শুক্রবার, ১০ অক্টোবর ২০২৫, ২৫ আশ্বিন ১৪৩২
কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৫ জুন ২০২৫, ১২:০০ এএম
আপডেট : ০৫ জুন ২০২৫, ০১:৫৬ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ঈদুল আজহা

কামারপাড়ায় কোরবানির ব্যস্ততা

কামারপাড়ায় কোরবানির ব্যস্ততা

ঈদুল আজহা মানেই শুধু পশু কোরবানি নয়—এটি আত্মত্যাগ, সামাজিক দায়িত্ববোধ ও শৃঙ্খলার এক প্রতীকী অনুশীলন। আর এই ধর্মীয় অনুষঙ্গের বাস্তবিক রূপ ফুটে ওঠে প্রস্তুতির প্রতিটি ধাপে—দা, বঁটি, ছুরি, চাপাতি, গুঁড়ি, পাটি—প্রতিটি যন্ত্রপাতিই হয়ে ওঠে একেকটি অপরিহার্য অনুষঙ্গ। প্রস্তুতির ঘনঘটা যেমন বাড়ে নগরজুড়ে, তেমনই জেগে ওঠে একসময়কার নিস্তেজ কামারপাড়াগুলোও। ঈদের কোরবানির কাজ যেন সঠিকভাবে সম্পন্ন হয়, তা নিশ্চিত করতেই এখন নগরের বাজারগুলোয় চলছে এক নিঃশব্দ প্রস্তুতির প্রতিযোগিতা।

ঈদ যতই ঘনিয়ে আসছে, রাজধানীর কেরানীগঞ্জ, যাত্রাবাড়ী, গাবতলী, মিরপুর, এবং কারওয়ান বাজারের কামারপাড়াগুলোয় ততই বাড়ছে দা, ছুরি, চাপাতি, গুঁড়ির চাহিদা। সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে—পশু জবাইয়ের সরঞ্জামের বিক্রি এরই মধ্যে তুঙ্গে। তবে চাহিদার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে দামের পারদও। লোহা, কয়লা ও শ্রমিক মজুরির দাম বেড়ে যাওয়ায় এ বছর এসব যন্ত্রপাতির দাম বেড়েছে ৫০ থেকে ১৫০ টাকা পর্যন্ত।

রাজধানীর কেরানীগঞ্জ বাজারের কামারপাড়ায় গিয়ে দেখা যায়, সকাল থেকে রাত অবধি হাতুড়ির টুংটাং শব্দে মুখর চারপাশ। কামাররা ব্যস্ত ছুরি-চাপাতি বানানো ও শান দেওয়ার কাজে।

এ পেশায় ১৫ বছর ধরে যুক্ত মো. আব্বাস আলী বলেন, ‘ঈদের সময় তো আমরা বিশ্রামই পাই না। আয়ও হয় ভালো। তবে এখন অনলাইনের কারণে আমাদের দোকানে বিক্রি কমে গেছে।’

একই কথা বলেন নূর ইসলাম নামে আরেক কামার, ‘অনেকেই এখন ঘরে বসে ফেসবুক, ই-কমার্সে অর্ডার করে ফেলেন। অনেকে আবার ঠকেও যান, পরে আমাদের কাছ থেকেই নিতে হয়।’

কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ী আমিনূর বলেন, ‘ঈদের সময় আমাদের বিক্রি ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা প্রতিদিন, আর চাঁদরাতে সেটা দাঁড়ায় ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকায়।’

সরঞ্জাম কিনতে আসা ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়—প্রতিবার সব কিছু নতুন করে কেনা লাগে না। কেউ আসেন ছুরি-চাকু শান করাতে, কেউ খাইট্টা বা চাপাতি কিনতে। পুরোনো যন্ত্রপাতি মরিচা ধরায় তা ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। তাই ঈদের এক সপ্তাহ আগেই ভিড় জমে কামারপাড়ায়।

ক্রেতা শফিকুল হক বলেন, ‘পুরোনো যন্ত্রপাতিগুলো মরিচা পড়ে গেছে। ধার করাতে এনেছি।’

আরেক ক্রেতা ফারহাজ উদ্দিন বলেন, ‘যন্ত্রপাতি ভালো না হলে কাজ হয় না। তাই এবার নতুন করে কিনছি।’

সরঞ্জামের দাম সম্পর্কে বাজার ঘুরে জানা গেছে—চাপাতি: বড় স্প্রিং চাপাতি কেজি প্রতি ৭০০ থেকে ৯০০ টাকা, ছোট চাপাতি ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা। বঁটি: বড় বঁটি ৮০০ থেকে ১২০০ টাকা, ছোট বঁটি ২৫০ থেকে ৬০০ টাকা। ছুরি: ছোট ছুরি ১০০ থেকে ১৫০ টাকা, বড় ছুরি ৬০০ থেকে ১৫০০ টাকা পর্যন্ত। ধার দেওয়ার পাথর: প্রতি পিস ২০০ থেকে ৩৫০ টাকা। ধার শান দেওয়ার খরচ: বঁটির জন্য ১২০ থেকে ২০০ টাকা, চাপাতির জন্য ১৫০ থেকে ২০০ টাকা।

ক্রেতারা অবশ্য এই শান দেওয়ার খরচ নিয়ে কিছুটা আপত্তি জানিয়েছেন। তাদের মতে, ‘মূল্যটা একটু কম হওয়া উচিত ছিল।’

যন্ত্রপাতি ব্যবহারের পর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা রক্ষা করাও ঈদের প্রস্তুতির গুরুত্বপূর্ণ অংশ। অনেক এলাকায় পরিচ্ছন্নতাকর্মীর অভাবে পশু জবাইয়ের পরের আবর্জনা পরিষ্কারে বিলম্ব হয়। যাত্রাবাড়ীর এক কাঠ ব্যবসায়ী বলেন, ‘গুঁড়ি বা খাইট্টা যেন পরে ফেলে না রাখা হয়—এটা আমরা বারবার বলছি। মানুষের সচেতন হওয়া দরকার।’

ঈদের প্রস্তুতি মানেই শুধু বাজারমুখী ব্যস্ততা নয়, বরং তা একটি ধর্মীয় এবং সামাজিক দায়িত্বও। ইসলামি বিধান অনুযায়ী কোরবানির পশুর কোনো অংশ কসাই বা সহকারীদের পারিশ্রমিক হিসেবে দেওয়া যাবে না। কোরবানির গোশত তিন ভাগ করে আত্মীয়স্বজন, দরিদ্র ও নিজের পরিবারের মধ্যে বণ্টন করাই সুন্নত। চামড়া বিক্রির অর্থ দান করা উচিত; নিজের কাজে ব্যবহার না করাই উত্তম।

ঈদুল আজহা কেবল আনন্দ নয়, বরং তা শৃঙ্খলা, ত্যাগ ও মানবিক চেতনার শিক্ষাও দেয়। আর সে শিক্ষার পরিপূর্ণতা আসে সুনির্দিষ্ট প্রস্তুতি ও পরিচ্ছন্নতার মধ্য দিয়ে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

নির্বাচন নিয়ে কোনো ষড়যন্ত্র সহ্য করা হবে না : লায়ন ফারুক

ট্রেনে কাটা পড়ে যুবকের পা বিচ্ছিন্ন

বৃহত্তর মিরপুরে সম্মিলিত খতমে নবুওয়ত ওলামা সম্মেলন অনুষ্ঠিত

দেশ বাঁচাতে হলে বিএনপির বিকল্প নেই : টুকু

গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা / বস্তিবাসী ও শহীদ পরিবারের ন্যায্য দাবি মেনে নিন

মা-মেয়েকে গলা কেটে হত্যা

রাজধানীতে ১৭ ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে জাগপা ছাত্রলীগের বৈঠক

হাত-মুখ বেঁধে শিশুকে ধর্ষণ, যুবককে খুঁজছে পুলিশ

এনসিটিবির নামে ‘নকল’ ছাপাখানা, আটক ৫ 

পচা চাল ক্রয়, বাচ্চু মিয়াকে বাধ্যতামূলক অবসর

১০

শহিদুল আলমসহ নৌবহর থেকে আটক ব্যক্তিদের কারাগারে বন্দি

১১

পা হারিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন আইসক্রিম বিক্রেতা রফিকুল

১২

গুণগত শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা তারেক রহমানের অঙ্গীকার : সাঈদ

১৩

চাকসু নির্বাচনের প্রচারে এগিয়ে ছাত্রদলের প্যানেল

১৪

জনপ্রশাসনের এপিডি এরফানুল হককে বদলি

১৫

কর্ণফুলীর তীরে নতুন আশা

১৬

চাকসু নির্বাচনে আরও তিন প্যানেলের ইশতেহার ঘোষণা

১৭

সিলেট বিমানবন্দরে বিদ্যুৎস্পর্শে যুবকের মৃত্যু, থানায় মামলা

১৮

বৃষ্টি আর কতদিন থাকবে, জানাল আবহাওয়া অফিস

১৯

আগে টাইফয়েড টিকা গ্রহণকারীরা কি আবার নিতে পারবে?

২০
X