কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৯ মে ২০২৫, ১২:০০ এএম
আপডেট : ২৯ মে ২০২৫, ০৭:৪৩ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

‘আমার পাওয়ার দরকার নাই পাওয়ার আমার পিছে ঘোরে’

৮ দিনের রিমান্ডে সুব্রত বাইন
‘আমার পাওয়ার দরকার নাই পাওয়ার আমার পিছে ঘোরে’

রাজধানীর হাতিরঝিল থানার অস্ত্র আইনের মামলায় শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইনের আট দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। একই সঙ্গে তার সহযোগী আবু রাসেল মাসুদ ওরফে মোল্লা মাসুদ, আরাফাত ইবনে নাসির ওরফে শুটার আরাফাত ও এমএএস শরীফের ছয় দিন করে রিমান্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত। গতকাল বুধবার শুনানি শেষে ঢাকার অতিরিক্ত মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. জাকির হোসাইন এ আদেশ দেন। এ সময় আদালতে সুব্রত বাইন বলেন, ‘আমার কোনো পাওয়ার নাই। পাওয়ার দরকারও নাই। পাওয়ার আমার পিছে ঘোরে। সর্বশ্রেষ্ঠ পাওয়ারকে আমি সেজদাহ করি।’

গতকাল দুপুরে সুব্রত বাইনসহ পাঁচ আসামিকে কড়া নিরাপত্তায় আদালতে হাজির করা হয়। এ সময় তাদের হাতে হাতকড়া, মাথায় হেলমেট, বুকে বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট পরানো ছিল। পরে পৌনে ৪টার দিকে কাঠগড়ায় নিয়ে তাদের হেলমেট ও এক হাতের হাতকড়া খোলা হয়। তখন সুব্রত হাসতে থাকেন। পুলিশের উদ্দেশে তিনি বলেন, আরেক হাতের হাতকড়া খুলে দিতে বলেন। পুলিশ সদস্যরা এতে আপত্তি জানান। এ সময় এজলাশে বিচারক না থাকায় সুব্রত বাইন উচ্চস্বরে সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলতে থাকেন, ‘আপনারা ছবি-ভিডিও নেন। তবে সত্য কথা লিখবেন। আমি যা, তাই লিখবেন। অন্য কিছু লিখবেন না। হলুদ সাংবাদিকতা যেন না হয়। সাংবাদিকরা ১৯৮৯ সাল থেকে লিখতেছেন। কিন্তু জায়গামতো পৌঁছাতে পারেননি।’ তিনি আরও বলেন, ‘সাংবাদিকদের রসালো লিখতে লিখতে অভ্যাস হয়ে গেছে। অথচ কারও কাছে কোনো প্রমাণ নাই। বাঁচার জন্য কে কী না করে। কত মানুষ মরে পচে গেছে। ঘাসও পচে গেছে। বেঁচে আছি, আল্লাহ জীবন্ত রেখেছেন।’

এ সময় আদালতে সুব্রত বাইন তার আইনজীবীকে খোঁজেন। পরে আবার বলেন, ‘সাংবাদিকরা কিছু না জেনে লিখে দেন। আমারও তো পরিবার আছে। কী ইফেক্ট পড়ে। কিন্তু আমি কোনো প্রতিবাদ করিনি ১৯৮৭ সাল থেকে। আমার বয়স এখন ৬১ বছর। সাংবাদিকরা এত খবর রাখেন, আড়াই বছর আগে আমাকে আয়নাঘরে রাখা হয়, সেই খবর নাই। এখন আমাকে ছিনতাইকারী, চাঁদাবাজ বানানো হচ্ছে। প্রমাণ দিয়ে দেখান আমি চাঁদাবাজি, ছিনতাই করেছি কি না। যারা আমার নামে চাঁদাবাজি, ছিনতাই করছে, তাদের ধরেন। আমার টাকা থাকলে পত্রিকা অফিস, টিভি অফিস খুলে নিতাম। আমার কোনো পাওয়ার নাই, পাওয়ার দরকারও নাই। পাওয়ার আমার পিছে ঘোরে। সর্বশ্রেষ্ঠ পাওয়ারকে আমি সেজদাহ করি।’

আড়াই বছর আয়নাঘরে রাখা হয়েছে দাবি করে সুব্রত বাইন বলেন, ‘২০২২ সালে হ্যান্ডকাফ পরিয়ে আমাকে দেশে নিয়ে আসে। আমাকে আয়নাঘরে রাখা হয়, যা কবরের মতো। রড দিয়ে পিটিয়েছে। দেখেন আমার মাথায় কী করছে। ৫ আগস্ট রাত ৩টার দিকে আমাকে ছেড়ে দেয়। নতুন প্রজন্মের সাংবাদিকদের কাছে প্রত্যাশা, তারা সত্যটা তুলে ধরবেন।’

নিজে বাঁচার জন্য সঙ্গে অস্ত্র রাখেন জানিয়ে সুব্রত বাইন বলেন, ‘আমি বাঁচার জন্য অস্ত্র রাখি। অস্ত্র রাখি না, এমন মিথ্যা বলব না। আমার পেছনে অনেক শত্রু। কে মরতে চায়। ৮৪, ৮৫ থেকে আমার শত্রুতা। লিয়াকত, মুরগি মিলন, আমির হোসেন আমু আমার এন্টি ছিল। তাদের সঙ্গে যুদ্ধ করে এখানে আসছি।’

এরপর আসামিদের রিমান্ডের দাবি জানিয়ে শুনানিতে যুক্তি তুলে ধরেন পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ওমর ফারুক ফারুকী। এ সময় তাদের আইনজীবী মোহাম্মদ বাদল মিয়া তাদের রিমান্ড বাতিল ও জামিন চেয়ে আবেদন করেন। শুনানিতে তিনি বলেন, ‘সুব্রত বাইন মিডিয়ার সৃষ্টি। এই আসামিকে ভারতে তিনবার গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর ৬ তারিখে নরসিংদীর ভুলতা ইউনিয়নে ফেলে রেখে চলে যায়। ওই সময় তিনি এত পরিমাণ ভয় পেয়েছেন। সুব্রত বাইন টোটালি ইনোসেন্ট। প্রয়োজনে তাদের কেন্দ্রীয় কারাগারে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদ করা যেতে পারে।’

এ সময় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আদালতকে বলেন, ‘আসামিরা ধরা খাওয়ার ভয়ে মোবাইল ফোন ব্যবহার করত না। তারা স্যাটেলাইট ফোন ব্যবহার করত। সেটাই জব্দ করা হয়েছে।’ তখন কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় সুব্রত বাইন বলেন, ‘যেটা উদ্ধার হয়েছে আদালতে সেটা শো করেন। ওইটা চায়না ফোন। কোনো স্যাটেলাইট ফোন নয়। অস্ত্র উদ্ধারের কথা বলা হচ্ছে। অথচ এতগুলো মানুষের কাছ থেকে একটা মোবাইলও জব্দ হলো না।’ এর জবাবে আদালতের পুলিশ পরিদর্শক আসাদুজ্জামান বলেন, ‘তাদের কাছ থেকে স্যাটেলাইট ফোন উদ্ধার করা হয়েছে।’ তখন সুব্রত বাইন বলেন, ‘মোবাইলটা দেখান। চায়না ফোনকে স্যাটেলাইট ফোন বলছে। ওটা সিটিসেল মডেলের চায়না ফোন।’

শুনানি শেষে আদালত তাদের জামিন নামঞ্জুর করে রিমান্ডের আদেশ দেন। রিমান্ড আদেশের পরে আদালতকে সুব্রত বাইন বলেন, ‘আমার নামাজ যেন কাজা না হয়। নামাজের ব্যবস্থা যেন থাকে।’ আদালত পুলিশকে বিষয়টি দেখতে বলেন। পরে সোয়া ৪টায় পুলিশ প্রহরায় তাদের হাজতখানায় নেওয়া হয়।

মঙ্গলবার ভোরে সেনাবাহিনীর একটি বিশেষ অভিযানে কুষ্টিয়া জেলা থেকে তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইন ও তার ঘনিষ্ঠ সহযোগী মোল্লা মাসুদকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তাদের তথ্যের ভিত্তিতে রাজধানীর হাতিরঝিল এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় সুব্রত বাইনের দুই সহযোগী শুটার আরাফাত ও শরীফকে। গতকাল তাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে মামলা দায়ের করা হয়।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ব্যবসায়ীর বাড়ি থেকে ৬ শতাধিক বস্তা সরকা‌রি চাল জব্দ

স্বাস্থ্য পরামর্শ / ছানিজনিত অন্ধত্ব থেকে বাঁচতে চাই সচেতনতা

কৃষি উন্নয়নের নামে কৃষকের ৮ কিমি জায়গা বিলীন করল বিএডিসি

প্রবাসীদের রেমিট্যান্সেই বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়িয়েছে : প্রধান উপদেষ্টা

গতিরোধকে নেই কোনো চিহ্ন, প্রধান সড়কে উল্টে গেল ট্রাক

অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার জন্য যুবদল নেতা নয়নের দুঃখ প্রকাশ

ইডেন কলেজে ‘সাধারণ শিক্ষার্থী’ নাম ব্যবহার করে বিবৃতি নিয়ে বিভ্রান্তি 

সংখ্যালঘু নির্যাতনের বিচার ও ক্ষতিপূরণ দাবি হিন্দু নেতাদের

রাস্তায় ফেলে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নেত্রীকে মারধর  

এবার পাকিস্তানের বিপক্ষেও সিরিজ হারল বাংলাদেশ

১০

সেমিনারে ঢাবি অধ্যাপক  / পুলিশ রিমান্ডে জোরপূর্বক স্বীকারোক্তি আদায় বিচারিক প্রক্রিয়ায় পদ্ধতিগত সহিংসতা

১১

ইসরায়েলকে ঠেকাতে ছেলেকে পাঠিয়ে ইরানকে সতর্ক করল সৌদি বাদশা!

১২

হৃদরোগ সচেতনতা সুস্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত জরুরি : ডা. জুবাইদা রহমান

১৩

এসএ গেমসে ৬৫০ জনের বাংলাদেশ কন্টিনজেন্ট চূড়ান্ত

১৪

কাবাডির ফাইনালে সেনাবাহিনী ও পুলিশ

১৫

ভূপাতিত ৫ ভারতীয় যুদ্ধবিমান, স্বীকারোক্তি বিজেপি নেতার!

১৬

ছাত্রাবাসে ৫ ব্যবসায়ীকে জিম্মি করে মুক্তিপণ দাবি, ছাত্রলীগ নেতা আটক

১৭

পালিয়ে থেকেও শেষরক্ষা হলো না রাকিবের

১৮

সাকিব ইস্যুতে যা বললেন বিসিবির নতুন সভাপতি

১৯

সিরিজ বাঁচাতে রানের পাহাড় টপকাতে হবে বাংলাদেশকে

২০
X