মো. আবু জুবায়ের উজ্জল, টাঙ্গাইল
প্রকাশ : ০৪ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০০ এএম
আপডেট : ০৪ এপ্রিল ২০২৫, ০৮:৫৬ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

অবৈধ দখলদাররা পুড়িয়ে দিচ্ছে শাল-গজারি বন

অবৈধ দখলদাররা পুড়িয়ে দিচ্ছে শাল-গজারি বন

টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলার সংরক্ষিত শাল-গজারি বনাঞ্চলে স্থানীয়দের দেওয়া আগুনে পুড়ছে গাছপালা ও লতা-গুল্ম। বন ধ্বংসের এই ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য। হুমকির মুখে পড়েছে সরকারের ‘টেকসই বন ও জীবিকা (সুফল)’ প্রকল্পও। গত কয়েক সপ্তাহে সখীপুরের বিভিন্ন সংরক্ষিত বনে এমন চিত্র চোখে পড়েছে।

বন বিভাগ জানায়, টাঙ্গাইলে ৩৭ হাজার একর বনভূমি এরই মধ্যে বেদখলে চলে গেছে। এ ছাড়া বনের ভেতরে ৪২টি অবৈধ করাতকল নিয়মিতভাবে বন উজাড় করছে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, বন বিভাগের অসাধু কিছু কর্মকর্তার সহযোগিতায় এসব করাতকল দীর্ঘদিন ধরে চালু রয়েছে। যদিও দৃশ্যমান কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করতে দেখা যায়নি।

সরকারের ‘সুফল’ প্রকল্পের আওতায় সখীপুরের ৭২০ হেক্টর বনভূমিতে আমলকী, লটকন, হরীতকী, নিম, বহেড়া, গর্জন, গাদিলা, পিতরাজ, সোনালু, মহুয়া, কাঠবাদাম, গামার, শিমুল, বেল, তেঁতুল, অর্জুনসহ ৪২ প্রজাতির প্রায় ১০ লাখ ৮০ হাজার ফলদ ও ঔষধি গাছের চারা রোপণ করা হয়েছে।

তবে, সম্প্রতি যেসব বনে আগুন দেওয়া হয়েছে, সেখানে এসব চারাগাছ সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। এর ফলে প্রাণ হারাচ্ছে বনের মধ্যে থাকা বানর, বেজি, হনু বিড়াল, কাঠবিড়ালি, শিয়াল, চিল, শালিক, ঘুঘু ও অন্যান্য পাখি এবং গুইসাপ, শঙ্খচূড় সাপসহ নানা প্রজাতির সরীসৃপ। ফলে তাদের নিরাপদ আবাসস্থলও ধ্বংস হচ্ছে।

বন জ্বালানোর পেছনের কারণ: স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, প্রতি বছর চৈত্র-বৈশাখ মাসে গজারি গাছের পাতা ঝরে পড়লে এলাকার কিছু মানুষ ঝোপঝাড় পরিষ্কার করতে এবং পাতা ও ছোট গাছ সংগ্রহ করে রান্নার জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করতে আগুন ধরিয়ে দেয়।

দেওবাড়ি গ্রামের বাসিন্দা রিপন মিয়া বলেন, ‘এটা প্রতি বছরের ব্যাপার। পাতাগুলো শুকিয়ে পড়লে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। এতে ঝোপঝাড় পরিষ্কার হয়, আর জ্বালানি পাওয়া যায়।’

বিশেষজ্ঞ ও কর্মকর্তাদের মতামত: হাতিয়া ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ রহিজ উদ্দিন বলেন, ‘বনে আগুন দিলে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হয় এবং প্রাকৃতিক জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়ে। এই প্রচলিত অভ্যাস পরিত্যাগ করা উচিত।’

হতেয়া রেঞ্জ কর্মকর্তা এস এম আব্দুর রশিদ জানান, ‘আমার এলাকায় হৃদয় হাসান নামে একজনকে বন আইনে মামলা দেওয়া হয়েছে। তিনি সম্প্রতি বনে আগুন দিয়েছেন।’

বহেড়াতৈল রেঞ্জ কর্মকর্তা ইমরান হাসান বলেন, ‘শুকনো মৌসুমে আগুন লাগানোর প্রবণতা বাড়ে। তবে এ বছর সুফল প্রকল্পের চারাগাছ রক্ষায় আমরা পাহারাদার বাড়িয়েছি।’

বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ড. মো. আবু নাসের মহসিন বলেন, ‘কয়েকদিন ধরে কিছু অসাধু ব্যক্তি পরিকল্পিতভাবে আগুন দিচ্ছে। এরই মধ্যে তিনটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে। অনেক সময় গাছের পাতা পুড়িয়ে ছাই জমিতে ব্যবহার করতে স্থানীয়রা আগুন লাগায়।’

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

প্রতিজ্ঞা ভেঙে হোয়াইট হাউসে স্যুট পরে হাজির জেলেনস্কি

এনসিপি থেকে বহিষ্কার হয়ে মাহিনের ‘বিস্ফোরক’ মন্তব্য

বেরোবিতে তৃতীয় দিনেও অনশন চলছে, গঠনতন্ত্র চূড়ান্তে ইউজিসির সভা বৃহস্পতিবার

মাটির নিচে মিলল পিস্তল-গুলি

জুলাই গণহত্যার আসামির জামিন বিষয়ে আইন উপদেষ্টার বক্তব্য

নামাজরত ব্যক্তির সামনে দিয়ে যাওয়া-আসা করলে কি ৪০ দিনের ইবাদত নষ্ট হয়ে যায়?

হঠাৎ অবসরে যাওয়ার ঘোষণা দিলেন মার্কিন বিমানবাহিনীর প্রধান

ইসিকে ৪০ লাখ ইউরো সহায়তা দেবে ইইউ

ভারতীয়রা কেন অন্ধভাবে ইসরায়েলকে সমর্থন করে?

আ.লীগ কার্যালয়ে এবার বাংলাদেশ প্রেস ক্লাবের সাইনবোর্ড

১০

চমক রেখে ভারতের এশিয়া কাপ স্কোয়াড ঘোষণা

১১

স্কুল-কলেজে শিক্ষার্থীদের মোবাইল ফোন ব্যবহার নিষিদ্ধ

১২

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ে নতুন সচিব

১৩

ভারতে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী : দুই দেশের সম্পর্ক কি স্বাভাবিক হবে?

১৪

প্রধান বিচারপতির সঙ্গে ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারাহ কুকের সাক্ষাৎ

১৫

সাতক্ষীরা সীমান্তে বিজিবির বিশেষ অভিযানে ভারতীয় মালামাল জব্দ

১৬

ডাকসু নির্বাচন / বাম ছাত্র সংগঠনগুলোর সম্মিলিত প্যানেল ঘোষণা

১৭

‘দেখামাত্র গুলির নির্দেশ’ বার্তা ফাঁসকারী পুলিশ সদস্য রিমান্ডে

১৮

যুক্তরাষ্ট্রে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের মধ্যে স্বপ্নভঙ্গের হতাশা

১৯

ভিসা নিয়ে অস্ট্রেলিয়াকেও পাল্টা জবাব দিল ইসরায়েল

২০
X