

নওগাঁর বদলগাছীতে প্রায় আড়াই বছর ধরে এক অসহায় প্রতিবন্ধী নারীর ভাতার টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় জনপ্রতিনিধির স্বামী ও আওয়ামী লীগ নেতার বিরুদ্ধে। বিষয়টি জানাজানির পর উপজেলার গ্রাম-মহল্লা থেকে চায়ের দোকান সবখানেই চলছে ক্ষোভের ঝড়। তবে ধামাচাপা দেওয়ার জন্য এরই মধ্যে তড়িঘড়ি করে ১০ হাজার টাকা ফেরত দিয়েছেন ভুক্তভোগীকে।
অভিযোগ ওঠা ব্যক্তির নাম মিজানুর রহমান। তিনি শেরপুর দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও পাহাড়পুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহসভাপতি। মহিলা ইউপি সদস্য তহমিনার স্বামী।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলার পাহাড়পুর ইউনিয়নের পাঁচঘরিয়া গ্রামের প্রতিবন্ধী নারী মোসা. মুক্তা (৪০) ভাতা পাওয়ার জন্য স্থানীয় মহিলা ইউপি সদস্য তহমিনার কাছে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দেন। এরপর ২০২৩ সালের ১ জুলাই মুক্তার নামে ভাতার কার্ড করে দেন ঠিকই, তবে ভাতাভোগীর মোবাইল নম্বর না দিয়ে মিজানুর রহমানের মোবাইল নম্বর দেন। এরপর থেকে নিয়মিত ভাতা তুলছেন মিজানুর রহমান। ভাতাভোগী মুক্তাকে এ বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি, টাকাও দেওয়া হয়নি। চলতি নভেম্বরের মাঝামাঝি নতুন ভাতার আবেদন নিতে সমাজসেবা অফিস থেকে ঘোষণা দেওয়ার পর মুক্তা অফিসে গিয়ে জানতে পারেন তার নামে আড়াই বছর ধরে ভাতা দেওয়া হচ্ছে। এ কথা শুনে তার চোখ কপালে, মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ে।
মুক্তা বলেন ‘প্রায় আড়াই বছর আগে মেম্বার তহমিনা আমার কাগজপত্র নিয়েছিলেন। বারবার জিজ্ঞেস করলে বলতেন হয়ে যাবে। কিন্তু আমি কোনো টাকা পাইনি। সমাজসেবা অফিসে কয়েকদিন আগে গিয়ে শুনলাম, আমার নামে ভাতা নাকি অনেক আগেই হয়েছে, মোবাইল নম্বর আমার না, সেটা মেম্বারের স্বামীর। এলাকায় বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর মিজানুর মাস্টার ১০ হাজার টাকা দিতে চেয়েছেন। কয়েকদিন পর পাহাড়পুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি জিল্লুর মাস্টার ও মাসুদ মেম্বার বাড়ি এসে ১০ হাজার টাকা দিয়েছেন। কিন্তু আড়াই বছরে তো প্রায় ৩০ হাজার টাকা হয়। আমার প্রতিবন্ধী ভাতার বাকি টাকা দিল না কেন?’
অভিযুক্ত মিজানুর রহমানের মোবাইল ফোনে কল দিলে তিনি বলেন, ‘মোবাইল ফোনে কিছু বলা যাবে না, সাক্ষাতে কথা বলব।’ তারপর তিনি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।
অন্যদিকে মহিলা সদস্য তহমিনার দাবি, ‘ভুল করে এমনটি হয়েছে। এখন সংশোধন হয়েছে। তা ছাড়া মুক্তার সঙ্গে বিষয়টির মীমাংসা হয়েছে।’
উপজেলা সমাজসেবা অফিসার রাজিব আহমেদ কালবেলাকে বলেন, এটি স্পষ্ট অনিয়ম। আমরা মোবাইল নম্বর সংশোধন করেছি। আবেদনকারীকে সবসময় নিজের নগদ নম্বর ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হয়।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইসরাত জাহান ছনি বলেন, এ বিষয়ে লিখিতভাবে কোনো অভিযোগ পাইনি। যদি সত্য হয় তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মন্তব্য করুন