প্রদীপ মোহন্ত, বগুড়া ও আবু আব্দুল্লাহ প্রিন্স, দুপচাঁচিয়া
প্রকাশ : ১১ জানুয়ারি ২০২৫, ০৩:১৮ এএম
আপডেট : ১১ জানুয়ারি ২০২৫, ০৭:৫০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
শতবছরের ঐতিহ্য

এক গ্রামেই ৬ কোটির কুমড়োবড়ি বিক্রি

এক গ্রামেই ৬ কোটির কুমড়োবড়ি বিক্রি

শীত এলেই খাবারের প্লেটে জনপ্রিয় আইটেম কুমড়োবড়ি। সারা দেশে তো বটেই, উত্তরাঞ্চলে এর চাহিদা অনেক। তাই শীতের আমেজে উত্তরের প্রতিটি ঘরে ঘরে চলে কুমড়োবড়ি বানানোর ধুম। নিজেদের খাওয়ার জন্য এটি বানানো হলেও বাণিজ্যিকভাবে কুমড়োবড়ি এখন তুঙ্গে। বগুড়ার দুপচাঁচিয়া উপজেলার সাবলা এলাকাজুড়ে বড় পরিসরে চলে কুমড়োবড়ি বানানোর মহাযজ্ঞ। মহল্লার প্রতিটি পরিবার সেই বড়ি বিক্রি করে মাসে আয় করেন প্রায় ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা। সে হিসাবে ওই মহল্লায় শীতের মৌসুমে প্রায় ৫-৬ কোটি টাকার কুমড়োবড়ি বিক্রি হয়। তাদের দেখে এখন আশপাশের অনেক মানুষ কুমড়োবড়ি তৈরির প্রচেষ্টা করছেন।

মাষকলাই বা মাষের ডাল থেকে তৈরি হয় এই সুস্বাদু খাবারটি। বছরজুড়ে তা সংরক্ষণ করে রাখেন গৃহিণীরা। দেশব্যাপী কুমড়োবড়ির চাহিদা ব্যাপক হওয়ায় প্রতিদিন বাড়ি বাড়ি গিয়ে পাইকাররা কিনে নিয়ে যাচ্ছেন সেগুলো।

তালোড়া পৌরসভার সাবলা মহল্লার (হিন্দুপাড়া) প্রায় দেড় শতাধিক হিন্দু ধর্মাবলম্বীর পরিবার শতবছরের ঐতিহ্য ধরে রেখে কুমড়োবড়ি তৈরির এ পেশা চালিয়ে যাচ্ছেন। সাবলা ছাড়াও উপজেলার দুপচাঁচিয়া সদরের লক্ষ্মীতলা, কালীতলা, জিয়ানগর ইউনিয়নের বাঁকপাল হিন্দুপাড়া, তালোড়া ইউনিয়নের কইল, পোড়াঘাটাসহ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় কমবেশি এ কুমড়োবড়ি তৈরি হয়ে থাকে।

সাবলার গৃহবধূ শোভা রানী মোহন্ত, উপলা রানী ও রিমা মোহন্ত জানান, কুয়াশাভেজা শীতের সকালে মাষের ডালের সঙ্গে পরিপক্ক কুমড়োর রস মিশিয়ে এই বড়ি তৈরি করা হতো এ কারণেই এর নাম হয়েছে কুমড়োবড়ি। প্রথমে মাষকলাই যাঁতায় মাড়ানোর পর ঝেড়ে নিতে হয়। এরপর পানিতে ভেজানো হয় খোসা ছাড়াতে। ভেজা ডালের খোসা ছড়িয়ে নিয়ে এর সঙ্গে জিরা, কালো এলাচ, কালোজিরা দিয়ে পাটায় খুব ভালো করে বেটে নিতে হয়। মন্ডের মতো নরম করতে সেটি ফেটিয়ে নিয়ে পাতলা কাপড়ের ওপর গোলাকৃতির বড়ি তৈরি করা হয়। এটি রোদের মধ্যে বানিয়ে তিন-চার দিন কড়া রোদে শুকানোর পর খাবার উপযোগী হয়।

ঐতিহ্যবাহী এ কুমড়োবড়ির খ্যাতির কারণে সাবলা থেকে বগুড়া সদর, রংপুর, দিনাজপুর, লালমনিরহাট, গাইবান্ধা, নওগাঁ, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার পাইকাররা কিনে নিয়ে যান।

জানা গেছে, সাবলা মহল্লার একটি পরিবার গড়ে প্রতিদিন ৮ থেকে ১০ কেজি কুমড়োবড়ি তৈরি করে থাকে। এতে একটি পরিবার মাসে ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকার কুমড়োবড়ি বিক্রি করে। সে হিসাবে মহল্লার শতাধিক পরিবার যে কুমড়োবড়ি তৈরি করে, তার আনুমানিক মূল্য প্রায় ১ কোটি টাকা। কার্তিক থেকে ফাল্গুন পর্যন্ত মহল্লার লোকজন প্রায় ৫-৬ কোটি টাকার কুমড়োবড়ি বিক্রি করেন।

সাবলার ধীরেন চন্দ্র শীল (৬৫) বলেন, বাপ-দাদারা এ পেশায় নিয়োজিত ছিলেন। গ্রামের অধিকাংশ মানুষেরই ভিটেবাড়ি ছাড়া তেমন জমিজমা নেই। শীত মৌসুমে বিক্রি বেশি হয় বলে আজও আমরা কুমড়োবড়ি তৈরির ঐতিহ্য ধরে রেখেছি। গ্রামের হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রায় প্রতিটি পরিবার এ পেশায় নিয়োজিত। উপকরণের দাম বেড়ে যাওয়ায় হাটবাজারে কুমড়োবড়ি বিক্রি করতে দরকষাকষি করতে হচ্ছে। গত বছর মাষকলাইয়ের ডাল কেজি ১৪০ টাকা দরে কিনেছিলাম। এ বছর ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা কেজি কিনতে হচ্ছে। অন্য উপকরণের দামও বেড়ে গেছে।

তিনি বলেন, গত বছর সাধারণ কুমড়োবড়ি ১৫০ টাকা এবং ভালো মানের কুমড়োবড়ি ৩০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। এবার সাধারণ কুমড়োবড়ি ১৭০-১৮০ টাকা ও ভালো মানেরটা ৪০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

রেখা রানী শীল (৪০) বলেন, আমরা নারীরা মধ্যরাত থেকে কুমড়োবড়ি তৈরির উপকরণ নিয়ে বিভিন্ন প্রক্রিয়া সেরে পরিবারের অন্য সদস্যরা মিলে চাটাইয়ে কুমড়োবড়ির তৈরি করে তা রোদে শুকাতে দিই। অনেক কষ্ট করতে হয়।

মনোরঞ্জন মোহন্ত বলেন, ৩৫ বছর ধরে এ পেশায় জড়িত। তবে এ পেশায় সরকারি কিংবা বেসরকারিভাবে স্বল্প সুদে ঋণসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা পেলে আমাদের তৈরি কুমড়োবড়ি বিদেশেও পাঠানো সম্ভব।

বগুড়া শহরের পাইকার আকবর হোসেন জানান, অন্য কোথাও একই গ্রামের শতাধিক পরিবার কুমড়োবড়ি তৈরি করে না। শীতের মৌসুমে সাবলার মানুষের বড়ি তৈরিই মূল পেশা। সেই বড়ি কিনে উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করি।

সাবেক পৌর কাউন্সিলর এমরান আলী রিপু বলেন, ওই মহল্লার দু-একজন ছাড়া সবাই অসচ্ছল। কুমড়োবড়ির বিষয়ে তারা আমার কাছে সহযোগিতা চাইলে সাধ্যমতো চেষ্টা করব।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

২৬ নভেম্বর : আজকের নামাজের সময়সূচি

কড়াইল বস্তির আগুনে দেড় হাজার ঘর পুড়েছে : ফায়ার সার্ভিস

হাতিয়ায় যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক গ্রেপ্তার

বিএনপি নেতা বদরুজ্জামান মিন্টু চিরনিদ্রায় শায়িত

ঢাকা-১৩ আসনে ধানের শীষের সমর্থনে যুবদলের গণমিছিল

নতুন জোটের ঘোষণা দিল এনসিপি

কড়াইল বস্তিতে আগুন, তারেক রহমানের সমবেদনা

কড়াইল বস্তিতে আগুনের ঘটনায় প্রধান উপদেষ্টার উদ্বেগ ও সমবেদনা 

গণভোট অধ্যাদেশ জারি করে গেজেট প্রকাশ

জেসিআই ঢাকা ইউনাইটেডের ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলেন মাসউদ

১০

কড়াইল বস্তির আগুন নিয়ন্ত্রণে

১১

চীনা দূতাবাস কর্মকর্তার সঙ্গে চৌদ্দগ্রাম জামায়াত নেতাদের মতবিনিময়

১২

নুরুদ্দিন আহম্মেদ অপুর সঙ্গে সেলফি তুলতে মুখিয়ে যুবসমাজ

১৩

অগ্রণী ব্যাংকের লকারে শেখ হাসিনার ৮৩২ ভরি স্বর্ণ

১৪

শুভর বুকে ঐশী, প্রেম নাকি সিনেমার প্রচারণা?

১৫

৭০৮ সরকারি কলেজকে চার ক্যাটাগরিতে ভাগ

১৬

ইউএস বাংলার সাময়িকীর কনটেন্ট তৈরি করবে অ্যানেক্স কমিউনিকেশনস

১৭

সাদিয়া আয়মানের সমুদ্র বিলাশ

১৮

পৌরসভার পরিত্যক্ত ভবনে মিলল নারীর মরদেহ 

১৯

কড়াইলের আগুন নিয়ন্ত্রণে না আসার কারণ জানাল ফায়ার সার্ভিস

২০
X