রাশিয়ার ভাড়াটে সেনাবাহিনী ওয়াগনার গ্রুপের প্রধান ইয়েভগিনি প্রিগোজিনের উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হয়ে মারা যাওয়ার ঘটনা ঘিরে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। গত বুধবার রাশিয়ার রাজধানী মস্কো থেকে সেন্টপিটার্সবার্গ যাওয়ার পথে তিয়েভের অঞ্চলে উড়োজাহাজটি বিধ্বস্ত হলে প্রিগোজিনসহ ১০ জন নিহত হন।
তবে দুর্ঘটনার পর থেকে প্রশ্ন উঠেছে—এটি আসলেই কোনো দুর্ঘটনা নাকি পরিকল্পিতভাবে এটি ভূপাতিত করা হয়েছে। রুশ মিডিয়া বলছে, প্রিগোজিনের উড়োজাহাজে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়েছিল। ওয়াগনার গ্রুপ দাবি করেছে, রাশিয়ার সামরিক বাহিনী উড়োজাহাজটিকে গুলি করে ভূপাতিত করেছে। যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষা সূত্রও বলেছে, রাশিয়ার অভ্যন্তরীণ গোয়েন্দা সংস্থা এফএসবি খুব সম্ভবত এ ঘটনা ঘটিয়েছে। তবে বিশ্বজুড়ে সাড়া ফেলে দেওয়া এ ঘটনার পর এখনো মুখ খোলেননি রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। খবর বিবিসি ও সিএনএনের।
রাডারের তথ্য থেকে জানা গেছে, উড়োজাহাজটি বিধ্বস্ত হওয়ার ৩০ সেকেন্ড আগেও এতে কোনো ধরনের সমস্যা ছিল না। হঠাৎ করেই সেটি খাড়াভাবে মাটিতে আছড়ে পড়ে। রাশিয়ার বিমান চলাচল সংস্থা রোসাভিয়াৎসিয়া দুর্ঘটনার পরপরই জানায়, বিধ্বস্ত উড়োজাহাজে ওয়াগনার প্রধান ইয়েভগিনি প্রিগোজিন ছিলেন। মস্কো থেকে সেন্টপিটার্সবার্গ যাওয়ার সময় মস্কোর তিয়েভের অঞ্চলের কুজেনকিনো গ্রামে উড়োজাহাজটি বিধ্বস্ত হয়। প্লেন হঠাৎ করেই মাটিতে আছড়ে পড়ার ব্যাপারে ফ্লাইটরাডার২৪-এর ইয়ান পেটচিনিক বলেছেন, গ্রিনিচ মান সময় দুপুর ৩টা ১৯ মিনিটে প্লেনটি বিধ্বস্তের ৩০ সেকেন্ড আগে ‘হঠাৎ খাড়াখাড়িভাবে’ নিচু হয়ে যায়। এটি ২৮ হাজার ফুট উচ্চতা থেকে ৮ হাজার ফুট খাড়াভাবে নামে। যা হয়েছে, খুব দ্রুত হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘প্লেনটিতে কী হয়েছে, এখন এ নিয়ে হয়তো তাদের মধ্যে বিতর্ক চলছে। কিন্তু হঠাৎ করে পড়ে যাওয়ার আগে প্লেনটিতে কোনো ধরনের গোলযোগের আলামত ছিল না।’ ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, প্লেনটির খুব দ্রুত গতিতে নিচে নেমে আসছে এবং এটির নাক প্রায় সোজা বরাবর নিচের দিকে ছিল। এ ছাড়া প্লেনটির পেছনের দিকে ধোঁয়ার কুণ্ডলী দেখা যাচ্ছিল। দুর্ঘটনার কারণ জানতে ইতোমধ্যে তদন্ত শুরু করেছে। তবে পরিচয় গোপন রাখার শর্তে কিছু সূত্র রাশিয়ার সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছে, তাদের বিশ্বাস প্লেনটি এক বা একাধিক সারফেস টু এয়ার ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে ভূপাতিত করা হয়েছে। ওয়াগনার গ্রুপের টেলিগ্রাম চ্যানেল গ্রে জোনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাশিয়ার সামরিক বাহিনী ওই উড়োজাহাজটিকে গুলি করে ভূপাতিত করেছে। অবশ্য তারা তাদের দাবির বিষয়ে কোনো প্রমাণ হাজির করেনি। এদিকে যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষা সূত্র বলেছে, রাশিয়ার অভ্যন্তরীণ গোয়েন্দা সংস্থা এফএসবি (কেজিবির উত্তরসূরি) খুব সম্ভবত ওই উড়োজাহাজকে টার্গেট করেছিল।
রাশিয়ার মানুষের প্রতিক্রিয়া কী : প্রিগোজিন ও ওয়াগনার সেনাদের প্রতি সাধারণ রুশ মানুষের যে সমর্থন রয়েছে, সেটা ব্যর্থ অভুত্থানের সময় দেখা গিয়েছিল। ওই সময়ের ভিডিওতে দেখা যায়, ওয়াগনার গ্রুপ স্বল্প সময়ের জন্য যেসব শহর দখল করেছিল, সেখানকার বাসিন্দারা তাতে উল্লাস প্রকাশ করছেন। তারা ওয়াগনার সেনাদের সঙ্গে ছবি তুলছেন। বিপুলসংখ্যক মানুষ প্রিগোজিনের গাড়ি থামিয়ে তার সঙ্গে করমর্দন করছেন। বুধবারের ঘটনার পর প্রিগোজিনের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে ফুল, মোমবাতি ও ওয়াগনারের প্রতীক নিয়ে সেন্টপিটার্সবার্গে জড়ো হতে দেখা যায়। ভিডিওতে দেখা যায়, ওয়াগনারের সদর দপ্তর ‘ওয়াগনার পিএমসি’-এর বাইরে বিরাট ব্যানার নিয়ে জড়ো হয়েছে অসংখ্য মানুষ। ব্যানারে লেখা রয়েছে—‘আমরা একসঙ্গে আছি’। সদর দপ্তরের সামনে গতকাল বৃহস্পতিবারও তরুণ, দম্পতি, কিশোর-কিশোরীসহ প্রচুর মানুষকে ওয়াগনার প্রধানের প্রতি শোক জানাতে দেখা যায়।
বিভিন্ন দেশের প্রতিক্রিয়া : ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা মিখাইলো পোদোলিয়াক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছেন, ক্রেমলিনের প্রতি যাদের আনুগত্য নেই তাদের প্রতি একটি বার্তা এই বিমান বিধ্বস্তের ঘটনা। তিনি বলেছেন, ‘বিদ্রোহের দুই মাস পর ওয়াগনার কমান্ডারের মৃত্যুর মাধ্যমে পুতিনের পক্ষ থেকে রাশিয়ার এলিট সমাজের প্রতি ২০২৪ সালের নির্বাচনের আগে একটি বার্তা দেওয়া হয়েছে, ‘সতর্ক থাকুন, অনানুগত্যর শাস্তি মৃত্যু।’ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন জানিয়েছেন, প্রিগোজিন বিমান দুর্ঘটনায় মারা গেছেন—এমন খবরে তিনি ‘অবাক’ হননি। যুক্তরাজ্যের উচ্চপদস্থ কেউ এখনো এ ব্যাপারে মন্তব্য না করলে দেশটির আইনসভার সদস্য এলিসিয়া কিয়ার্নস এমপি বলেছেন, এ ঘটনায় তারা বিস্মিত নন। পোল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জিগনি রাও বলেছেন, যারা পুতিনের ক্ষমতাকে হুমকি দেয় ‘তাদের স্বাভাবিক মৃত্যু হয় না। আমরা কাউকে পাব না যে বলবে এটি কাকতালীয় ঘটনা ছিল।’ এস্তোনিয়ার প্রধানমন্ত্রী কাজা কালাস বলেছেন, ‘পুতিন বিরোধীদের সরিয়ে দেবেন। তাই এ ঘটনায় অবাক হওয়ার কিছু নেই।
মন্তব্য করুন