দুই ফিশিং জাহাজ নিয়ে সাগরে মাছ ধরতে গিয়েছিলেন ৭৮ বাংলাদেশি জেলে-নাবিক। কিন্তু জাহাজ দুটি ভারতীয় জলসীমায় মাছ ধরছিল জানিয়ে জাহাজ দুটিসহ জেলে-নাবিকদের ধরে নিয়ে যায় দেশটির কোস্টগার্ড। এ ঘটনার ১৬ দিনেও ফেরানো যায়নি জেলে-নাবিকদের। কবে ফিরবেন তা-ও সুনির্দিষ্ট করে বলতে পারছেন না সংশ্লিষ্টরা। সেই জেলে-নাবিকদের নিয়ে এখন দুশ্চিন্তায় দিন কাটছে স্বজনদের। খবর জানতে প্রতিদিনই ধরনা দিচ্ছেন ফিশিং জাহাজের অফিসে। ভারত থেকে দ্রুত তাদের ফিরিয়ে আনার দাবি জানিয়েছেন তারা।
জাহাজ মালিকরা জানিয়েছেন, ভারতীয় কোস্টগার্ডের হাতে আটক জেলে-নাবিকরা সুস্থ আছেন। খাবারের সমস্যা নেই। তাদের সঙ্গে প্রতিদিনই কথা হচ্ছে। দেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়টি নির্ভর করছে সরকারের ওপর।
অন্যদিকে সামুদ্রিক মৎস্য অধিদপ্তরের পরিচালক আবদুস সাত্তার জানান, বঙ্গোপসাগরের খুলনা সুন্দরবন এলাকায় মাছ ধরার সময় ভারতীয় কোস্টগার্ডের ধরে নিয়ে যাওয়া দুই জাহাজসহ ৭৮ নাবিক-জেলেদের ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে। বিষয়টি সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে মাছ ধরার জাহাজসহ নাবিক-জেলেদের নিরাপদে নিয়ে আসার চেষ্টা করছি। কবে আনা যাবে তা নির্দিষ্ট করে কিছুই বলা যাচ্ছে না। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের কারাগারে বন্দি ৯৫ ভারতীয় জেলের মুক্তির বিনিময়ে বাংলাদেশিদের ছেড়ে দেওয়ার শর্ত দিয়েছে ভারত। এই জেলেরা বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছেন।
সামুদ্রিক মৎস্য দপ্তর জানায়, গত ১৪ অক্টোবর থেকে ৩ নভেম্বরের মধ্যে ৯৫ ভারতীয় জেলেকে আটক করা হয়েছে। মূলত তাদের ছাড়িয়ে নিতেই ভারতীয় কোস্টগার্ড বাংলাদেশি নাবিক-জেলেদের ধরে নিয়ে গেছে।
ট্রলারের মালিকদের তথ্য অনুযায়ী, আটক জাহাজগুলো হলো এফভি মেঘনা-৫ ও এফভি লায়লা-২। জাহাজ দুটিতে নাবিক ও জেলে মিলে ছিলেন ৭৮ জন। এর মধ্যে এফভি মেঘনা-৫ জাহাজে ছিলেন ৩৭ নাবিক ও জেলে। ছিল ১০০ টন মাছ। ৪১ নাবিক ও জেলে বহরকারী এফভি লায়লা-২ জাহাজে ছিল ৮ টন মাছ।
এফ ভি মেঘনা-৫ জাহাজে আছেন মো. রিয়াজ (২৬)। তার বাবা আমির হোসেন জানান, গত ২৪ নভেম্বর মাছ ধরতে সাগরে যায় রিয়াজ। এরপর থেকে তার কোনো খবর পাওয়া যাচ্ছে না। রিয়াজের জন্য মা সাফিয়া খাতুন ও স্ত্রী আমেনা খাতুনের দিন কাটছে দুশ্চিন্তায়। ১৪ মাস বয়সী মেয়ে আছে রিয়াজের। অন্য নাবিক-জেলেদের স্বজনরাও আছেন দুশ্চিন্তায়।
এস আর শিপিংয়ের সিএফও মিন্টু সাহা বলেন, বিষয়টি নিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ডিজিসহ সংশ্লিষ্ট সব দপ্তরে যোগাযোগ করা হচ্ছে। অন্য একটি দেশ জাহাজগুলো নিয়ে গেছে, তাই বিষয়টি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের। তারা জানিয়েছেন, জেলে-নাবিকদের দেশে ফেরাতে আরও কয়েকদিন লাগবে। এখানে আমাদের করার কিছু নেই। তবে আটক জাহাজের নাবিক-জেলেরা ভালো আছেন। খাবারের সমস্যা নেই। লায়লা-২ জাহাজের সবজি শেষ হয়ে গিয়েছিল। ভারতের কোস্টগার্ড সবজি এনে দিয়েছে। বাকি খাবার জাহাজে মজুত আছে। সেগুলো দিয়ে আরও কয়েকদিন চলবে।
মেঘনা-৫ ফিশিং জাহাজের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান সিঅ্যান্ডএ অ্যাগ্রোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ আবদুল ওয়াহেদও বললেন একই কথা। তিনি জানান, এফ ভি মেঘনা-৫ ফিশিং জাহাজ ২৪ নভেম্বর সাগরে যায়। ১৪ ডিসেম্বর ফেরার কথা ছিল। কিন্তু ৯ ডিসেম্বর জাহাজটিকে ধরে নিয়ে গেছে ভারতীয় কোস্টগার্ড। জাহাজ দুটি ভারতের ওড়িশার প্যারাদ্বীপ নামক এলাকায় নোঙর করেছে বলে জানতে পেরেছি।