নড়াইলের ঐতিহ্যবাহী গোয়ালবাথান মসজিদটি ৫০০ বছর ধরে প্রাচীন ঐতিহ্য বহন করে আসছে। স্থানীয়রা বলছেন, এটিই বৃহত্তর যশোরের সবচেয়ে পুরাতন মসজিদ।
জানা গেছে, নড়াইল সদর উপজেলার চন্ডিবরপুর ইউনিয়নের একটি গ্রামের নাম গোয়ালবাথান। জেলা সদর থেকে ৭ কিলোমিটার পূর্ব দিকে চালিতাতলা বাজার পার হয়ে গোয়ালবাথান গ্রাম পড়ে। এ ছাড়া এক কিলোমিটার রাস্তা সোজা গিয়ে ডানদিকে গেলেও গোয়ালবাথান গ্রাম পড়ে। ধুড়িয়া গ্রামে যাওয়ার পথে রাস্তার বামপাশে নীল রঙের ছোট একটি মসজিদ। এটাই গোয়ালবাথান মসজিদ। বৃহত্তর যশোর জেলার সবচেয়ে পুরোনো মসজিদ। ৫ একর ৭০ শতক জায়গার ওপর নির্মিত মসজিদটি দৈর্ঘ্যে ৫০ ফুট এবং প্রস্থে ৩৫ ফুট। ছোট ছোট ইট আর চুন-সুরকির গাঁথুনিতে এক গম্বুজবিশিষ্ট মসজিদ। উপরে চারটি ছোট মিনার রয়েছে। আছে বজ্রপাত নিরোধক লোহার দণ্ড। নেই কোনো পিলার। কোনো রডের ব্যবহার ছাড়াই মসজিদের গম্বুজটি অপূর্ব স্থাপত্য নির্মাণশৈলী হয়ে আজও দাঁড়িয়ে আছে।
স্থানীয়রা জানান, মোগল শাসনামলে প্রায় ৫০০ বছর আগে একদিন এ গ্রামে এসে বসবাস শুরু করেন মুন্সি হয়বৎউল্লাহ নামে এক ব্যক্তি। এর কিছুদিন পর তিনি ওই স্থানে এ মসজিদ এবং এর সংলগ্ন একটি পুকুর খনন করেন। সেই থেকে ওই গ্রামে আস্তে আস্তে জনবসতি শুরু হয় এবং ওই স্থানসহ আশপাশের এলাকার মুসলিম সম্প্রদায় ওই মসজিদে নিয়মিত নামাজ আদায় করতে থাকে।
এলাকাবাসী জানান, এ এলাকায় কোনো মানুষের বসতি ছিল না। বাগানে ভরা ছিল এলাকাটি। মুন্সি হয়বৎউল্লাহই গ্রামের প্রথম বাসিন্দা ছিলেন। তার বসবাস শুরুর পর তিনি মসজিদ নির্মাণ এবং তার সঙ্গে লাগোয়া একটি পুকুর খনন করান। মসজিদটি তৈরির সঠিক সময়কাল বলতে পারেন না এলাকাবাসী। তাদের ধারণা প্রায় সাড়ে ৪০০ বছর থেকে ৫০০ বছরের পুরাতন মসজিদ এটি।
এক সময়ে পায়ে হাঁটা পথে দূর থেকে হেঁটেও মুসল্লিরা শুক্রবারে জুমার নামাজ আদায় করতে আসতেন এখানে। তারা এখানে এসে খাওয়া-দাওয়া করতেন এবং মুন্সি হয়বৎউল্লাহ সাহেবের আশ্রয়ে থেকে আবার চলে যেতেন।
মসজিদের নিয়মিত মুসল্লি মো. সুলতান কাজী জানান, আমরা নিয়মিত এই মসজিদে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করি। মসজিদটি চুন-সুরকি দিয়ে তৈরি করা যার কারণে শীতের সময় মসজিদের ভেতরে গরম অনুভব হয় আর গরমের সময় শীত অনুভব হয়।
গোয়ালবাথান জামে মসজিদের প্রতিষ্ঠাতা মুন্সি হয়বৎউল্লাহর বংশধর মুন্সি হাসমত বলেন, আমাদের পূর্বপুরুষরা এই মসজিদটি নির্মাণ করেছিলেন প্রায় ৫০০ বছরের আগে। তখন এখানে শুক্রবারে নামাজ পড়ার জন্য আগে থেকে মুসল্লিরা এসে এখানে থাকতেন। নামাজ পর এখানে গরু জবাই করে রান্না করে মুসল্লিদের খাওয়ানো হতো। খাওয়া-দাওয়া শেষ করে মুসল্লিরা যে যার গন্তব্যে চলে যেত।
মুন্সি হয়বৎউল্লাহর বংশধর মুন্সি তফসির উদ্দিন বলেন, এই মসজিদের যেমন উন্নয়ন হওয়ার কথা ছিল, তা হয়নি। আমরা জেলা পরিষদসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে চেয়ে অর্থ এনে মসজিদটি সংস্কার করছি। মসজিদে একটি ভালো বাথরুম কিংবা পানির ব্যবস্থা নেই। এসব সমস্যা সমাধানের দাবি জানান তিনি।
গোয়ালবাথান জামে মসজিদ কমিটির সাধারণ সম্পাদক এইচ এম তৈয়েবুর রহমার বলেন, গোয়ালবাথান মসজিদটি একটি ঐতিহ্যবাহী মসজিদ। এখানে তেমন কোনো উন্নয়ন হয়নি। দেশের পুরাতন স্থাপনাগুলো সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর সংরক্ষণ করে থাকে; কিন্তু এই মসজিদটি নিয়ে তাদের কোনো কার্যক্রম আমরা দেখছি না। অবিলম্বে মসজিদটি প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে সংরক্ষণ করে বিভিন্ন প্রকার উন্নয়নের দাবি জানান।
মন্তব্য করুন