টার্গেট ব্যক্তিদের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ও মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করত প্রতারক চক্র। প্রথমে নারীদের দিয়ে প্রেমের অভিনয় করিয়ে ডেকে নেওয়া হতো বাসায়। পরে চক্রের অন্য সদস্যরা সেখানে উপস্থিত হয়ে নিজেদের ডিবি পুলিশ এবং সাংবাদিক পরিচয় দিতেন। ভিকটিমের পোশাক খুলে চক্রের নারী সদস্যদের পাশে দাঁড় করিয়ে ছবি ও ভিডিও ধারণ করতেন তারা। এরপর সেসব ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে আদায় করা হতো মোটা অঙ্কের টাকা।
গত ১৬ আগস্ট এমন এক ঘটনার পর সাবেক পুলিশ কর্মকর্তাসহ চক্রের চার সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ। গ্রেপ্তারদের মধ্যে নিজেকে কেউ পুলিশ কর্মকর্তা, কেউ সাংবাদিক পরিচয় দিতেন।
তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আসামিরা যোগসাজশে দীর্ঘদিন ধরে একই ধরনের প্রতারণামূলক কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছিলেন। ভিকটিমের সঙ্গে তাদের ৫ লাখ টাকায় মীমাংসা হয়। তবে আসামিরা ভিকটিমের কাছে থাকা ব্র্যাক ব্যাংকের ডেবিট কার্ড এবং ক্রেডিট কার্ড জোরপূর্বক ছিনিয়ে নেন। এটিএম বুথ থেকে মোট ১০ বারে ৩ লাখ টাকা উত্তোলন করেন। ক্রেডিট কার্ড দিয়ে পাঁচবারে মোট ৪ লাখ ৪ হাজার টাকার স্বর্ণালংকার কেনাকাটা করেন। এ ঘটনায় গ্রেপ্তার আসামিরা জিজ্ঞাসাবাদে পলাতক আসামি জহিরুল ইসলাম তুষার, মিলন, মাগার খলিল, শাহিনা, মাহি ও রুমা জড়িত বলে জানিয়েছেন।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও ডিবি পুলিশের উপপরিদর্শক মুন্সী আব্দুল লোকমান কালবেলাকে বলেন, এ মামলায় চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের মধ্যে তুরাগ থানার সাবেক এএসআই মাসুম রয়েছেন। রিমান্ডে নিয়ে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। পলাতক আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত।
জানা গেছে, গ্রেপ্তার চার আসামি পাঁচ দিনের রিমান্ডে রয়েছেন। এর মধ্যে আব্দুস সালাম নিজেকে ওসি হিসেবে পরিচয় দিতেন। তার মোবাইল ফোনে বিভিন্ন ব্যক্তিকে আটকে তাদের ধারণকৃত ভিডিও পাওয়া গেছে। নাজমুল হাসান নিজেকে প্রতারক চক্রের সাংবাদিক হিসেবে পরিচয় দেন। তার কাছ থেকে বাংলার টাইমস, দৈনিক সরেজমিন, সাপ্তাহিক শীর্ষ খবর, জাতীয় সাংবাদিক ঐক্য ফোরামসহ বিভিন্ন লেখা আইডি কার্ড পাওয়া গেছে। আরেক আসামি মাসুম শেখ নিজেকে দারোগা হিসেবে পরিচয় দিতেন। তার ফোনেও বাদীর আপত্তিকর ভিডিওসহ বিভিন্ন ব্যক্তিকে আটকে রেখে করা ভিডিও পাওয়া গেছে। শওকত আলী শেখ প্রতারণায় ব্যবহৃত বাসা ভাড়া নিয়ে দেওয়ার কাজ করতেন।
যেভাবে চক্রের ফাঁদে পড়েন ভুক্তভোগী: এক বছর আগে বন্ধুর মাধ্যমে আসামি শাহনাজের সঙ্গে ভুক্তভোগীর পরিচয় হয়। পরে তাদের হোয়াটসঅ্যাপে কথা হতো। মাঝে মধ্যে শাহনাজ তার বিভিন্ন অসহায়ত্বের কথা বলে টাকা সাহায্য চাইলে তাজুল বিকাশে টাকা পাঠাতেন। গত ১৫ আগস্ট শাহনাজ তাকে কল করে উত্তরা পূর্ব থানার একুশে হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্টের সামনে যেতে বলেন। সেখানে গিয়ে তাজুল দেখা করেন। একপর্যায়ে শাহনাজ তাকে যাত্রাবাড়ী মাতুয়াইল এলাকায় ঘুরতে নিয়ে যেতে চান। সিএনজি ভাড়া করে মাতুয়াইল শিশু হাসপাতালের সামনে পৌঁছান। এরপর শাহনাজ তাকে তার বাসার দ্বিতীয় তলার ফ্ল্যাটের একটি কক্ষে নিয়ে যান। সেখানে দুজন উপস্থিত হন এবং তারা শাহনাজের বান্ধবী বলে পরিচয় করে দেন। তাদের সঙ্গে কথা বলার সময় অজ্ঞাতপরিচিত ৫-৬ জন পুরুষ লোক তার বসার কক্ষে প্রবেশ করেন এবং তারা নিজেদের ডিবি পুলিশের লোক বলে পরিচয় দেন। তাদের মধ্যে কয়েকজন হঠাৎ ভুক্তভোগীকে মারধর শুরু করেন। তার কাপড় খুলে ফেলা হয়। এরপর তাদের মধ্যে কেউ একজন তাকে উলঙ্গ অবস্থায় মহিলাদের পাশে দাঁড় করে ক্যামেরায় ভিডিও ধারণ করেন। পরে তার কাছে ২০ লাখ টাকা দাবি করেন। তার কাছে থাকা ৬ হাজার টাকা, ব্র্যাক ব্যাংকের ডেবিট কার্ড এবং ক্রেডিট কার্ড জোরপূর্বক হাতিয়ে নেন। ভুক্তভোগী প্রাণনাশের ভয়ে তাদের দুটি কার্ডের পিন কোড দিয়ে দেন।
এ ঘটনায় ভুক্তভোগী রাজধানীর উত্তরা পূর্ব থানায় মামলা করেন। মামলার পর গত ১৭ আগস্ট চারজনকে গ্রেপ্তার করে ডিবি পুলিশ। পরদিন ১৮ আগস্ট আদালত প্রত্যেকের পাঁচ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
মন্তব্য করুন