অমর একুশে বইমেলা দিন দিন জমে উঠছে। মেলার ২০তম দিনে প্রাঙ্গণজুড়ে ছিল বইপ্রেমীর ভিড়। কেউ এসেছেন বন্ধুদের সঙ্গে, কেউবা পরিবারের সদস্যদের নিয়ে। বিকেল গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে ভিড় আরও বাড়তে থাকে, আর রাতের দিকে মেলা হয়ে ওঠে উৎসবমুখর। পাঠকদের পদচারণায় প্রাণ ফিরে পেয়েছে স্টলগুলো, বিক্রিও বেড়েছে উল্লেখযোগ্য হারে। তবে অমর একুশে ফেব্রুয়ারিকে কেন্দ্র করে আজ রেকর্ড বিক্রির প্রত্যাশায় লেখক ও প্রকাশকরা।
মেলার শুরুর দিকে সাধারণত দর্শনার্থীদের সংখ্যাই বেশি থাকে। ফলে মেলায় ভিড় থাকলেও বিক্রির পরিমাণ তুলনামূলক কম হয়। অনেকেই বইয়ের স্টল ঘুরে দেখেন, তালিকা করেন, কিন্তু কেনেন না। তবে সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে দৃশ্যপট বদলেছে। এখন দর্শনার্থীদের পাশাপাশি বইপ্রেমী ক্রেতার সংখ্যাও বাড়ছে।
বিক্রেতারা বলছেন, সবাই একুশে ফেব্রুয়ারিকে টার্গেট করে বইয়ের অনেক পসরা সাজান। আজ কাঙ্ক্ষিত সেই দিন। আজ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে শুক্রবার এবং সরকারি ছুটির দিন হওয়ায় মেলায় ঢল নামবে বইপ্রেমীর। এতে বেচাবিক্রিও বেশ জমবে বলে মনে করছেন সবাই।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, ক্রেতা-দর্শনার্থীদের এমন উৎসাহ-উদ্দীপনায় উচ্ছ্বসিত লেখক ও প্রকাশকরা। তাদের মতে, মেলায় জনসমাগম বেশ ভালো। পাঠকরা শুধু ঘুরতেই আসছেন না, বরং বই দেখছেন, কিনছেন এবং পছন্দের লেখকদের কাছ থেকে স্বাক্ষর নিচ্ছেন।
অবসর প্রকাশনার প্রকাশক নূর ই মোন্তাকিম
আলমগীর কালবেলাকে বলেন, ২১ তারিখ থেকে মেলায় পাঠকের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়তে থাকে। যারা সত্যিকারের বইপ্রেমী, তারা মেলার প্রথম দিকটা বই ঘুরে দেখা, পছন্দের তালিকা তৈরি করা এবং নতুন বই সম্পর্কে জানার কাজে ব্যয় করেন। তারা স্টল ঘুরে ঘুরে বই পড়েন, প্রকাশকদের সঙ্গে কথা বলেন এবং বিভিন্ন লেখকের বই নিয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেন। তবে কেনাকাটার মূল ধাপ শুরু হয় মেলার শেষ ভাগে, যখন তারা পরিকল্পিত তালিকা অনুযায়ী বই সংগ্রহ করেন। মেলার ২০তম দিনে পাঠকদের উপস্থিতি দেখে আমরা অত্যন্ত আনন্দিত। পাঠকদের এমন সাড়া লেখক ও প্রকাশকদের জন্য অনুপ্রেরণার বিষয়, যা মেলার পরিবেশকে আরও প্রাণবন্ত করে তুলছে। আশা করছি, শেষের দিকে এই আগ্রহ আরও বাড়বে এবং বই বিক্রিও ভালো হবে।
সাহিত্য প্রকাশের প্রকাশক মফিদুল হক বলেন, এবারের মেলায় আগের তুলনায় বই বিক্রির পরিমাণ বেড়েছে, যা আমাদের জন্য বেশ ইতিবাচক। মূল ক্রেতারা সাধারণত শেষের দিকেই বেশি আসেন। ফলে মেলার শেষ ভাগে বিক্রি স্বাভাবিকভাবেই বৃদ্ধি পায়। আগের তুলনায় এবার দর্শনার্থীর পাশাপাশি বইপ্রেমী ক্রেতার সংখ্যাও বেড়েছে, যা প্রকাশকদের জন্য আনন্দের বিষয়। আশা করছি, মেলার শেষ কয়েক দিনে এ প্রবণতা আরও বাড়বে।
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী মাহমুদুল হাসান বলেন, বইমেলার শুরু থেকেই ঘুরে দেখছি, নতুন কী কী বই এসেছে তা জানার চেষ্টা করছি। শুরুতে শুধু তালিকা করেছি, এখন কেনার সময় এসেছে। আজ (গতকাল) কয়েকটি বই কিনেছি। আফসার ব্রাদার্স প্রকাশনী থেকে সাহাদত হোসেন খানের চব্বিশের গণঅভ্যুত্থান, বাইজান্টাইন সাম্রাজ্যের পতন বই দুটি নিয়েছি। আরও কিছু নেব মেলার শেষ দিকে। প্রিয় লেখকদের নতুন বই তো অবশ্যই কেনার পরিকল্পনা আছে। মেলায় এখন ভিড় যেমন বাড়ছে, তেমনি বিক্রিও ভালো হচ্ছে বলে মনে হচ্ছে।
চাকরিজীবী সাবরিনা ইসলাম কালবেলাকে বলেন, সাধারণত মেলার মাঝামাঝি বা শেষ দিকে বই কিনতে আসি। আজ (গতকাল) কয়েকটি বই নিয়েছি, তবে ২১ ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে আরও কিছু বই কেনার ইচ্ছা আছে। স্টলগুলোতে ভিড়ও বাড়ছে, বিক্রেতারাও বলছেন যে, বই বিক্রি ভালো হচ্ছে। এটা আমাদের জন্য আনন্দের, কারণ পাঠকরা বইমেলায় শুধু ঘুরতে আসছেন না, বইও কিনছেন।