মানবতাবিরোধী অপরাধে আমৃত্যু কারাদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে চিকিৎসা দেওয়া ডা. এস এম মোস্তফা জামানকে হুমকিদাতাদের মধ্যে দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারা হলেন তাফসিরুল ইসলাম ও হাফিজা মাহবুবা বৃষ্টি। তাদের বিরুদ্ধে ধানমন্ডি থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেছেন চিকিৎসক মোস্তফা জামান।
এর মধ্যে গত বুধবার রাতে ঝিনাইদহের মহেশপুর থেকে তাফসিরুলকে আটক করে র্যাব। তিনি শিবিরকর্মী। তার পরিবারও জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত বলে জানিয়েছে র্যাব। একই রাতে উত্তরা থেকে বৃষ্টিকে আটক করে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) টিম। তিনিও ধর্মীয় অনুশাসনের বিষয়ে উগ্র মনোভাব পোষণ করেন। সে কারণেই চিকিৎসককে হুমকি দেন তিনি।
বৃহস্পতিবার কারওয়ান বাজারের এক সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, তাফসিরুলের বাবা রফিকুল ইসলাম রফি এলাকার জামায়াতে ইসলামীর কর্মী হিসেবে পরিচিত। ২০১৩-১৪ সালে নাশকতা সৃষ্টির অপরাধে তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা হয়। সে সময় তিনি কারাভোগ করেন।
মঈন বলেন, সাঈদীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অপপ্রচারসহ চিকিৎসক মোস্তফা জামানকে ফেসবুকে ও মোবাইলে মেসেজ দিয়ে হত্যার হুমকি দেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছেন তাফসিরুল। তিনি স্থানীয় একটি কলেজে অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। স্কুল জীবন থেকেই তিনি ছাত্রশিবিরের সক্রিয় সদস্য ছিলেন। এ ছাড়া তিনি ফেসবুকে ‘বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির দ্বারিয়াপুর, মহেশপুর#তাফসিরুল ইসলাম’ ও ‘বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির দ্বারিয়াপুর, মহেশপুর@তাফসিরুল ইসলাম’ নামে দুটি ফেসবুক গ্রুপের অ্যাডমিন।
খন্দকার মঈন বলেন, মূলত তিনি দলীয় ও রাজনৈতিক মতাদর্শ, ব্যক্তিগত ক্ষোভ ও আক্রোশ থেকে চিকিৎসক মোস্তফা জামানের ব্যক্তিগত মোবাইল নম্বর খুঁজে বের করে হোয়াটসঅ্যাপে হত্যার হুমকি দেন। পরে ওই চিকিৎসক জিডি করলে তাফসিরুল মেসেজগুলো মুছে ফেলেন।
র্যাব মুখপাত্র বলেন, জামায়াত-শিবিরের বিভিন্ন ফেসবুক গ্রুপে ডাক্তারের নম্বর ছড়ানো হয়েছে। সেখান থেকে তার নম্বর সংগ্রহ করেন তাফসিরুল। এ ছাড়া এসব গ্রুপ থেকে অনেকেই নম্বর সংগ্রহ করে ওই ডাক্তারকে হুমকি দিচ্ছেন। তাদের আটকে কাজ করছে র্যাব।
সিটিটিসির এক কর্মকর্তা বলেন, বিজিএমইএ ইউনিভার্সিটি অব ফ্যাশন অ্যান্ড টেকনোলজি থেকে পড়াশোনা করেছেন বৃষ্টি। তিনি অনলাইন বাংলা স্কুল নামে একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। ধর্মীয় অনুশাসনের বিষয়ে উগ্র মনোভাব পোষণ করেন তিনি। সেই জায়গা থেকে সাঈদীর চিকিৎসককে হুমকি দেন। এ ছাড়া সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি গ্রুপ চালান তিনি। সাঈদীর বিরুদ্ধে যারা লিখেছেন, তাদের পোস্টগুলো সেই গ্রুপে শেয়ার করে অন্যদের উত্তেজিত করার চেষ্টাও করেছেন তিনি। তার রাজনৈতিক কোনো পরিচয় আছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
গত ১৩ আগস্ট অসুস্থ অবস্থায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে হৃদরোগ বিভাগে ভর্তি হন দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী। বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক চৌধুরী মিশকাত আহমেদের তত্ত্বাবধানে ভর্তি হন তিনি। একই বিভাগের চিকিৎসক এস এম মোস্তফা জামান। সাঈদীর মৃত্যুর পর মোস্তফা জামানকে বিভিন্নভাবে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়। এ ঘটনায় ১৫ আগস্ট রাতে ধানমন্ডি থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন ওই চিকিৎসক।
মন্তব্য করুন