ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের আমলে ২০২৩ সালের ২ নভেম্বর মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা (মাউশি) অধিদপ্তরের রাজশাহী আঞ্চলিক কার্যালয়ের কলেজ শাখায় সহকারী পরিচালক (এডি) পদে যোগদান করেন মো. আলমাছ উদ্দিন। এর পর থেকে তিনি বিধিবহির্ভূতভাবে রাজশাহী অঞ্চলের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিও এবং বিভিন্ন কলেজের ডিগ্রি স্তরের তৃতীয় শিক্ষকদের বেতন অনুমোদন করিয়ে দেওয়ার বিনিময়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এসব কার্যকলাপের কারণে মাউশি রাজশাহীতে যোগদানের মাত্র এক বছরের মধ্যেই সংশ্লিষ্ট মহলে পেয়েছেন ‘দুর্নীতির বরপুত্রের’ তকমা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আগে আওয়ামী লীগের সঙ্গে সম্পৃক্ত লোকজনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা রেখে কার্যকলাপ চালিয়েছেন আলমাছ। তবে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর ভোল পাল্টে ভিড়েছেন বিএনপি-জামায়াত শিবিরে। অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার পর আলমাছের সিন্ডিকেটের চার সদস্য অন্যত্র বদলি হয়ে গেলেও ‘অদৃশ্য শক্তির’ দাপটে তিনি বহাল তবিয়তেই তার কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন।
জানা গেছে, এমপিওভুক্তিসহ নানা কাজ করে দেওয়ার নামে মাউশির রাজশাহী আঞ্চলিক কার্যালয়ের পরিচালক ড. বিশ্বজিৎ ব্যানার্জি, সহকারী পরিচালক (কলেজ) মো. আলমাছ উদ্দিন, সেকেন্ডারি এডুকেশন সেক্টর ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্ট (সেসিপ) প্রকল্পের গবেষণা কর্মকর্তা মানিক চন্দ্র প্রামাণিক, সহকারী পরিদর্শক মো. আসমত আলী ও মো রাশেদুল ইসলামের বিরুদ্ধে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ উঠলে গত ৮ জানুয়ারি রাজশাহী কলেজ অধ্যক্ষ অধ্যাপক মু. যহুর আলীকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করা হয়।
পরে আলমাছসহ তার পাঁচ সদস্যের সিন্ডিকেটের অনিয়ম-দুর্নীতি আর ঘুষ-বাণিজ্যের অভিযোগের সূত্র ধরে অনুসন্ধানে নামে কালবেলা। এক সপ্তাহের অনুসন্ধানে সিন্ডিকেটের হোতা আলমাছ উদ্দিনের অনিয়ম-দুর্নীতি আর ঘুষ-বাণিজ্যের প্রমাণও মেলে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, আলমাছের এই সিন্ডিকেট বিধিবহির্ভূতভাবে বিভিন্ন বেসরকারি কলেজের শিক্ষক-কর্মচারীদের এমপিওভুক্ত করে দেওয়ার বিনিময়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়েছেন। এ চক্রটি বিভিন্ন কলেজের ডিগ্রি পর্যায়ের বিভিন্ন শিক্ষকের এমপিওভুক্তির যোগ্যতা না থাকার পরও মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে এমপিওভুক্তির ব্যবস্থা করে দেন। অনেক ক্ষেত্রে বাংলাদেশ শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর (ব্যানবেইস) তালিকায় না থাকা অনেক শিক্ষককেও এমপিওভুক্ত করিয়েছেন। অথচ মাউশি ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নিয়ম অনুযায়ী, শিক্ষক এমপিওভুক্তির জন্য অবশ্যই যোগদানের সময় থেকে ব্যানবেইসে তথ্য আপডেট থাকতে হবে এবং বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) অনুমোদিত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিগ্রি থাকতে হবে। ২০১৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ডিগ্রি স্তরে গভর্নিং বডি কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির বিষয়ে মাউশি থেকে যাচাই-বাছাই করে তালিকা পাঠাতে বলেছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তবে ২০১৬ সালের পর নিয়োগপ্রাপ্তদের বিষয়টি বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) মাধ্যমে হওয়ার নিয়ম রয়েছে। এক্ষেত্রে ২০১৬ সালের পর নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকদের রেজ্যুলেশন ও নিয়োগপত্র টেম্পারিংয়ের মাধ্যমে আলমাছ ও তার সিন্ডিকেট মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে সংশ্লিষ্ট শিক্ষকদের নাম অন্তর্ভুক্ত করে মাউশি ঢাকা ও মন্ত্রণালয়ে পাঠায়।
অভিযোগ রয়েছে, ২০১৭ সালে চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল মহিলা কলেজে নিয়োগ পাওয়া আট শিক্ষকের নাম চূড়ান্ত তালিকায় ঢুকিয়ে প্রত্যেকের কাছ থেকে ৩ লাখ টাকা করে ঘুষ নিয়ে গত বছরের নভেম্বরে এমপিওতে তাদের নাম অনলাইনে অনুমোদন দিয়ে মাউশিতে পাঠান আলমাছ। এ ছাড়া বিধিবহির্ভূতভাবে রাজশাহীর গোদাগাড়ীর কাকনহাট ডিগ্রি কলেজের দুজনসহ পাবনার বাঁশেরবাদা ডিগ্রি কলেজে তিনজনকে মন্ত্রণালয় কিংবা মাউশির অনুমতি ছাড়াই এমপিওভুক্তির ব্যবস্থা করেন তিনি। একইভাবে রাজশাহীর চারঘাটের মোজাহার হোসেন ডিগ্রি কলেজে গভর্নিং বডির মাধ্যমে ২০১৯ সালে নিয়োগ পাওয়া পাঁচ শিক্ষককেও এনটিআরসিএর সুপারিশ না থাকা সত্ত্বেও গত বছরের সেপ্টেম্বরে এমপিওভুক্ত করা হয়। অন্যদিকে রাজশাহী মেট্রোপলিটন কলেজে ২০১৮ সালে নিয়োগ পাওয়া আব্দুর রউফকে (প্রভাষক, সমাজকর্ম) একই উপায়ে এমপিওভুক্ত করা হয়। এ ছাড়া রাজশাহীর পবা ভেড়াপাড়া আদর্শ মহাবিদ্যালয়ের চারজন, চারঘাটের ভায়া লক্ষ্মীপুর বুদিরহাট কলেজের একজন ও নাটোরের সিংড়া উপজেলার রহমত ইকবাল ডিগ্রি কলেজে একজনসহ মোট ছয়জনকে গত বছরের সেপ্টেম্বরে এমপিওভুক্ত করা হয়, যাদের কেউই ইউজিসি অনুমোদিত কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক সনদধারী ছিলেন না। মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে তাদের এমপিওভুক্ত করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
অনুসন্ধানে আরও উঠে এসেছে, আলমাছ এমপিওসহ নানা কাজের জন্য ঘুষ গ্রহণের ক্ষেত্রে তার ঘনিষ্ঠ সহযোগী সেসিপ প্রকল্পের গবেষণা কর্মকর্তা মানিক চন্দ্র প্রামাণিককে ব্যবহার করতেন। গত বছরের ৫ জুন মানিক চন্দ্রের সঙ্গে নাটোরের মহারাজা কলেজের অধ্যক্ষ আশরাফুল ইসলাম হোয়াটসঅ্যাপে একটি কথোপকথনের স্ক্রিনশট কালবেলার হাতে এসেছে। কথোপকথনের একপর্যায়ে আলমাছকে দেওয়া ঘুষের অর্থ মানিক চন্দ্রের মাধ্যমে ওই অধ্যক্ষ ফেরত চান।
জানতে চাইলে অধ্যক্ষ আশরাফুল ইসলাম কালবেলাকে বলেন, ‘আমার কলেজের এক শিক্ষকের এমপিও করে দেওয়ার নামে এডি আলমাছ ৪ লাখ টাকা নিয়েছেন। পরে আমাকে একদিন ফোন করে এক রেস্টুরেন্টে ডেকে নিয়ে ৪০ হাজার টাকা নেন। কিন্তু ওই শিক্ষকের এমপিও করে দেননি, এমনকি এখন পর্যন্ত টাকাও ফেরত দেননি।’
আলমাছের ঘনিষ্ঠ একজন কালবেলাকে জানান, গত বছরের ১৫ নভেম্বর বিকেলে নগরীর কাদিরগঞ্জে অবস্থিত আলমাছের ভাড়া বাসায় (পঞ্চম তলা) রাখা চার ব্যাগভর্তি টাকা (আনুমানিক ১ কোটি ২০ লাখ টাকা) তার প্রতিবেশী মোকসেদ আলমের রান্নাঘরে লুকিয়ে রেখেছিলেন। ওই সময় মোকসেদ আলম বাসায় ছিলেন না। তখন মোকসেদের স্ত্রী আলমাছের টাকার ব্যাগ রান্নাঘরে লুকিয়ে রাখার বিষয়টি মোবাইল ফোনে স্বামীকে জানান। সে সময় টাকার ব্যাগগুলো আলমাছ দ্রুত সরিয়ে না নিলে সেগুলো জানালা দিয়ে বাইরে ফেলে দিতে স্ত্রীকে নির্দেশ দিয়েছিলেন মোকসেদ। পরে চাপের মুখে তখনই টাকাগুলো সরিয়ে নেন আলমাছ।
জানা গেছে, সেদিন টাকাভর্তি ব্যাগগুলো পাশের বাসায় লুকিয়ে রাখার ঠিক আগ মুহূর্তে টাকার বিনিময়ে এমপিও করার অভিযোগের বিষয়ে আলমাছকে ফোন করেছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু। আর সে কারণেই আলমাছ ভয়ে টাকাগুলো তার পাশের বাসায় নিয়ে রাখেন বলে জানায় তার ঘনিষ্ঠ ওই সূত্র। পরে অবশ্য আলমাছ বিএনপি নেতা মিনুর ফোন করার বিষয়টি স্বীকার করলেও টাকা লুকিয়ে রাখার বিষয়টি অস্বীকার করেন।
জানতে চাইলে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু কালবেলাকে বলেন, ‘আমার কাছে তার (আলমাছ) সম্পর্কে বেশকিছু অভিযোগ এসেছিল। এজন্য তাকে ওইদিন ফোন করে ধমক দিয়েছিলাম। আমি দেশের নাগরিক, তাই বিবেকের তাড়নায় আমি তাকে ফোন করেছিলাম। দুর্নীতিবাজ যে-ই হোক, তারা জাতির শত্রু। এমন দুর্নীতিবাজদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই, তারা যেন জনগণের সম্পদ আত্মসাৎ না করে।’
অনুসন্ধানে জানা গেছে, সম্প্রতি আলমাছ রাজশাহী নগরীর সপুরা এলাকার ‘আহলান টাওয়ারে’ ৮০ লাখ টাকায় একটি বিলাসবহুল ফ্ল্যাট (১৬০০ স্কয়ার ফুট) কিনেছেন। ফ্ল্যাটটি গত ১৫ ডিসেম্বর নিজের নামে দলিলও (দলিল নং-৭৮৯৪) করে নিয়েছেন তিনি। এ ছাড়া এর পাশেই সপুরা এলাকায় ৪৫ লাখ টাকায় একটি (১১০০ স্কয়ার ফুট) এবং মহানন্দা আবাসিক এলাকায় রিভারিন পার্কে ৮৫ লাখ টাকায় আরও একটি ফ্ল্যাট (১৮৫০ স্কয়ার ফুট) কেনার বিষয়ে আলোচনা চূড়ান্ত করেছেন বলে তার ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র জানিয়েছে। তবে অন্য একটি সূত্র বলছে, এরই মধ্যে এই দুটি ফ্ল্যাটের টাকাও পরিশোধ করা হয়েছে, কিন্তু এখনো দলিল করে নেননি আলমাছ।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত ৪ নভেম্বর মাউশি রাজশাহীর আঞ্চলিক কার্যালয়ের পরিচালক ড. বিশ্বজিৎ ব্যানার্জিকে স্ট্যান্ড রিলিজ করা হয়। এর আগে উপপরিচালক (কলেজ) ড. আলমগীর কবির বদলি হওয়ায় গত বছরের ১০ জুন থেকে এই পদটিও ছিল শূন্য। গত ১৭ নভেম্বর নতুন পরিচালক অধ্যাপক মোহা. আছাদুজ্জামান ও ১৯ নভেম্বর উপপরিচালক হিসেবে ড. আলমগীর কবির ফের যোগদান করেন; কিন্তু গত ৫ নভেম্বর থেকে ১৬ নভেম্বর পর্যন্ত মাউশি রাজশাহী অঞ্চলের পরিচালক ও উপপরিচালকের পদে কেউ না থাকায় এডি আলমাছ নিজের দায়িত্বসহ পরিচালক ও উপপরিচালকের দায়িত্বও পালন করেন। ১৬ নভেম্বর ছিল এমপিও সম্পন্ন করার শেষ দিন। আলমাছের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মাউশি অধিদপ্তরের যুগ্ম প্রোগ্রাম পরিচালক অধ্যাপক ড. সামসুন নাহার তাকে পরিচালক ও উপপরিচালকের দায়িত্বভার গ্রহণের অনুমতি দেন। দায়িত্ব পেয়েই তার ঊর্ধ্বতন দুই কর্মকর্তার এডুকেশন ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমের (ইএমআইএস) পাসওয়ার্ড নিয়ে কয়েকদিনেই তিনি তিন শতাধিক এমপিওসহ ৯৩০টি ফাইল ফরোয়ার্ড করেন। সবমিলিয়ে গত বছরের ১ মে থেকে ১৭ নভেম্বর পর্যন্ত নতুন করে ৬৩০টি এমপিও ফাইলসহ ১ হাজার ২৭৭টি ফাইল ফরোয়ার্ড করা হয়। আর আলমাছ একাই মাউশি কার্যালয়ের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকার সুযোগটি ঘুষ-দুর্নীতি আর জালিয়াতির মাধ্যমে কাজে লাগিয়েছেন বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।
জানা গেছে, এডির দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই রাজশাহী অঞ্চলের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কার্যক্রম পরিচালনা করতে গিয়ে অনিয়মের আশ্রয় নেন আলমাছ। গত বছরের ১১ জানুয়ারি থেকে ৯ জুন পর্যন্ত মাউশি কার্যালয়ে পরিচালক না থাকায় উপপরিচালক আলমগীর কবির ভারপ্রাপ্ত পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এ সময়ে আলমগীর কবির অফিসে কাজের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে ১৫টি ক্লোজ সার্কিট (সিসি) ক্যামেরা লাগানোর ব্যবস্থা করেন। এতে চরম আপত্তি তোলেন এডি আলমাছ। একপর্যায়ে আলমাছ তার কক্ষে থাকা সিসি ক্যামেরা বন্ধ করে দিলে তার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এ বিষয়ে তাকে কারণ দর্শানোর (শোকজ) নোটিশও দেন। পরে আলমাছের প্রত্যক্ষ মদদ ও ক্ষমতার দাপটে আলমগীর কবিরের সঙ্গে বিএনপি-জামায়াতের সম্পৃক্ততার অভিযোগ তোলা হয়, যার জের ধরে গত বছরের ৯ জুন বদলি করা হয় আলমগীর কবিরকে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এডি আলমাছ অনিয়ম-দুর্নীতির আর ঘুষ-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে সেচিপ প্রকল্পের গবেষণা কর্মকর্তা মানিক চন্দ্র প্রামাণিককে ডান হাত হিসেবে ব্যবহার করতেন। অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে গত ১৫ নভেম্বর মানিককে নীলফামারী বদলি করা হয়। কিন্তু আলমাছের অতিঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত জেপিডি ড. সামসুন নাহার এক মাসের ব্যবধানে ডিসেম্বরের শেষের দিতে মানিককে ‘প্রাইজ পোস্টিং’ হিসেবে ফের নিজ জেলা নাটোরে বদলি করেন। একইভাবে সিন্ডিকেটের আরেক হোতা আসমত আলীও পঞ্চগড়ে বদলির এক মাসের ব্যবধানে নিজ জেলা পাবনায় বদলি হন।
এক মাসের ব্যবধানে বদলির বিষয়ে জানতে চাইলে সেচিপ প্রকল্পের বর্তমান যুগ্ম প্রোগ্রাম পরিচালক (জেপিডি) মো. আমিনুল ইসলাম কালবেলাকে বলেন, “আমি গত ৩১ ডিসেম্বর রুটিন দায়িত্ব হিসেবে জিপিডি পদে যোগদান করি। যোগদানের পর জানতে পারলাম, পূর্বের মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. রেজাউল করিম ও জেপিডি অধ্যাপক ড. সামসুন নাহার চলে যাওয়ার আগমুহূর্তে ‘প্রাইজ পোস্টিং’ দিয়ে গেছেন।” তিনি আরও বলেন, “বদলি যে কোনো মুহূর্তেই হতে পারে। কিন্তু আমি যতটুকু শুনেছি, অনিয়মের অভিযোগে তাদের শাস্তিমূলক বদলি করা হয়েছিল। আবার এক মাসের মধ্যেই ‘প্রাইজ পোস্টিং’ হিসেবে নিজ জেলাতে বদলি করা হয়েছে, যা উচিত নয়।”
নাটোরের সিংড়া উপজেলার রহমত ইকবাল কলেজের অধ্যক্ষ মো. মনসুর রহমান বলেন, ‘আমার কলেজের দুজন শিক্ষক এমপিওর জন্য আবেদন করেছিলেন। কিন্তু তাদের আবেদন অনুমোদন না হওয়ায় ১৩ জানুয়ারি ওই শিক্ষকদের নিয়ে আমি মাউশিতে যাই। যাওয়ার পর এডি আলমাছ আমাকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করেন। এমনকি আমাকে মাউশি কার্যালয় থেকে বের করে পুলিশে দেওয়ার হুমকি দেন।’ এমপিওর জন্য কত টাকা দিয়েছিলেন জানতে চাইলে তিনি ভয়ে এ বিষয়ে মুখ খুলেতে রাজি হননি।
এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে আলমাছ উদ্দিন কালবেলাকে বলেন, ‘পরিচালক, উপপরিচালক না থাকায় এমপিওসহ বিভিন্ন কাজের ফাইল আটকে ছিল। এদিকে ডেটলাইনও পার হয়ে যাচ্ছিল। তাই মাউশি অধিদপ্তরের যুগ্ম প্রোগ্রাম পরিচালকের (সামসুন নাহার) অনুমতি সাপেক্ষে আমাকে কাজগুলো করতে হয়েছে। তবে আমি কাজগুলো শতভাগ স্বচ্ছতার সঙ্গে করেছি। কোনো ধরনের অনিয়ম কিংবা দুর্নীতির আশ্রয় নেওয়া হয়নি। আমি যদি টাকা লেনদেন করতাম তাহলে আমার মাথা থাকত না।’
ফ্ল্যাট কেনার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘তিনটি নয়; একটি ফ্ল্যাট নেওয়ার পরিকল্পনা ছিল, তাও অনেক আগে।’ ১৫ নভেম্বর প্রতিবেশীর বাসায় চার ব্যাগ টাকা লুকিয়ে রাখার বিষয়ে আলমাছ বলেন, ‘এসব তথ্য মিথ্যা ও বানোয়াট। বিএনপির একজন নেতা আমাকে ফোন করেছিলেন। আমি তাকে বলেছি, আপনার লোকজন দিয়ে আমার বাসায় এসে খোঁজখবর নিতে পারেন। পরে আর কেউ আসেনি।’
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে মাউশি রাজশাহী অঞ্চলের পরিচালক অধ্যাপক মোহা. আছাদুজ্জামান বলেন, ‘আমি গত ১৭ নভেম্বর এই পদে যোগদান করেছি। আমি যোগদানের আগেই যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছিল তাদের চারজনকে অন্যত্র বদলি করে দেওয়া হয়েছে। তবে আমি এসে আলমাছকে এখানেই পেয়েছি। আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর টাকা-পয়সা লেনদেনের বিষয়ে আলমাছের বিরুদ্ধে উড়োচিঠির মতো কিছু অভিযোগ আসে। তবে আমি সশরীরে সংশ্লিষ্ট কলেজগুলোতে গিয়ে কোনো প্রমাণ পাইনি। আসলে আমি আসার আগে তিনি (আলমাছ) কী করেছেন তা আমার জানা নেই।’