রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানায় অভিযোগ দিতে এসে ওসির হুমকির শিকার হয়েছেন এক ভুক্তভোগী। এমন ঘটনায় মোহাম্মদপুর এলাকার বাসিন্দারা থানার সামনে অবস্থান নিয়ে ওসি ইফতেখার হাসানের অপসারণসহ তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার জোর দাবি জানিয়েছেন। বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে মোহাম্মদপুর থানার সামনে বাসিন্দারা অবস্থান নিয়ে এ দাবি জানান। তবে স্থানীয় জনতার বিক্ষোভের খবর শুনে ওসি বৃহস্পতিবার সকালেই জরুরি পাঁচ দিনের ছুটি নিয়ে থানা থেকে বের হয়ে গেছেন বলে জানা গেছে।
জানা গেছে, ৫ আগস্টের পর যাত্রাবাড়ী থেকে পালিয়ে আসা আওয়ামী লীগ নেতা বাবুল আক্তার বাবু মোহাম্মদপুর এলাকায় এসে আশ্রয় নেন। এ এলাকায় এসে তার পূর্বপরিচিত এক সাবেক সেনা কর্মকর্তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দেখভাল করছিলেন। হঠাৎ করে ওই আওয়ামী লীগ নেতা সেই ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দখল করে নেন। এ ঘটনায় থানায় লিখিত অভিযোগ দিলে উল্টো এ আওয়ামী লীগ নেতার পক্ষ নিয়ে ভুক্তভোগীকে হুমকি দেন ওসি।
ভুক্তভোগী অবসরপ্রাপ্ত সাবেক সেনা কর্মকর্তা আলমগীর কবীর জানান, ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর যাত্রাবাড়ীর এক আওয়ামী লীগ নেতা তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দখল করে নেন। ওই ব্যক্তি আগে থেকেই তার সঙ্গে ব্যবসা করতেন। কিন্তু তার বিরুদ্ধে বৈষম্যবিরোধী হত্যা মামলা হওয়ায় যাত্রাবাড়ী এলাকা ছেড়ে দিয়ে তার প্রতিষ্ঠান দেখভাল করবেন বলে অনুরোধ করেন।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, আমি তাকে দায়িত্ব দেওয়ার পর সে ওসির সঙ্গে মিলে আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দখলের পাঁয়তারা করে। এ বিষয়ে আমি থানায় লিখিত অভিযোগ দেওয়ার পর পুলিশ আমাকে কোনো সহায়তা করেনি। উল্টো তদন্তকারী অফিসার এএসআই হাসান আমার সঙ্গে দেখা করে দেড় হাজার টাকা নেন। এরপরও আমাকে আইনি কোনো সহায়তা না করার পর এ বিষয়ে আমি স্থানীয় বাসিন্দাদেরসহ থানায় ওসির সঙ্গে কথা বলতে গেলে ওই আওয়ামী লীগ নেতার পক্ষ নিয়ে ১৫-২০ জন বাসিন্দার সামনে জোরে চেঁচামেচি করে আমাকে ওসি বলেন, ৫-১০ হাজার টাকা দিলে এ এলাকা কিশোর গ্যাং কুপিয়ে ফেলে যায়। কিন্তু আপনাকে এখনো কোপায়নি কেন, তা বুঝতেছি না। চেঁচামেচি করে এমন হুমকিস্বরূপ কথা যদি ওসির মতো একটি দায়িত্বশীল লোক বলে, তাহলে আমরা সাধারণ মানুষ কোথায় যাব? ওসির বক্তব্যে স্পষ্ট, তার এলাকার সন্ত্রাসী বাহিনীর সঙ্গে আঁতাত রয়েছে।
এ ঘটনার পর থানার সামনে অবস্থান নেওয়া স্থানীয় বাসিন্দা পারভেজ হাসান সুমন বলেন, ভুক্তভোগীরা থানায় অভিযোগ দিয়েও কোনো আইনি সহয়তা পাননি। কারণ, ওসি আওয়ামী লীগ নেতা ও বিভিন্ন মাদক ব্যবসায়ীর সঙ্গে মিলেমিশে এ এলাকায় চাঁদাবাজি করেন।
এদিকে এলাকার বাসিন্দারা থানার সামনে অবস্থানের পর ওসির সঙ্গে কথা বলতে থানায় প্রবেশ করলে পাভেল নামে একজন নিজেকে ওসির ঘনিষ্ঠ দাবি করে বাসিন্দাদের হুমকি দেন। এ সময় বাসিন্দারা থানায় তেজগাঁও বিভাগের মোহাম্মদপুর জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) তারেক সেকান্দারের সঙ্গে ওসির নানা অপকর্মের বিষয়ে কথা বলেন। পরে বিষয়গুলো নিয়ে লিখিত অভিযোগ দেওয়ার পরামর্শ দেন এ পুলিশ কর্মকর্তা।
এসি তারেক সেকান্দার জানান, ওসির বিরুদ্ধে বাসিন্দাদের লিখিত অভিযোগ তিনি তার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে পৌঁছে দিয়ে বিষয়টি নিয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য জানাবেন। পুলিশের এ কর্মকর্তার এমন আশ্বাসের পর ওসির বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দিয়ে থানার সামনে অবস্থান কর্মসূচি শেষ করেন বাসিন্দারা।