দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে নাভিশ্বাস উঠেছে সাধারণ মানুষের। লাগামহীনভাবে বেড়েই চলেছে সব ধরনের নিত্যপণ্যের দাম। এর প্রভাব পড়েছে শিশুখাদ্যেও। অনেকটা নীরবেই চলতি বছর বাজারে শিশুখাদ্যের দাম বেড়েছে প্রায় ৩০ শতাংশ। গত ৬ মাসে ৪০০ গ্রামের টিনজাত দুধের দাম ২০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। নান, সেরেলাক, বায়োমিল, প্রাইমাসহ পরিচিত ব্র্যান্ডগুলোর দাম প্যাকেটপ্রতি ১০০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। এর পরও এসব ব্র্যান্ডের দুধ চাহিদা অনুযায়ী কিনতে পাওয়া যাচ্ছে না বলে অভিযোগ করছেন অভিভাবকরা। তারা বলছেন, যেভাবে শিশুখাদ্যের দাম বাড়ছে তাতে সংসারের বাজেট কাটছাঁট করতে হচ্ছে। বিক্রেতারাও বলছেন, অন্য পণ্যের মতো কিছুদিন ধরে শিশুখাদ্যের দাম বাড়ছে। তবে মূলত এলসি জটিলতায় খাদ্যের জোগান কমেছে বলে দাবি ব্যবসায়ীদের। আমদানিকারকদের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, যা বাড়ার আগে বেড়ে গেছে। এ মুহূর্তে দাম বাড়েনি।
বাজার ঘুরে জানা যায়, বিভিন্ন কোম্পানির শিশুখাদ্য বাজারে আছে। এর মধ্যে বহুজাতিক কোম্পানি নেসলের পণ্য যেমন আছে, তেমনি আছে নিউট্রিসিয়াসহ অন্যান্য কোম্পানির শিশুখাদ্যও। শিশুখাদ্যের বাজারে নেসলের বহুল প্রচলিত পণ্য নিডো গুঁড়ো দুধ। ৩৫০ গ্রাম ওজনের নিডোর প্যাকেটের দাম আগে ছিল ৪৫০ টাকা। এখন তা বেড়ে হয়েছে ৪৮০ টাকা। শিশুখাদ্যের আরও দুটি পরিচিত ব্র্যান্ড হলো বেবিকেয়ার ও বেবিল্যাক। দুটি পণ্যেরই দাম কিছুটা বেড়েছে। ৭৫০ টাকার বেবিকেয়ার (১, ২ ও ৩) দুধ ৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। একইভাবে বেবিল্যাক ১, ২ ও ৩ দুধের দাম ৭৫০ টাকা থেকে বেড়ে ৮০০ টাকা হয়েছে। অন্যদিকে আবুল খায়ের গ্রুপের সরবরাহ করা দুধ মাদার স্মাইল প্রাইমা ১ ও ২ দুধের দাম ৭০০ টাকা থেকে বেড়ে ৮০০ টাকা, ৫৫০ টাকার প্রাইমা ৬০০ টাকা এবং ৪০০ টাকার গ্রোআপ ৫০০ টাকা করা হয়েছে।
যান্ত্রিক শহর বন্দরনগরী চট্টগ্রামে কয়েক কোটি মানুষের বসবাস। নতুন দিনের স্বপ্নে এই ব্যস্ত নগরীতেই ঘর বেঁধেছেন তৌফিক ও ঐশী দম্পতি। ঘর আলো করে আছে দুই সন্তান। আয়ের হিসাবে মোটামুটি সচ্ছল হলেও বর্তমানে দুই সন্তানের খরচ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন তারা। ঐশী বলেন, গত কয়েক মাসে কয়েক দফায় বেড়েছে শিশুখাদ্যের মূল্য। কিন্তু দুই সন্তানের পুষ্টি চাহিদা মেটাতে বাধ্য হয়েই উচ্চমূল্যে কিনতে হচ্ছে এসব খাদ্য। কারণ নানা সীমাবদ্ধতার কারণে চাইলেও স্বাভাবিক খাবারে অভ্যস্ত করা যাচ্ছে না ছয় মাস থেকে ২ বছরের শিশুদের।
আয়ের তুলনায় ব্যয়ের অসামঞ্জস্যতায় হিমশিম খাওয়া তৌফিক জানান, ক্রমেই বাড়ছে দুশ্চিন্তা। শিশুখাদ্যের জন্য এখন বন্ধ করেছেন সাপ্তাহিক বিনোদন ব্যয়। কারণ নিজেদের খাবারসহ বিভিন্ন খাত থেকে একটি বড় অংশ ব্যয় করতে হচ্ছে শিশুদের পুষ্টি নিশ্চিত করতে। অক্সিজেন এলাকার মর্কা ফার্মেসির মালিক রহমান করিম বলেন, এক বছর আগে যে গুঁড়া দুধের প্যাকেটের দাম ৫৯০-৬০০ টাকা ছিল, তা এখন ৭৫০ টাকা পর্যন্ত হয়েছে। এভাবে নিত্যপণ্যের মতো শিশুদের খাবারের দামও বেড়েছে।
দামের ব্যাপারে পাহাড়তলীর বাসিন্দা হক ফার্মেসির স্বত্বাধিকারী এস এম ফয়সাল বলেন, ‘বর্তমানে ৪০০ গ্রাম টিনজাত বায়োমিল দুধ ৮১০ টাকা, ৪০০ গ্রামের টিনজাত ল্যাকটোজেন ৮২০ টাকা এবং ৪০০ গ্রাম টিনজাত নান শিশু দুধ ১ হাজার ১০০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। আমাদের লাভ খুব সামান্য, যা করার কোম্পানি করে।’ একই বাজারের ব্রাহ্মণবাড়িয়া স্টোরের রাজু আহমেদ বলেন, ‘ছয় মাসের ব্যবধানে প্রতি কৌটায় ১৫০-২০০ টাকা বেড়েছে। নেসলের ৪০০ গ্রাম কৌটাজাত দুধ ১ হাজার ১০০ টাকা বিক্রি করা হচ্ছে।
চট্টগ্রামের খাদ্য ও পুষ্টি বিশেষজ্ঞ হাসিনা আক্তার লিপি জানান, কর্তৃপক্ষকে শিশুখাদ্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে উদ্যোগ নিতে হবে। তা না হলে পুষ্টি পরিস্থিতির ওপর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব পড়বে। ডিম একটা ফার্স্ট ক্লাস প্রোটিন, যা বাচ্চাদের প্রয়োজনীয় পুষ্টি জোগাতে পারে। কিন্তু সেই ডিমের দাম এখন অনেক বেশি। দুধ বাচ্চাদের একটি প্রয়োজনীয় খাবার। বাচ্চার ক্যালসিয়াম থেকে শুরু করে অন্য অনেক মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট পূরণ করে দুধ। এর অভাবে বাচ্চার শারীরিক বৃদ্ধি হলেও মানসিক উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হবে। বাচ্চা বড় হলেও ঠিকমতো কাজ করতে পারবে না, পড়াশোনায় পিছিয়ে পড়বে।