ফরহাদ সুমন, চট্টগ্রাম
প্রকাশ : ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ০২:৫৯ এএম
আপডেট : ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:১২ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

নাবিকের অসতর্কতায় জাহাজে আগুন

চট্টগ্রাম বন্দর কমিটির প্রতিবেদন
নাবিকের অসতর্কতায় জাহাজে আগুন
নাবিকের অসতর্কতায় জাহাজে আগুন

চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে তেল খালাসের সময় গত ৫ অক্টোবর জাহাজ ‘বাংলার সৌরভ’ এবং তার আগে ৩০ সেপ্টেম্বর ডলফিন জেটিতে ‘বাংলার জ্যোতি’ আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ৩৭ বছরের পুরোনো জাহাজ দুটি বহির্নোঙরে বড় জাহাজ থেকে তেল খালাসের কাজে ব্যবহার করত বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন (বিএসসি)। ১৯৮৮ সালে তৈরি হওয়া বাংলার জ্যোতি ও বাংলার সৌরভ জাহাজের প্রতিটির ওজন ৩ হাজার ৭৮৭ টন। তেলবাহী জাহাজ দুটিতে আগুন লাগার ঘটনার পর শুরু হয় নানা জল্পনা-কল্পনা।

উদ্বেগ দেখা দেয় বন্দরের নিরাপত্তা নিয়ে। বিএসসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক কমোডর মাহমুদুল মালেক প্রথমে আশঙ্কা করেছিলেন, দেশের জ্বালানি নিরাপত্তাকে ঝুঁকিতে ফেলতেই জাহাজে এই নাশকতা চালানো হয়।

বন্দরের অন্যান্য স্টেকহোল্ডার ও স্থানীয় ব্যবসায়ীরাও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তাদের ভাষ্য ছিল, বঙ্গোপসাগরের মোহনা থেকে চট্টগ্রাম বন্দরের পর্যন্ত সুসজ্জিত ফায়ার স্টেশন নেই। এতে বড় ধরনের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ভয়াবহ বিপর্যয়ের ঝুঁকি বেড়েছে। কর্ণফুলী, রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা (ইপিজেড) ও বন্দর ফায়ার স্টেশনের দমকলকর্মীদের এই গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় অগ্নিকাণ্ড মোকাবিলা করতে হয়। এ ছাড়া চট্টগ্রামে জ্বালানি তেল পরিবহন ও মজুতের নিরাপত্তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তারা। এ ছাড়া গণআন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বিভিন্ন খাতে বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছে। তৈরি পোশাক শিল্পের মতো শিল্প খাতগুলোতে শ্রমিক অসন্তোষ হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা মনে করেন, এই অস্থিরতাগুলো পরিকল্পিতভাবে সংঘটিত হচ্ছে।

এরই মধ্যে গত ১২ অক্টোবর মধ্যরাতে বঙ্গোপসাগরের কক্সবাজার কুতুবদিয়া অংশে আমদানি করা এলপিজি বহনকারী বিদেশি মাদার ভেসেল এমভি নিকোলাস ও বাংলাদেশি মালিকানাধীন লাইটার জাহাজ সুফিয়ায় আগুন লাগে। নৌবাহিনীর পাঁচটি জাহাজের দুদিন সময় লেগেছিল এ আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে। প্রাথমিকভাবে দুটি জাহাজে আগুনের কারণ হিসেবেও নাশকতা বলে সন্দেহ করা হলেও চট্টগ্রাম বন্দরের গঠন করা তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে উঠে এসেছে ভিন্ন তথ্য। বিএসসির দুই জাহাজে আগুন লাগার ঘটনা নাশকতা নয় উল্লেখ করে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন তারা। বলা হচ্ছে, নাবিক ও বিএসসির দায়িত্বরত ব্যক্তিদের অদক্ষতা, অসতর্কতা ও অবহেলার কারণে জাহাজে আগুন ধরেছে। প্রতিবেদনে আগুন লাগার তিনটি কারণ উল্লেখ করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, দুর্ঘটনার প্রধান কারণ ছিল ‘ক্যাপটেইন নিকোলাস’ জাহাজের নাবিকদের অসতর্কতা ও অবহেলা। সবার আগে এ জাহাজেই আগুন লেগেছিল। গভীর সাগরের কুতুবদিয়ায় ‘এলপিজি সুফিয়া’ ও ‘ক্যাপটেইন নিকোলাস’ পাশাপাশি একটি আরেকটির সঙ্গে রশি দিয়ে বাঁধা ছিল। সামনের অংশে পাঁচটি ও পেছনের অংশে পাঁচটি রশি ছিল। হোস পাইপ দিয়ে নিকোলাস থেকে সুফিয়ায় এলপিজি স্থানান্তর করা হচ্ছিল। কিন্তু রাত ১২টা ১০ মিনিটে সামনের অংশের পাঁচটির মধ্যে একটি রশি প্রথমে ছিঁড়ে যায়। পরবর্তী ২০ মিনিটে বাকি চারটি রশি ছিঁড়ে যায়। এতে করে জাহাজ দুটি দূরে সরে যেতে থাকে। টান পড়ে হোস পাইপে। একপর্যায়ে হোস পাইপ ছিঁড়ে গিয়ে গ্যাস লিকেজ হতে শুরু করে। লিকেজ হওয়া এলপিজি গ্যাসে রূপান্তরিত হতে আরও প্রায় পাঁচ মিনিট সময় নেয়। ১২টা ২৫ মিনিটে আগুনের সূত্রপাত হয়। তখন পেছনের দিকের পাঁচটি রশিতে আগুন লেগে সুফিয়ায় ছড়িয়ে যায়। আর হোস পাইপ থেকে আগুন ধরে যায় নিকোলাসে। সুফিয়ার নাবিকরা নিকোলাসের ক্যাপ্টেনকে দফায় দফায় জানানোর চেষ্টা করলেও তার সাড়া মেলেনি। ফলে আগুনের মাত্রা বেড়ে যায়। পরে নিকোলাসের আগুন নিজস্ব অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা দিয়ে নেভানো গেলেও সুফিয়া জাহাজে ৩৬ ঘণ্টা পর্যন্ত আগুন জ্বলে। তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য (হারবার) কমোডর এম ফজলার। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন, বন্দরের উপ-সংরক্ষক ফরিদুল আলম, নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড, ডিজিএফআই, এনএসআই, নৌবাহিনী, ফায়ার সার্ভিসের প্রতিনিধি ও কন্ট্রোলার অব মেরিটাইম এডুকেশনের ক্যাপ্টেন সাঈদ আহমেদ।

তদন্ত কমিটি সূত্রে জানা যায়, কমিটির আহ্বায়ক চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য (হারবার) কমোডর এম ফজলার অন্য সদস্যদের নিয়ে কুতুবদিয়ায় পুড়ে যাওয়ায় এলপিজি সোফিয়া জাহাজটি তিন দফা পরিদর্শন করেছেন। গত ১২ অক্টোবর মধ্যরাতে কুতুবদিয়ায় ক্যাপটেইন নিকোলাস থেকে এলপিজি সোফিয়ায় এলপিজি (তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস) স্থানান্তরের সময় এ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।

তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন বিষয়ে বন্দর কর্তৃপক্ষের মুখপাত্র ও সচিব ওমর ফারুক গণমাধ্যমকে বলেন, অগ্নিকাণ্ডের কারণ অনুসন্ধানে মানবসৃষ্ট কোনো আলামত পাওয়া যায়নি। এখানে জাহাজে কর্তব্যরতদের অসতর্কতা ছিল বলে প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। যদি তারা রাত্রিকালীন ডিউটিতে আরও সজাগ ও সতর্ক থাকতেন, তাহলে এ ধরনের দুর্ঘটনা কিছুটা হলেও এড়ানো যেত।

উল্লেখ্য, তেলবাহী দুই জাহাজে পরপর আগুন লাগার পর বিএসসি বিদেশ থেকে একটি জাহাজ ভাড়া (চার্টার) করেছে। চার্টার করা এ জাহাজ দিয়ে আপাতত ইস্টার্ন রিফাইনারিতে ক্রুড তেল পরিবহন করবে বিএসসি। অন্যদিকে আগুনে পুড়লেও রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন দুই জাহাজ বাংলার জ্যোতি ও বাংলার সৌরভ থেকে লাভবান হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন (বিএসসি)। ইন্স্যুরেন্স থেকে পাওয়া ক্ষতিপূরণ এবং ওপেন টেন্ডারে জাহাজ দুটি শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ডে বিক্রি করে এ অর্থ পাবে প্রতিষ্ঠানটি। ৮ নভেম্বর মার্চেন্ট মেরিনার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ক্যাপ্টেন আনাম চৌধুরী গণমাধ্যমকে এসব তথ্য জানান।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

সীমান্ত দিয়ে ২৪ বাংলাদেশিকে পুশইন

মেয়াদ শেষেও কাজ হয়নি অর্ধেক

সুপ্রিম কোর্টের নিরাপত্তা জোরদার 

ইরানে ভয়ংকর হামলা করতে প্রস্তুত ইসরায়েল

কাকরাইলে বিএনপির নেতা-কর্মীদের রাতভর অবস্থান

নেতানিয়াহুর কারণে ডুবতে বসছে ইসরায়েল

‘৬ হাজার টাকার চাইল পাইতাছো, ২০০ টাকা দিতে কি সমস্যা?’

কাতারের বিলাসবহুল বিমান লুফে নিলেন ট্রাম্প

ইশরাকের শপথ ইস্যুতে আদালতের আদেশ আজ

ভারতীয় গরু প্রবেশের শঙ্কায় দিন কাটছে খামারিদের

১০

গাজার পথে হাজারো ত্রাণের ট্রাক আটকে রেখেছে ইসরায়েল

১১

আজ কেমন থাকবে ঢাকার আবহাওয়া 

১২

ঈদুল আজহা : ট্রেনের ১ জুনের টিকিট বিক্রি আজ

১৩

গাজার ত্রাণকে ‘সমুদ্রে এক ফোঁটা পানি’ বলছে জাতিসংঘ

১৪

টিভিতে আজকের খেলা

১৫

গাজায় খাবার ঢুকছে না, দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে ফিলিস্তিনিরা

১৬

সাতসকালে ঢাকার বাতাস ‘অস্বাস্থ্যকর’

১৭

আজ যেসব এলাকায় ৪ ঘণ্টা গ্যাস থাকবে না 

১৮

মনিরামপুরে ভূমি অফিসে দুদকের অভিযান

১৯

দুপুরের মধ্যে ৫ জেলায় ঝড়ের শঙ্কা

২০
X