দুটি অনলাইন জুয়ার সাইটের মাধ্যমে দেশ থেকে পাচার হয়েছে অন্তত ৫০ কোটি টাকা। বেট উইনার ও বেট ভিসা নামে সাইট দুটির চার এজেন্টেকে গ্রেপ্তারের পর টাকা পাচারের এ তথ্য পেয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
সংস্থাটি জানিয়েছে, সাইট দুটি পরিচালিত হয় রাশিয়া থেকে। এই দুটি সাইটের মাধ্যমে যে কেউ চাইলে বাজি ধরতে পারে। আর টাকা পাঠাতে হয় অনলাইন ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে, যা গ্রহণ করে দেশের এজেন্টরা। জুয়াড়িদের কাছ থেকে টাকাগুলো নেওয়ার পর ক্রিপ্টোকারেন্সিতে কনভার্ট করে বিদেশে পাচার করা হয়।
গ্রেপ্তার চারজনের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যে সিআইডির সাইবার ইন্টেলিজেন্স অ্যান্ড রিস্ক ম্যানেজমেন্ট বিভাগ জানিয়েছে, গত ছয় মাসে দুই জুয়ার সাইটের মাধ্যমে ৫০ কোটির বেশি টাকা তারা পাচার করেছে। দেশে এ ধরনের আরও ১৮৫টির মতো অনলাইন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে টাকা পাচার হচ্ছে।
গত ১৪ আগস্ট রাজধানীর তেজগাঁও, বংশাল, লালবাগ ও মিরপুরে অভিযান চালিয়ে দুই জুয়ার সাইটের চার এজেন্টকে গ্রেপ্তার করে সিআইডির সাইবার পুলিশ। তারা হলেন বেট উইনারের মো. আরিফুল ইসলাম (২৫), মো. হারুন অর রশিদ (৩৭) ও ইমরান হোসাইন (২৯) এবং বেট ভিসার মো. আনোয়ার হোসেন (৩২)। চারজনের কাছ থেকে ১৩টি বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মোবাইল ফোন, মোবাইলের সঙ্গে যুক্ত ১৮টি সিম, এজেন্ট সিমগুলোতে থাকা ৭ লাখ ৬৭ হাজার ৪৭৬ টাকা ও ১ লাখ ৪২ হাজার ৮৯০ টাকা উদ্ধার করা হয়। গত মঙ্গলবার তাদের বিরুদ্ধে পল্টন থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করা হয়। সিআইডি সাইবার বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, সাইট দুটির সুপার অ্যাডমিন রাশিয়া থেকে সার্কি কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করে। আর দেশে এবং দেশের বাইরে থেকে টেলিগ্রামের মাধ্যমে লোকাল এজেন্টদের সঙ্গে যুক্ত থাকে দায়িত্বপ্রাপ্ত কান্ট্রি ম্যানেজার। সুপার অ্যাডমিনের নির্দেশনা কান্ট্রি ম্যানেজাররা টেলিগ্রাম গ্রুপের মাধ্যমে এজেন্টদের কাছে পৌঁছে দেন।
কান্ট্রি ম্যানেজার ও এজেন্টরা পাচারের কৌশল হিসেবে জুয়াড়িদের কাছ থেকে সরাসরি টাকা নেয় না। সেজন্য আলাদা একটি লেয়ার ব্যবহার করে থাকে। এই লেয়ারে বিকাশ, নগদের মতো মোবাইল ব্যাংকিং প্ল্যাটফর্মের এজেন্টদের ব্যবহার করে। মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস (এমএফএস) এজেন্ট দোকানদারকে টাকা লেনদেনের দায়িত্ব দেয়। এ ছাড়া কিছু স্টাফের মাধ্যমে ১৪-১৫টি এজেন্ট সিম ব্যবহার করে চক্রটি ঢাকার তেজগাঁও, পুরান ঢাকা এলাকা ও মিরপুরে বসে এই জুয়ার কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। জুয়াড়িদের কাছ থেকে পাওয়া টাকার একটা অংশ কমিশন হিসেবে পেতেন এজেন্টরা।
সিআইডির তদন্ত সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, বেট ভিসা সাইটের বাংলাদেশের ম্যানেজার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন ছোটন নামে একজন। যিনি মালয়েশিয়াতে অবস্থান করছেন। বেট উইনারের দুজন কান্ট্রি ম্যানেজারের তথ্য পাওয়া গেছে। তারা হলেন সম্রাট ও শাহীন রেজা। তারা দেশেই অবস্থান করছেন। তাদের গ্রেপ্তারে চেষ্টা চলছে। এমএফএস সিম ব্যবহার করে জুয়াড়িদের কাছ থেকে টাকা সংগ্রহ করার পর ক্রিপ্টোকারেন্সিতে কনভার্ট করে কোটি কোটি টাকা বিদেশে পাচারের তথ্য পেয়েছে সিআইডি।
সিআইডির সাইবার ইন্টেলিজেন্স অ্যান্ড রিস্ক ম্যানেজমেন্ট ইউনিটের বিশেষ পুলিশ সুপার মো. রেজাউল মাসুদ কালবেলা বলেন, ‘বিষয়টি খুবই উদ্বেগজনক। দুটি বেটিং সাইটের চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আরও কয়েকজনের নাম পাওয়া গেছে, তাদেরও গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।’
তিনি জানান, কুমিল্লা থেকে বেট উইনার সংশ্লিষ্টদের ধরতে গিয়ে বেট ভিসার সন্ধান পাওয়া যায়। এই চক্রের সঙ্গে রাশিয়া ও মালয়েশিয়ায় অবস্থান করা কিছু বাংলাদেশিও যুক্ত আছেন।
রেজাউল মাসুদ বলেন, ‘চারজনের মধ্যে আনোয়ারের নিয়ন্ত্রণে থাকা বিভিন্ন অ্যাকাউন্টে প্রতি মাসে ৫-৬ কোটি টাকা করে লেনদেন হতো। আর বাকি তিনজনের ২-৩ কোটি করে। ৬-৭ মাস ধরে এই চক্রের সদস্য কার্যক্রম পরিচালনা করছে। আরও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সাইট, ফেসবুক পেজসহ অন্যান্য মাধ্যম রয়েছে, যেগুলোর মাধ্যমে দেশের টাকা পাচার হয়ে যাচ্ছে। জড়িতদের আইনের আওতায় এনে অর্থ পাচার বন্ধের জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হচ্ছে।’
মন্তব্য করুন