অমর একুশে বইমেলা ঘিরে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও বাংলা একাডেমির প্রবেশপথেই বসেছে অর্ধশতাধিক ভাসমান দোকানপাট। বইমেলা উপলক্ষে প্রতিবছর বাংলা একাডেমি সংলগ্ন এলাকায় দেখা মেলে এমন দোকানপাটের। তবে এবার ভাসমান দোকানের দৌরাত্ম্যে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে মেলায় আগত পাঠক ও দর্শনার্থীদের। অবৈধভাবে গড়ে ওঠা এসব দোকানের কারণে সৃষ্টি হয়েছে নিরাপত্তার সংকটও। মেলার আয়োজক ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের চোখের সামনে এ অবৈধ দোকানগুলো বসানো হলেও এখনো কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
সরেজমিন দেখা গেছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি থেকে দোয়েল চত্বর পর্যন্ত ফুটপাত ও প্রধান সড়কের দুপাশে গড়ে উঠেছে এসব দোকান। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের প্রবেশপথে দেখা গেছে অন্তত ৩৫টি দোকান। সেখান থেকে রমনা কালীমন্দিরের প্রবেশপথ পর্যন্ত আরও প্রায় ২৪-২৫টি ভাসমান দোকান বসানো হয়েছে। এসব দোকানের মধ্যে রয়েছে—ভাজাপোড়ার দোকান ১০টি, চিকেন মমোর দোকান ৮টি, ফুচকার দোকান ৮টি, শরবত ও আইসক্রিমের দোকান ৪টি, ফলের ভর্তার দোকান ২টি এবং ভুট্টা, কোমল পানীয় ও ফুল বিক্রির আরও বেশ কিছু দোকান।
ফুটপাতজুড়ে গড়ে ওঠা এসব অবৈধ দোকানের কারণে দর্শনার্থীদের হাঁটতে হচ্ছে ঠেলাঠেলি করে। বিশেষ করে পরিবার-পরিজন নিয়ে আসা বইপ্রেমীরা চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। দীর্ঘক্ষণ ভিড়ের মধ্যে দাঁড়িয়ে মেলায় প্রবেশ করতে হচ্ছে তাদের। সবচেয়ে বড় উদ্বেগের বিষয় হলো, বেশিরভাগ দোকানেই তেলে ভাজা খাবার বিক্রি হচ্ছে। ফুটপাত ও প্রধান সড়কের একাংশে বসানো এসব দোকানে গরম কড়াইয়ের তেল বাইরে ছিটকে পড়ছে, যা যে কোনো মুহূর্তে দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে। বিশেষ করে শিশু ও প্রবীণ দর্শনার্থীদের জন্য এটি মারাত্মক ঝুঁকির বিষয়।
মেলায় আসা একাধিক দর্শনার্থী অভিযোগ করে বলেন, বইমেলায় বই কেনার জন্য আসি; কিন্তু ঢোকার আগেই এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়। ভাজাপোড়ার দোকানগুলো আমাদের জন্য ভয়ংকর হয়ে উঠেছে। কেউ যদি অসাবধানতাবশত গরম তেলে পড়ে যায়, বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে।
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী নুসরাত জাহান কালবেলাকে বলেন, মেলায় আসার প্রধান দরজার কাছেই এত ভাজাপোড়ার দোকান বসানো হয়েছে যে, ঢোকার আগেই বিপদের শঙ্কা কাজ করে। গরম তেল ছিটকে লাগার ভয় তো আছেই, তার ওপর তেল আর ধোঁয়ার গন্ধে শ্বাস নিতে কষ্ট হয়। এত বড় মেলায় খাবারের দোকানগুলো যদি একটু দূরে পরিকল্পিতভাবে রাখা যেত, তাহলে দর্শনার্থীদের জন্য ভালো হতো।
চাকরিজীবী রাকিব হাসান কালবেলাকে বলেন, বইমেলা মানে শুধু বই কেনা নয়, এটা একটা সাংস্কৃতিক মিলনমেলা। বই কেনার পর একটু বসে বই পড়তে ইচ্ছা করে, বন্ধুর সঙ্গে আলোচনা করতে মন চায়। কিন্তু এখানে বসার তেমন ব্যবস্থা নেই। সারা মেলা ঘুরে ক্লান্ত হয়ে গেলে কোথাও বসার জায়গা পাওয়া যায় না। ফলে অনেকেই বই কিনেই দ্রুত চলে যান, মেলার আসল আনন্দ উপভোগ করতে পারেন না। আর ভাজাপোড়ার দোকানগুলোর জন্য মেলার ভেতরে ঢুকতে এবং বের হতে হলে এক কঠিন যুদ্ধ জয় করতে হয়।
অভিভাবক কামরুজ্জামান সালেহ কালবেলাকে বলেন, আমার ছোট বাচ্চাকে নিয়ে এসেছি; কিন্তু এই দোকানগুলোর কারণে ভয় পাচ্ছি। একটু অসাবধান হলেই বিপদ হতে পারে।
এ বিষয়ে মেলা কমিটির সদস্য সচিব ড. সরকার আমিন কালবেলাকে বলেন, বইমেলার পরিবেশ শৃঙ্খলিত ও স্বাচ্ছন্দ্যময় রাখতে আমরা পুলিশের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেছি এবং তাদের স্পষ্ট নির্দেশনা দিয়েছি যাতে প্রবেশপথ ও রাস্তা সবসময় পরিষ্কার থাকে। দর্শনার্থী, পাঠক এবং সাধারণ মানুষের যেন কোনো ধরনের অসুবিধা না হয়, সেটাই আমাদের প্রধান লক্ষ্য। আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি, যদিও এখনো পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারিনি। তবে আশা করছি, আগামীকাল থেকে আরও কার্যকর উদ্যোগের মাধ্যমে পরিস্থিতির দৃশ্যমান উন্নতি করতে পারব।
দেখা গেছে, এসব দোকান পুলিশের নাকের ডগায় বসানো হয়েছে। শত চেষ্টা করেও এই অবৈধ দোকানগুলো উচ্ছেদ করতে পারছেন না।
বইমেলায় আগত পাঠক, দর্শনার্থী ও প্রকাশকরা দ্রুত এসব অবৈধ দোকান উচ্ছেদের দাবি জানিয়েছেন। তারা মনে করেন, বইমেলার পরিবেশ যাতে সুন্দর থাকে এবং দুর্ঘটনার ঝুঁকি এড়ানো যায়, সেজন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের এখনই ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।