফেনের মৃত্যুর পর। প্রথমবার তাকে এখানে সমাধিত করা হয়।
এরপর ধীরে ধীরে সমাধিত করা হয়েছিল উপমহাদেশের শাসন নেওয়া ইউরোপিয়ানদের ছেলেমেয়ে ও স্ত্রীদের। কানপুরের এই পর্তুগিজ সমাধিতে আছেন ২৯১ জন ইউরোপিয়ান মিলিটারি অফিসারও। তাদের মধ্যে লেফটেন্যান্ট জশ পেন নামের এক সেনা কর্মকর্তার সমাধিস্থলে গিয়ে জানা যায়, ১৮০৬ সালে পোর্ট অব বুদিকে প্রতিপক্ষের হামলায় তার মৃত্যু হয়েছিল। ১৭৮৯ সালে মারা যাওয়া লেফটেন্যান্ট পার্কসের সমাধিও এই স্থানে দেখা গেছে। তারা সবাই ১৭৬০ সালের দিকে এই উপমহাদেশে এসেছিলেন বলে ইতিহাস থেকে জানা গেছে। কানপুরকেন্দ্রিক বাণিজ্য শুরু করার পর তারা এখানে দীর্ঘদিন ধরে স্থায়ী বসবাস করেছিলেন। এই সমাধিতে অনেকের মৃত্যুর কারণও বর্ণনা করা আছে। যেমন মিস লুসি ম্যারি ব্রুস নামে এক নারীর মৃত্যুর কারণ বলা আছে, দীর্ঘদিন ধরেই অসুস্থ থাকার পর তার মৃত্যু হয়েছিল। যদিও বছরের পর বছর ধরে পড়ে থাকা সমাধিস্থলে অনেকের মৃত্যুর বর্ণনা এখন আর পাওয়া যায় না। তারপরও এখানে গেলেই চোখের সামনে ভেসে আসবে শতবছরের পুরোনো ইতিহাসের এক টুকরো ছবি।