মঙ্গলবার, ১৯ আগস্ট ২০২৫, ৪ ভাদ্র ১৪৩২
মাহমুদুল হাসান
প্রকাশ : ২৬ আগস্ট ২০২৩, ০২:১৪ এএম
আপডেট : ২৬ আগস্ট ২০২৩, ০৩:২৬ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ডেঙ্গুতে আরও ১৪ জনের মৃত্যু

মৃত্যু বেশি ঢাকায় রোগী বেশি গ্রামে

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

জলবায়ু পরিবর্তনে বিশ্বব্যাপী দাপট বেড়েছে মশাবাহিত রোগের। দেশে ২৩ বছর ধরেই ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব। কিন্তু নিয়ন্ত্রণের কার্যকর উদ্যোগ নেই এত বছরেও। ফলে গত ছয় বছরে শহর থেকে গ্রামে ছড়িয়ে পড়েছে ডেঙ্গু। চলতি মৌসুমে ঢাকার বাইরে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বেড়েছে আশঙ্কাজনকভাবে। ২০১৯ সালে রোগটির ভয়াবহতা ছিল সবচেয়ে বেশি। কিন্তু সে বছরের চেয়েও এবার গ্রামে ডেঙ্গুর থাবা ভয়ানক। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, গতকাল ২৫ আগস্ট পর্যন্ত রাজধানীসহ সারা দেশের হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ১ লাখ ১০ হাজার ২২৪ জনের অধিকাংশই গ্রামের। পরিসংখ্যান বলে, মোট রোগীর ৫৭ হাজার ৫৬৮ জন ঢাকার বাইরের। আবার ডেঙ্গুতে মারা যাওয়া ৫২৮ জনের ৩৯১ জন রাজধানীর। ঢাকার বাইরে মারা গেছেন মাত্র ১৩৭ জন।

এদিকে আবহাওয়ার পূর্বাভাস ও জলবায়ুর প্রভাবজনিত কারণ বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, আগামী নভেম্বর পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গুর প্রকোপ থাকতে পারে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, গত ২২ বছরে হাসপাতালে ভর্তি ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা এ বছর ছাড়িয়ে যেতে পারে। এখনই কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া না হলে আক্রান্ত কিংবা মৃত্যু আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করবে। কীটতত্ত্ববিদ ও জনস্বাস্থ্যবিদদের মতে, ডেঙ্গুর বিস্তার তৃণমূলে পৌঁছে গেছে। শহুরে রোগটি গ্রামান্তরে ছড়িয়ে পড়েছে। এখন থেকে ডেঙ্গুর সঙ্গে লড়াই করেই বাঁচতে হবে। দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ছাড়া এ রোগ থেকে রক্ষা মিলবে না।

সর্বশেষ ডেঙ্গু পরিস্থিতি সম্পর্কে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, দেশে ডেঙ্গুতে গতকাল শুক্রবার আরও ১৪ জন মারা গেছেন। সংক্রমিত হয়েছেন ১ হাজার ৫৯৪ জন। এ নিয়ে চলতি বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে এ পর্যন্ত ৫২৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। আক্রান্তদের মধ্যে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৭০৩ আর বাইরের বিভিন্ন হাসপাতালে ৮৯১ জন। গতকাল শুক্রবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের ইনচার্জ ডা. মুহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

এতে বলা হয়, বর্তমানে দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে মোট ৭ হাজার ৯৩৪ ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসাধীন। ঢাকার সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ৩ হাজার ৭৫৫ এবং অন্য বিভাগে ৪ হাজার ১৭৯ ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি আছেন। চলতি বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে সারা দেশে এখন পর্যন্ত ১ লাখ ১০ হাজার ২২৪ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। এর মধ্যে ঢাকায় ৫২ হাজার ৬৫৬ এবং ঢাকার বাইরে ৫৭ হাজার ৫৬৮ জন। হাসপাতাল থেকে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ১ লাখ ১ হাজার ৭৬২ জন। তার মধ্যে ঢাকায় ৪৮ হাজার ৫১০ এবং ঢাকার বাইরে ৫৩ হাজার ২৫২ জন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডেঙ্গুবিষয়ক দুই দশকের আক্রান্তের হিসাবে দেখা গেছে, ২০০০ সালে ৫ হাজার ৫৫১ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হন। এরপর ২০০১ সালে ২ হাজার ৪৩০, ২০০২ সালে ৬ হাজার ৩৩২, ২০০৩ সালে ৪৮৬, ২০০৪ সালে ৩ হাজার ৯৩৪, ২০০৫ সালে ১ হাজার ৪৮, ২০০৬ সালে ২ হাজার ২০০, ২০০৭ সালে ৪৬৬, ২০০৮ সালে ১ হাজার ১৫১, ২০০৯ সালে ৪৭২, ২০১০ সালে ৪০৯, ২০১১ সালে ১ হাজার ৩৫৯, ২০১২ সালে ৬৪১, ২০১৩ সালে ১ হাজার ৭৪৯, ২০১৪ সালে ৩৭৫, ২০১৫ সালে ৩ হাজার ১৬২, ২০১৬ সালে ৬ হাজার ৬০, ২০১৭ সালে ২ হাজার ৭৬৯, ২০১৮ সালে ১০ হাজার ১৪৮, ২০১৯ সালে ১ লাখ ১ হাজার ৩৫৪, ২০২০ সালে ১ হাজার ৪০৫, ২০২১ সালে ২ লাখ ৮ হাজার ৪২৯, ২০২২ সালে ৬১ হাজার ৮৯ এবং ২০২৩ সালের ২৫ আগস্ট পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১ লাখ ১০ হাজার ২২৪ জন রোগী।

মৃত্যুর হিসাবে দেখা যায়, ২০০০ সালে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা যান ৯৩ জন। ২০০১ সালে ৪৪, ২০০২ সালে ৫৮, ২০০৩ সালে ১০, ২০০৪ সালে ১৩, ২০০৫ সালে ৪, ২০০৬ সালে ১১ জন মারা যান ডেঙ্গুতে। তবে ২০০৭ থেকে ২০১০ পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি। আবার ২০১১ সালে মারা যান ৬ জন। পরে ২০১২ সালে একজন, ২০১৩ সালে দুজন মারা যান। ২০১৪ সালে ডেঙ্গুতে কারও মৃত্যু হয়নি। ২০১৫ সালে ছয়জন মারা যান। ২০১৬ সালে ১৪, ২০১৭ সালে ৮, ২০১৮ সালে ২৬, ২০১৯ সালে ১৭৯, ২০২০ সালে ৭, ২০২১ সালে ১০৫, ২০২২ সালে ২৮১ এবং ২০২৩ সালের ২৫ আগস্ট পর্যন্ত ৫২৮ জনের মৃত্যু হয়।

ডেঙ্গুর বিস্তার সম্পর্কে কীটতত্ত্ববিদ এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক কবিরুল বাশার কালবেলাকে বলেন, সারা দেশেই এডিস মশা ছড়িয়ে পড়েছে। কোনো রোগ যখন সর্বাঙ্গে ছড়িয়ে পড়ে, তখন সেটা নির্মূল করা সম্ভব হয় না। মশক নিধনের ১০ বছর মেয়াদি মাস্টার প্ল্যান করা দরকার।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার সাবেক পরিচালক ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. বে-নজির আহমেদ বলেন, ডেঙ্গু সংক্রমণ বৃদ্ধির সঙ্গে জলবায়ু তথা বৃষ্টিপাত, তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা সবকিছুই সম্পৃক্ত। ২০১৪ সাল পর্যন্ত রাজধানীর বিত্তশালী এলাকায় ডেঙ্গুর প্রকোপ থাকলেও এখন সেখানে সীমাবদ্ধ নেই।

তিনি আরও বলেন, গত ২৩ বছরেও ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হয়নি। ঘাটতি হিসেবে কারিগরি জ্ঞান, লোকবল ও দক্ষতার অভাবকে দায়ী করেন। জাতীয় কর্মকৌশল প্রণয়ন করে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হলে এ রোগের হাত থেকে বাঁচা সম্ভব হবে বলে পরামর্শ এই বিশেষজ্ঞের।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

এশিয়া কাপের আগে ভারত দলে দুঃসংবাদ

দুই দাবিতে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা মুক্তিযোদ্ধা পরিবার ও বস্তিবাসীদের

আ.লীগ নেতা এফএম শরীফুল গ্রেপ্তার

ছাত্রদলকে সুবিধা দিতেই মনোনয়নপত্র গ্রহণের সময় বৃদ্ধি : বাগছাস

এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতা মাহিন সরকারকে বহিষ্কার

ডাকসু নির্বাচন / ‘দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের পর আকাঙ্ক্ষা পূরণ হতে যাচ্ছে’

এক ফ্যান এক বাতিতে বিদ্যুৎ বিল এক লাখ ৬৭ হাজার টাকা!

চমক রেখেই বাছাইপর্বের শেষ দুই ম্যাচের প্রাথমিক দল ঘোষণা আর্জেন্টিনার

মাকে বাঁচাতে গিয়ে প্রাণ গেল শিশু সন্তানেরও

মব সৃষ্টি করে বাধা, ছাত্রদলের অভিযোগের তদন্তে কমিটি গঠন 

১০

গুলশানে সাংবাদিক মুনজুরুল করিমের কফিশপ ভাঙচুর

১১

মাভাবিপ্রবিতে বাংলাদেশ-চীন অর্থনৈতিক অংশীদারত্ব বিষয়ে সেমিনার

১২

ছিনতাইয়ের ২ ঘণ্টার মধ্যে অটোরিকশা উদ্ধার

১৩

মিরসরাইয়ে পানিতে ডুবে ২ শিশুর মৃত্যু

১৪

মনোয়ারুল কাদির বিটুর নেতৃত্বে ড্যাবের কেন্দ্রীয় কমিটিকে ফুলেল শুভেচ্ছা 

১৫

৩২ নম্বরে ফুল দিতে এসে গ্রেপ্তার সেই রিকশাচালক কারামুক্ত

১৬

গাজার সর্বশেষ যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে রাজি হামাস

১৭

হ্যাটট্রিক নায়ক সনি বেকার: ইংল্যান্ডের পেস আকাশে নতুন তারা

১৮

জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধনে বর্ষসেরা দুমকির ইউএনও ইজাজুল হক

১৯

চরম শত্রু থেকে পরম বন্ধু হতে যাচ্ছে চীন-ভারত?

২০
X